Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
শূন্যের কম পেলেও ডাক কাউন্সেলিংয়ে

ইঞ্জিনিয়ারিং জয়েন্টের দরকার কী, উঠছে প্রশ্ন

বিভিন্ন রাজ্য এবং নানান বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের ভর্তি-পরীক্ষায় মেধা ক্রমশ গুরুত্বহীন হয়ে পড়ছে বলে অভিযোগ ওঠায় দেশ জুড়ে অভিন্ন মেডিক্যাল প্রবেশিকার ব্যবস্থা হয়েছে। এ বার জয়েন্ট এন্ট্রান্স সত্ত্বেও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বেনো জল ঢোকার পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় প্রমাদ গুনছে শিক্ষা শিবির। কী রকম বেনো জল?

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৬ ০৩:৩৯
Share: Save:

বিভিন্ন রাজ্য এবং নানান বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের ভর্তি-পরীক্ষায় মেধা ক্রমশ গুরুত্বহীন হয়ে পড়ছে বলে অভিযোগ ওঠায় দেশ জুড়ে অভিন্ন মেডিক্যাল প্রবেশিকার ব্যবস্থা হয়েছে। এ বার জয়েন্ট এন্ট্রান্স সত্ত্বেও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বেনো জল ঢোকার পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় প্রমাদ গুনছে শিক্ষা শিবির।

কী রকম বেনো জল?

গত বছর রাজ্যের ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলিতে অর্ধেকেরও বেশি আসন ভর্তি হয়নি। এ বারেও যাতে সেই অবস্থা না-হয়, তার জন্য রাজ্য জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ড মেধার সঙ্গে আপস করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠছে। বিষয়টি অভিযোগের স্তর ছাড়িয়ে বাস্তব হয়ে উঠছে জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডের একটি ঘোষণায়। তাদের অভয়, জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষায় শূন্য পাওয়া প্রার্থীও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তির জন্য কাউন্সেলিংয়ে বসার সুযোগ পাবেন। এমনকী শূন্যের কম অর্থাৎ ‘নেগেটিভ মার্কস’ পাওয়া পরীক্ষার্থীকেও এ বার কাউন্সেলিংয়ে ডাকা হবে।

অর্থাৎ যাঁরা প্রচুর নম্বর পেয়ে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছেন আর যাঁরা শূন্য বা তার কম পেয়ে ডাক পাচ্ছেন, তাঁরা একসঙ্গে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে পারবেন। এতেই বেনো জলের স্লুইস গেট অবাধ হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছে শিক্ষা শিবিরের একাংশ। তাদের বক্তব্য, এতে ইঞ্জিনিয়ারিং পঠনপাঠনের মান তলানিতে গিয়ে ঠেকবে। শিক্ষা শিবিরের ওই অংশের প্রশ্ন, সকলেই যদি কাউন্সেলিংয়ে সুযোগ পান, তা হলে জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষার ব্যবস্থা রেখে লাভটা কী?

যাঁরা এন্ট্রান্স পরীক্ষায় পাশ করতে পারেননি, তাঁরাও কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সুযোগ পেলে মেধার সঙ্গে সমঝোতা করা হবে বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদদের অনেকেই। শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকারের বক্তব্য, কলেজগুলির আসন পূরণের লক্ষ্য থাকলে জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ড অন্য কোনও পরিকল্পনা করতে পারত। কিন্তু যাঁরা পরীক্ষায় বসেছেন, তাঁদের সকলকে কাউন্সেলিংয়ের সুযোগ দেওয়ায় অর্থ, মেধাকে কম গুরুত্ব দেওয়া। ‘‘ফেল করা ছাত্রছাত্রীও যদি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সুযোগ পান, তা হলে এই পরীক্ষা ব্যবস্থাটাই তুলে দেওয়া হোক,’’ পরামর্শ পবিত্রবাবুর। বিভিন্ন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের দুরবস্থার জন্য রাজ্যে শিল্প-খরার পরিস্থিতিকেই দায়ী করছেন প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ অমল মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যে শিল্প না-এলে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলির হাল ফিরবে না। ওই সব কলেজের আসন খালি থাকা নিশ্চয়ই খারাপ। কিন্তু সেই সব আসন পূরণের জন্য বোর্ড যে-সিদ্ধান্ত নিল, সেটা আরও খারাপ। এটা শিক্ষা ক্ষেত্রে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি করবে।’’

রাজ্য প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসেব, রাজ্যে গত বছর পর্যন্ত ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ৩৮ হাজার আসন ছিল। তার মধ্যে জয়েন্টের মেধা-তালিকা থেকে ১৮ হাজার আসনও ভর্তি হয়নি। শেষ মুহূর্তে বিভিন্ন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজকে জয়েন্ট পরীক্ষার্থীদের মধ্য থেকে নিজেদের মতো করে ছাত্র ভর্তি নিতে বলা হয়েছিল। তাতেও শেষ রক্ষা করা যায়নি। মোট আসনের অর্ধেকই ফাঁকা পড়ে ছিল। তার জেরে অস্তিত্ব-সঙ্কট দেখা দেয় বিভিন্ন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের। অনেক কলেজ বিভিন্ন শাখার পঠনপাঠন বন্ধ করে দেয়। এ বার তাই আসন-সংখ্যা নামিয়ে আনা হয়েছে ৩৬ হাজারে।

জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডের খবর, ওই ৩৬ হাজার আসন যাতে ভর্তি করা যায়, সেই জন্যই ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তির দরজা সকলের জন্য খুলে দেওয়া হল। যাঁরা জয়েন্টের সমস্ত পরীক্ষা দিয়েছেন, তাঁদের সকলের নামই থাকবে মেধা-তালিকায়। অর্থাৎ যে-পরীক্ষার্থী শূন্যেরও কম নম্বর (নেগেটিভ মার্কস) পেয়েছেন, তিনিও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তির জন্য কাউন্সেলিংয়ে ডাক পাবেন।

প্রশ্ন উঠছে, এ ভাবে মেধার সঙ্গে সমঝোতা করে ইঞ্জিনিয়ারিং পঠনপাঠনের মান অবনমনের পথ খুলে দেওয়া হচ্ছে কেন?

এতে যে মেধার সঙ্গে আপস করা হচ্ছে, সেটাই মানতে রাজি নন জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডের সভাপতি সজল দাশগুপ্ত। তাঁর ব্যাখ্যা, জয়েন্ট এন্ট্রান্সের মেধা-তালিকায় যাঁদের নাম প্রথমে থাকবে, তাঁরা পছন্দের কলেজ ও বিভাগে ভর্তির জন্য বিকল্প বেশি পাবেন। যাঁদের নাম মেধা-তালিকার শেষের দিকে থাকবে, তাঁদের পছন্দের কলেজ ও বিভাগের বিকল্প কম হবে। ফলে সমান সুযোগ সকলেই পাচ্ছেন না। ‘‘তাই কোনও ভাবেই বলা যায় না যে, বোর্ড মেধার সঙ্গে সমঝোতা করছে,’’ বলছেন সজলবাবু।

সকলেই যদি কাউন্সেলিংয়ের সুযোগ পান, প্রবেশিকা পরীক্ষাটা আদৌ নেওয়ার যুক্তি কী?

‘‘পরীক্ষার্থী তো এক লক্ষ ২৮ হাজার। কিন্তু আসনের সংখ্যা ৩৬ হাজার। তাই কাউন্সেলিংয়ে ডাক পেলেও সকলেই যে সুযোগ পাবেন, তা নয়। যাঁরা যোগ্য নন, তাঁরা বাদ পড়ে যাবেন,’’ ব্যাখ্যা সজলবাবুর।

ভোটের জন্য এ বার জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষা পিছিয়ে গিয়েছিল। পরীক্ষা হয় ১৭ মে। তার ১৯ দিনের মাথায়, রবিবার ফল প্রকাশ করেও সমালোচনা এড়াতে পারছে না জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ড। সেই বিতর্কের মধ্যেই এ দিন বোর্ডের তরফে জানানো হয়, কাউন্সেলিংয়ের জন্য রেজিস্ট্রেশন শুরু হবে ১৫ জুন, কাউন্সেলিং শুরু ২৫ জুন। কাউন্সেলিং হবে তিন দফায়।

এ বার ইঞ্জিনিয়ারিং জয়েন্টে এক লক্ষ ২৮ হাজার পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাশ করেছেন এক লক্ষ দু’হাজার জন। প্রথম হয়েছেন রাজারহাটের দিল্লি পাবলিক স্কুলের ছাত্র যশোবর্ধন দিদওয়ানি। দ্বিতীয় কল্যাণী সেন্ট্রাল মডেল স্কুলের অভিষেক দত্ত। তৃতীয় স্থানে আছেন দুর্গাপুরের বিধানচন্দ্র ইনস্টিটিউশনের ছাত্র অর্পণ কোনার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Engineering Joint Exam
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE