বিমান বসু
মৌলানা আজাদ কলেজে তিনি তখন ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক। ম্যারাথনে তৃতীয় হয়ে পুরস্কার জিতেছিলেন। খর্বাকৃতি চেহারায় কী ভাবে লম্বা লম্বা পায়ের প্রতিযোগীদের সঙ্গে পাল্লা টেনেছিলেন, হাসি মুখে মনে করতে পারেন এখনও!
সে ছিল খেলার দৌড়। তবে রাজনীতির দৌ়ড়েও বরাবর অক্লান্ত তিনি। রাজনৈতিক কর্মসূচিতে রাজ্যের যে কোনও প্রান্তে, যে কোনও জেলায় কত বার যে হেঁটে বেড়িয়েছেন, লেখাজোকা নেই কোনও! বছরতিনেক আগেও সিঙ্গুর থেকে শালবনি পর্যন্ত শিল্পের জন্য বামেদের পদযাত্রায় তিনিই ছিলেন হণ্টনে পয়লা নম্বর! অথচ এই হেমন্তে অন্য সকলে যখন পদযাত্রায়, বিমান বসুকে হাঁটতে দেখা যাচ্ছে না!
বাম জমানায় এক বার কোচবিহার থেকে কলকাতা পর্যন্ত টানা পদযাত্রায় এমন হেঁটেছিলেন, পা পচে গিয়েছিল। গত বিধানসভা ভোটে বিপর্যয়ের পরে বাম শিবির যখন হতোদ্যম, অনুব্রত মণ্ডলের বীরভূমে বোমাবাজির মধ্যেও মিছিল করে এসেছিলেন তিনি। তারও আগে দমদমের চি়ড়িয়া মোড়ে মিছিল করতে গিয়ে তৃণমূলের ইটের মুখে পড়তে হয়েছিল। হাঁটতে যিনি এমনই ভালবাসেন, সেই বিমানবাবুর হল কী? সিঙ্গুর থেকে রাজভবন পর্যন্ত সাড়া জাগানো পদযাত্রার পরে বাম মহলে অন্যতম চর্চার বিষয় এটাই।
আরও পড়ুন: দলই সংসার, পাঞ্চালী আছেন সাধারণ পথেই
জেলায় জেলায় গত সেপ্টেম্বরে ২৬ দিন ধরে পদযাত্রা করেছিল ১১৭টি গণসংগঠনের যৌথ মঞ্চ বিপিএমও। কোথাও পা মেলাননি বিমানবাবু। তবে পদযাত্রা শেষে শহিদ মিনার ময়দানের সমাবেশে শ্রোতা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সে বার তাঁর যুক্তি ছিল, বিপিএমও যাতে ‘সিপিএমও’ না হয়ে যায়, খেয়াল রাখতে হবে! এ বার সিঙ্গুর থেকে কলকাতা পর্যন্ত দু’দিনের পদযাত্রাতেও যাননি তিনি। তাঁর যুক্তি, ‘‘গণসংগঠনগুলোকে নিজেদের মতো করে নিজস্ব কর্মসূচি করতে দিতে হবে। সেটাই তো লক্ষ্য।’’ সিঙ্গুর থেকে রাজভবন পদযাত্রার উদ্যোক্তা ছিল সিপিএমের কৃষক সভা ও ক্ষেতমজুর ইউনিয়ন। সিপিএমের প্রথম সারির সব নেতাই যেমন কোনও না কোনও ফ্রন্টের সঙ্গে যুক্ত, বিমানবাবুও সে ভাবে আগে ছিলেন কৃষক সভায়। কিন্তু এখন আর কোনও গণসংগঠনে তিনি নেই। সিঙ্গুর থেকে কলকাতার পথে দু’দিন অল্প কিছু রাস্তা হেঁটেছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। পদযাত্রা শেষে সমাবেশে তিনিই ছিলেন প্রধান বক্তা। সূর্যবাবু কৃষক সভারও সর্বভারতীয় পদে আছেন। সেই যুক্তিতেই তাঁকে এগিয়ে দিয়ে বিমানবাবু রয়ে গিয়েছেন অন্তরালে। ক্ষেতমজুর সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক অমিয় পাত্রের কথায়, ‘‘আমরা বিমানদা’কে বলেছিলাম। উনি বলেছিলেন, পদযাত্রায় না থাকলেও মেদিনীপুর যাওয়ার পথে শেষের সমাবেশটা একটু দেখে যাবেন। কিন্তু আসতে পারেননি।’’
আরও পড়ুন: মমতা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্য, দাবি যশবন্তের
বাবরি ধ্বংসের বর্ষপূর্তিতে কলকাতায় মহামিছিলে থেকেছেন তিনি। তারাপীঠ থেকে রামপুরহাট পর্যন্ত বামফ্রন্টের মিছিলেও থাকার কথা। কিন্তু আবার লম্বা পদযাত্রা হলে বিমানবাবুকে দেখা যাবে কি না, উত্তর নেই কারও কাছে। গণসংগঠনের স্বাধীনতার যুক্তি দলের অন্দরে তিনি সামনে রাখছেন ঠিকই। তবে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন, জীবনের ম্যারাথনে বয়স কি এ বার তাঁকে ধরে ফেলছে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy