Advertisement
১৯ মার্চ ২০২৪

পুলিশ কেন নিষ্ক্রিয়, প্রশ্ন বিসিকেভিতে

‘চলো পাল্টাই বিসিকেভি’ স্লোগান তুলে আন্দোলনে শামিল ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ, স্থানীয় এক টিএমসিপি নেতা ওই হামলায় মদত দিয়েছিলেন। তৃণমূলের এক প্রভাবশালী নেতাও ছিলেন তাঁর পিছনে। কিন্তু সব জেনেও পুলিশ কাউকে ধরছে না। অথচ এই পুলিশই ছাত্রনেতাদের বাড়িতে গিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়ে এসেছে, ছেলেমেয়েকে ফিরিয়ে না আনলে বিপদ ঘটতে পারে। এই ‘দ্বিচারিতা’ প্রশ্ন উঠছে ক্যাম্পাসে।

বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে

বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে

মনিরুল শেখ
হরিণঘাটা শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:০২
Share: Save:

বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগত দুষ্কৃতীদের তাণ্ডবের ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ। ‘চলো পাল্টাই বিসিকেভি’ স্লোগান তুলে আন্দোলনে শামিল ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ, স্থানীয় এক টিএমসিপি নেতা ওই হামলায় মদত দিয়েছিলেন। তৃণমূলের এক প্রভাবশালী নেতাও ছিলেন তাঁর পিছনে। কিন্তু সব জেনেও পুলিশ কাউকে ধরছে না। অথচ এই পুলিশই ছাত্রনেতাদের বাড়িতে গিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়ে এসেছে, ছেলেমেয়েকে ফিরিয়ে না আনলে বিপদ ঘটতে পারে। এই ‘দ্বিচারিতা’ প্রশ্ন উঠছে ক্যাম্পাসে।

গত বুধবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মোহনপুর ক্যাম্পাসে ঢুকে তাণ্ডব চালায় জনা পঞ্চাশেক দুষ্কৃতী। গেটের সামনে বোমা মারা হয়। ছাত্রীদের হস্টেলে ঢুকে মারধর ও ভাঙচুর করে তারা। ধর্নায় বসা ছাত্রদের মাটিতে ফেলে পেটানো হয়। শূন্যে কয়েক রাউন্ড গুলিও ছোড়া হয়েছে। ঘটনার পরেই আন্দোলনকারীরা অভিযোগ তোলেন, এই হামলায় সরাসরি যুক্ত ছিলেন হরিণঘাটা শহর টিএমসিপি সভাপতি রাকেশ পাড়ুই।

বৃহস্পতিবার উপাচার্য ধরণীধর পাত্রের সঙ্গে বৈঠকে শিক্ষকেরাও লিখিত দাবি জানান, রাকেশ পাড়ুইয়ের নামে থানায় নির্দিষ্ট করে অভিযোগ দায়ের করতে হবে। যদিও রবিবার রাত পর্যন্ত কারও নামে অভিযোগ দায়ের হয়নি। শুধু বলা হয়েছে, বাইরে থেকে কিছু লোক ক্যাম্পাসে ঢুকে গোলমাল পাকিয়েছে।

উপাচার্য আপাতত গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি। তিনি শনিবারের মধ্যে কলেজ খালি করার নির্দেশ দিয়ে গেলেও মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের রেজিস্ট্রার জয়ন্ত সাহা তা খারিজ করে দিয়েছেন। তবে তার আগেই বেশির ভাগ ছাত্রছাত্রী ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। মূলত আন্দোলনের প্রথম সারিতে থাকা ছাত্রছাত্রীরাই রবিবার হস্টেলে ছিলেন। তবে আজ, সোমবার থেকে অন্য ছাত্রছাত্রীরাও ফিরতে শুরু করবেন এবং স্বাভাবিক পঠনপাঠন শুরু করা যাবে বলেই ধারণা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। কিন্তু পুলিশ যদি হামলাকারীদের না ধরে, তবে ক্যাম্পাস ফের অশান্ত হয়ে ওঠার সম্ভাবনা থাকছেই। কেননা দুই ডিনকে সরানোর যে দাবি পড়ুয়ারা তুলেছিলেন, পার্থ তা মানেননি। তার উপরে যোগ হয়েছে নিরাপত্তার প্রশ্ন।

আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, ওই রাতে দু’দফায় হামলা হয়েছিল। প্রথম হামলার পরে হরিণঘাটা থানা থেকে পুলিশ আসে। তাদের সামনেই দ্বিতীয় বার হামলা হয়। এক ছাত্রের অভিযোগ, ‘‘আমরা দেখলাম, রাকেশ পাড়ুই হেলমেট পড়ে হামলা চালাল। পুলিশও দেখল, কারা মারল।’’ ছাত্রদের তরফে মৃত্যুঞ্জয় সাটিয়ার বলেন, ‘‘পেশাদার খুনিদেরও পুলিশ দ্রুত ধরতে পারে। আর সকলের চোখের সামনে যে হামলা হল, তাতে কাউকে গ্রেফতার করতে পারল না?’’

পুলিশের দাবি, এখনও এমন কোনও ছবি বা ভিডিয়ো তাদের হাতে আসেনি, যা থেকে হামলাকারীদের চিহ্নিত করা যায়। ফলে কারা ওই হামলায় জড়িত ছিল, তা বুঝে ওঠা যাচ্ছে না। ছাত্রছাত্রীদের প্রশ্ন: বড়-বড় অপরাধের ঘটনায় কি ফুটেজ দেখে পুলিশ অপরাধী ধরে? কে তাদের ফুটেজ জোগায়? দ্বিতীয়ত, হামলার সময়েই হস্টেল থেকে লুকিয়ে মোবাইলে ভিডিয়ো করে রেখেছিলেন এক ছাত্রী। সেটি ইতিমধ্যেই সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত। সেটি ছাড়াও হামলার আরও কিছু ছবি-ভিডিয়ো সোশ্যাল মি়ডিয়ায় ঘুরছে। পুলিশ সে সবের কিছুই দেখতে পাচ্ছে না?

ঘটনার পরে পুলিশ ক্যাম্পাসের সামনে মোতায়েন থেকেছে একাধিক দিন। কিন্তু তাঁদের কাছে কেউ কিছু জানতে চায়নি বলে আহত ছাত্রদের অভিযোগ। পুলিশ সূত্রে যদিও দাবি করা হয়, কয়েক জন ছাত্রছাত্রীর সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের একাংশের মতে, শাসক দলের একাধিক নেতার নাম জড়িয়ে যাওয়াতেই পুলিশ হাত গুটিয়ে বসে আছে।

রাকেশ পাড়ুই আগেই দাবি করেছিলেন, ক্যাম্পাসের কাছে বাড়ি হওয়ায় হামলার রাতে তিনি গেটের কাছে দাঁড়িয়েছিলেন। এ দিন বলেন, ‘‘আমি কিছুতেই জড়িত নই। পুলিশ তদন্ত করছে। আমি আর কী বলব!’’ জেলা তৃণমূল সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্তের দাবি, ‘‘পুলিশ যে দলের হয়ে কাজ করে না, এটা বারবার প্রমাণিত। এ ক্ষেত্রেও পুলিশ তার মতো করেই কাজ করছে।’’ নদিয়ার পুলিশ সুপার রূপেশ কুমারকে বারবার ফোন করা হলেও তিনি তা ধরেননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE