Advertisement
০৫ মে ২০২৪

সবং মামলায় চার্জশিট, প্রশ্ন পুলিশি ভূমিকায়

৪১ দিনের মধ্যে আদালতে জমা পড়ল চার্জশিট। কিন্তু সবং কলেজে ছাত্র পরিষদ কর্মী খুনের মামলায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে বিঁধতে ছাড়ছেন না বিরোধীরা। তাঁদের অভিযোগ, ঘটনায় অভিযুক্ত তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি) কর্মীদের আড়াল করতে মামলা সাজাচ্ছে পুলিশ।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৪:০৭
Share: Save:

৪১ দিনের মধ্যে আদালতে জমা পড়ল চার্জশিট। কিন্তু সবং কলেজে ছাত্র পরিষদ কর্মী খুনের মামলায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে বিঁধতে ছাড়ছেন না বিরোধীরা। তাঁদের অভিযোগ, ঘটনায় অভিযুক্ত তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি) কর্মীদের আড়াল করতে মামলা সাজাচ্ছে পুলিশ। যে ‘দায়িত্ব’ ঘটনার পর থেকেই নিয়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ। এক ধাপ এগিয়ে কংগ্রেস দাবি তুলেছে, সিবিআই-তদন্তের। এই মর্মে তারা হাইকোর্টে যে আবেদন করেছে, তার শুনানি রয়েছে আজ, শুক্রবার।

গত ৭ অগস্ট সবং সজনীকান্ত কলেজ চত্বরে সিপি-কর্মী কৃষ্ণপ্রসাদ জানাকে (২১) পিটিয়ে খুনের অভিযোগ ওঠে। সেই মামলায় সাত জনকে গ্রেফতার হন। চার জন ছাত্র পরিষদের (সিপি), তিন জন টিএমসিপি-র। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মেদিনীপুর আদালতে জমা পড়া চার্জশিটে যে ২১ জনের নাম রয়েছে, তার মধ্যে ১৯ জনই সিপি-র। দু’জন টিএমসিপি-র। সিপি-র ১৮ জনের বিরুদ্ধে রয়েছে খুন-সহ একাধিক জামিন-অযোগ্য ধারা। টিএমসিপি-র ধৃতদের মধ্যে এক জনের নাম চার্জশিটে নেই। অন্য দু’জনের বিরুদ্ধে মারধর-সহ অন্য যে ধারাগুলি দেওয়া হয়েছে, তার সবই জামিন-যোগ্য।

ঘটনার প্রথম অভিযোগকারী ছিলেন কলেজের সিপি পরিচালিত ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক সৌমেন গঙ্গোপাধ্যায়। সৌমেনের নামই চার্জশিটে অভিযুক্ত তালিকায় দু’ম্বরে রয়েছে। প্রথম নামটি হল সিপি নেতা পল্টু ওঝার। ছাত্র সংসদের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক সিপি-র সৌগম সেনের নামও চার্জশিটে রয়েছে। ঘটনায় ধরা পড়া দুই টিএমসিপি কর্মী— শেখ মুন্না আলি এবং সানোয়ার আলির নাম রয়েছে তালিকার নীচের দিকে। আর এক ধৃত অসীম মাইতির নাম বাদ পড়েছে।

সবং-কাণ্ডে প্রকৃত দোষীদের শাস্তির দাবিতেই ময়দানে গাঁধীমূর্তির পাদদেশে অনশনে বসেছেন স্থানীয় কংগ্রেস সাংসদ মানস ভুইঁয়া। চার্জশিটের ‘বৈষম্য’ ধরিয়ে দিয়ে তাঁর অভিযোগ, ‘‘মিথ্যাচারে ভরা চার্জশিট। মুখ্যমন্ত্রীকে ‘মা’ বলেন পুলিশ সুপার। মায়ের দলকে বাঁচাতে এমন চার্জশিট উপহার দিলেন তিনি!’’ নিহত কৃষ্ণপ্রসাদের মেজদা চন্দন জানা বলেছেন, ‘‘অভিযুক্ত সকলের বিরুদ্ধে সমান ধারা দেওয়া উচিত ছিল। প্রকৃত দোষীকে শাস্তি দিতে হলে সিবিআই-তদন্ত ছাড়া গতি নেই।’’

বারবার চেষ্টা করা হলেও এসপি ভারতীদেবী এ দিন ফোন ধরেননি। জবাব দেননি এসএমএসের। তবে জেলা পুলিশের এক কর্তার দাবি, মামলার ৭৯ জন সাক্ষীর মধ্যে একাধিক জন জবানবন্দি দিয়েছেন আদালতে। জেরা থেকেও পুলিশ তথ্য পেয়েছে। কলেজ থেকে পাওয়া সিসিটিভি-ফুটেজও পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। হাতে থাকা তথ্যের-ভিত্তিতেই চার্জশিট দেওয়া হয়েছে।

তবে এই ব্যাখ্যায় ক্ষোভ মিটছে না বিরোধীদের। তাঁদের আর এক অভিযোগ, এ দিন চার্জশিট জমা দেওয়ার সময় নিয়ে। ধৃত সিপি- কর্মীদের আইনজীবী হরিসাধন ভট্টাচার্য বলেন, “এ দিন সন্ধ্যা ৭টায় চার্জশিট জমা দেওয়া হয়েছে।” কংগ্রেস এবং ছাত্র পরিষদের জেলা নেতাদের দাবি, কাল, শনিবার মেদিনীপুর আদালতে ধৃত তিন টিএমসিপি কর্মীর জামিনের আবেদনের শুনানি রয়েছে। তার আগে চার্জশিট দিয়ে পুলিশ ওই তিন জনের জামিনের পথ প্রশস্ত করল। সবংয়ের গোটা ঘটনা নিয়ে আজ, রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর দ্বারস্থ হওয়ার কথা কংগ্রেস বিধায়কদের। মানসবাবু জানিয়েছেন, সেখানে চার্জশিটের-প্রসঙ্গ অবশ্যই উঠবে।

মানসবাবুদের পাশে দাঁড়িয়েছে রাজ্যের অন্য দুই বিরোধী দলও। এসএফআইয়ের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক এবং সিপিএম সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘এই জমানায় পুলিশ দিয়ে অপরাধীদের আড়াল করা হচ্ছে। কৃষ্ণপ্রসাদ জানার হত্যাকারীদের আড়াল করতেও সেটাই করা হল।’’ বিজেপি-র বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্যও বলেন, ‘‘পুলিশ তৃণমূলের সেবাদলে পরিণত হয়েছে!’’

বিরোধীরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, কৃষ্ণপ্রসাদ খুনের পরেই সিপি-র অভিযোগের ভিত্তিতে টিএমসিপি-র তিন জনকে ধরেছিল পুলিশ। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলে দিয়েছিলেন, ‘নিজেদের মধ্যে মারামারি করে ছেলেটি মারা গিয়েছে’। তাঁর ইঙ্গিত ছিল সিপি-র গোষ্ঠী-কোন্দলের প্রতি। বিরোধীদের অভিযোগ, এর পরেই মুখ্যমন্ত্রীর ‘তত্ত্ব’কে মান্যতা দিতে উঠেপড়ে লাগেন পুলিশ সুপার। চার্জশিটেও তারই প্রতিফলন হয়েছে।

টিএমসিপি-র পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি রমাপ্রসাদ গিরি অবশ্য বলছেন, ‘‘জানতাম, পুলিশি-তদন্ত ঠিক পথেই এগোবে। প্রকৃত অপরাধীদের নাম সামনে আসবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE