Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

কার্বাইনে ঘুম উড়েছে পুলিশের

কোন পথে অস্ত্র ঢুকছে, পিছনে কোনও জঙ্গি সংগঠন রয়েছে কি না তার তদন্তে কোমর বেঁধে নেমেছে পুলিশ। দিন কয়েক আগেই দিনহাটার বর আটিয়াবাড়ি-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ প্রধানের স্বামী নরেশ দেবনাথ একটি কার্বাইন (স্টেনগান) হাতে ছবি পোষ্ট করেন ফেসবুকে। ওই ছবি পুলিশের নজরে পড়তেই হইচই পড়ে যায়।

বিতর্কে: এই ছবিই ছড়িয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। —নিজস্ব চিত্র।

বিতর্কে: এই ছবিই ছড়িয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। —নিজস্ব চিত্র।

নমিতেশ ঘোষ
কোচবিহার শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৫:০০
Share: Save:

সোনা, পোশাক থেকে শুরু করে ইলিশ। এ সবের কারবার যে রাত নামলেই চলে তা প্রায় কমবেশি সবারই জানা। কিন্তু, বাংলাদেশ থেকে অস্ত্র ঢুকছে এ পারে, তদন্তে নেমে এমনই সম্ভাবনা তীব্র হওয়ায় কার্যত ঘুম উবে গিয়েছে পুলিশের।

কারা এই কারবারের সঙ্গে জড়িত? কোন পথে অস্ত্র ঢুকছে, পিছনে কোনও জঙ্গি সংগঠন রয়েছে কি না তার তদন্তে কোমর বেঁধে নেমেছে পুলিশ। দিন কয়েক আগেই দিনহাটার বর আটিয়াবাড়ি-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ প্রধানের স্বামী নরেশ দেবনাথ একটি কার্বাইন (স্টেনগান) হাতে ছবি পোষ্ট করেন ফেসবুকে। ওই ছবি পুলিশের নজরে পড়তেই হইচই পড়ে যায়। নরেশবাবু পলাতক। উপপ্রধান মধুমিতাদেবী দাবি করেছেন, ওই অস্ত্র তাঁর স্বামীর নয়। কেউ তাঁর হাতে ধরিয়ে দিয়ে ছবি তুলেছেন।

পুলিশ সূত্রে খবর, ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, আরও একটি কার্বাইন দিনহাটার এক দুষ্কৃতীর হাতে রয়েছে। ওই দুষ্কৃতীও শাসক দলের আশ্রয়ে রয়েছে। শুধু তাই নয়, একে-৪৭ রাইফেলের মতো অস্ত্র দিনহাটায় ঢুকেছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। কোচবিহারের পুলিশ সুপার ভোলানাথ পাণ্ডে বলেন, “অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ দল তৈরি করে অভিযান চলছে। ইতিমধ্যেই আমাদের হাতে বেশ কিছু তথ্য এসেছে। সেই হিসেবেই অভিযান চলছে।” তদন্তকারী এক পুলিশ অফিসাররে কথায়, “ওই অভিযুক্ত পালিয়ে গেলেও কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আরও কিছু তথ্য আমরা পেয়েছি। অস্ত্র কোথায় তা খুঁজে বের করার চেষ্টা হচ্ছে। তা পেলেই আরও তথ্য উঠে আসবে।”

তদন্তকারী পুলিশ আশিকারিকরা জানান, কোচবিহার তথা দিনহাটা থেকে গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে-পরে থেকে ২৫টিরও বেশি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। এর মধ্যে দেশি পাইপগান রয়েছে হাতে গোনা কয়েকটি। তার বাইরে প্রায় সব ক’টি নাইনএমএম ও সেভেন্ট পয়েন্ট সিক্সএমএম পিস্তল। ওই পিস্তলগুলির সব ক’টি মুঙ্গেরে তৈরি করা। কিন্তু কার্বাইন বা স্টেনগানের মতো অস্ত্র মুঙ্গের থেকে কখনও এই অঞ্চলে ঢুকেছে সে প্রমাণ পুলিশের হাতে নেই। মুঙ্গেরে এই ধরনের অস্ত্র তৈরি হয় না বলে পুলিশ জানিয়েছে। সেক্ষেত্রে কোনও স্থানীয় অস্ত্র কারখানায় ওই অস্ত্র তৈরি করা হয় বলে পুলিশের ধারণা। একসময় কামতাপুর লিবারেনশ অর্গানাইজেশন (কেএলও) জঙ্গিদের হাতে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল ছিল। সেই রাইফেল বাইরের অসমের জঙ্গি সংগঠন হয়েই তাদের হাতে পৌঁছয়। কিন্তু, সাধারণ দুষ্কৃতীদের হাতে এই ধরণের ভারী অস্ত্র কোনও পথে এল তা নিয়েই চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে।

তদন্তে একের পর এক তথ্য হাতে আসার পরে পুলিশ সন্দেহ করছে, বাংলাদেশ থেকে চোরাপথ ধরে ওই অস্ত্র ভারতে ঢুকছে। বিরোধীদের অভিযোগ, সীমান্তে শাসক দলের একাধিক নেতার সঙ্গে চোরাকারবারীদের সঙ্গে সখ্যতা রয়েছে। এমনকী ওই কারবারিদের অনেকেই শাসক দলের দাপিয়ে বেড়ানো নেতার পিছনে ঘুরে বেড়ায়। তাদের হাত ধরেই অস্ত্র এ পারে ঢুকেছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। পুলিশ জানতে পেরেছে, বাংলাদেশে একাধিক অস্ত্র কারবারী চক্র সক্রিয় রয়েছে। সেক্ষেত্রে গীতালদহ, নাজিরহাট, সিতাইয়ের নদী পথ বা যে এলাকায় কাঁটাতার নেই সেই পথে অস্ত্র ঢুকে থাকতে পারে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। এমন অস্ত্র প্রকাশ্যে আসার পরে নজরদারি বাড়িয়ে দিয়েছে বিএসএফও। শাসক দলের পক্ষ থেকে অবশ্য স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, যারা অস্ত্র নিয়ে দুষ্কর্ম করছে তাদের সঙ্গে দলের কোনও যোগ নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Arms smuggling racket Bangladesh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE