প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র
নরেন্দ্র মোদী সরকারকে ফাঁপরে ফেলে দিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার।
বাকি রাজ্যগুলির মতো পশ্চিমবঙ্গও যাতে ‘এক দেশ, এক রেশন কার্ড’ চালু করে, তার জন্য এত দিন কেন্দ্রই রাজ্যের উপরে চাপ তৈরি করছিল। এ বার রাজ্য দাবি তুলেছে, কেন্দ্রের খাদ্য সুরক্ষা আইনের আওতার বাইরে রাজ্য সরকার যে অতিরিক্ত ৩ কোটির বেশি মানুষকে সস্তায় চাল-গম দিয়ে থাকে, তাঁদেরও এই প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসা হোক। তা হলে তাঁদের মধ্যে কেউ বাংলা ছেড়ে অন্য রাজ্যে কাজ করতে গেলে সেখানেও সস্তায় চাল-গম পাবেন।
পশ্চিমবঙ্গের এই দাবিতে ফাঁপরে পড়ে গিয়েছে কেন্দ্রীয় খাদ্য ও গণবণ্টন মন্ত্রক। কারণ, এই দাবি একেবারেই অন্যায্য নয়। তাই তা পত্রপাঠ উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। আবার সব রাজ্যের মধ্যে একমাত্র পশ্চিমবঙ্গই এই দাবি তুলেছে।
পরিযায়ী শ্রমিকদের হয়রানি রোখার যুক্তি দিয়ে কেন্দ্রীয় খাদ্য ও গণবণ্টনমন্ত্রী রামবিলাস পাসোয়ান দ্রুত সব রাজ্যকে ‘এক দেশ, এক রেশন কার্ড’ চালু করতে বলছেন। এই কার্ড চালু হলে মেদিনীপুরের কোনও শ্রমিক মুম্বইয়ে কাজ করতে গেলে সেখানেই তাঁর রেশন তুলে নিতে পারবেন। কেন্দ্রের খাদ্য সুরক্ষা আইনে এখন দেশের প্রায় ৮০ কোটি মানুষকে ২ টাকা কেজি দরে চাল-গম দেওয়া হয়। এর মধ্যে অন্ত্যোদয় অন্ন যোজনা-র অধীন পরিবার মাসে ৩৫ কেজি চাল-গম পায়। অগ্রাধিকারের তালিকায় থাকা পরিবারগুলি মাসে মাথা-পিছু ৫ কেজি চাল-গম পান। পশ্চিমবঙ্গে কেন্দ্রের খাদ্য সুরক্ষা আইনের সুবিধা পান প্রায় ৬ কোটি ১ লক্ষ মানুষ। কেন্দ্রীয় সরকার এঁদের জন্যই রেশন কার্ডের সঙ্গে আধার জুড়ে দিয়ে ‘এক দেশ, এক রেশন কার্ড’ ব্যবস্থা চালু করতে বলছে রাজ্যকে।
পশ্চিমবঙ্গে কোন প্রকল্পে কত জন
কেন্দ্রের খাদ্য সুরক্ষা আইন
• মোট সুবিধাভোগী: ৬,০১,৮৫,৩২৮
• অন্ত্যোদয় অন্ন যোজনা: ৫৪,৭৩,৩৪৬ (পরিবার-পিছু ২ টাকা কেজি দরে ৩৫ কেজি চাল-গম, আধ কেজি চিনি)
• অগ্রাধিকারে থাকা পরিবার: ২,৭৫,৩৯,৩৬২ (২ টাকা কেজি করে দরে মাথাপিছু ৫ কেজি চাল-গম)
• অগ্রাধিকারে থাকা পরিবার (চিনি-সহ): ২,৭১,৭২,৬২০ (২ টাকা কেজি করে ৫ কেজি চাল-গম, আধ কেজি চিনি)
রাজ্যের প্রকল্প
• মোট সুবিধাভোগী: ৩,৩২,৮৫,৩৭৫
• রাজ্য খাদ্য সুরক্ষা যোজনা-১: ১,৯২,১১,৮২৭ (২ টাকা কেজি করে ৫ কেজি চাল-গম)
• রাজ্য খাদ্য সুরক্ষা যোজনা-২: ১,৪০,৭৩,৫৪৮ (১৩ টাকা দরে ১ কেজি চাল, ৯ টাকা দরে ১ কেজি গম)
কিন্তু গোল বেধেছে অন্যত্র। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার কেন্দ্রীয় প্রকল্পের বাইরেও আরও প্রায় ৩ কোটি ৩২ লক্ষ মানুষকে সস্তায় রেশন দেয়। এঁদের মধ্যে রাজ্য খাদ্য সুরক্ষা যোজনা-১-এ প্রায় ১ কোটি ৯২ লক্ষ মানুষ ২ টাকা কেজি দরে ৫ কেজি চাল-গম পান। আরও প্রায় ১ কোটি ৪০ লক্ষ মানুষকে ১৩ টাকা কেজি দরে ১ কেজি চাল ও ৯ টাকা কেজি দরে ১ কেজি গম দেওয়া হয়। রাজ্যের দাবি, এই ৩ কোটি ৩২ লক্ষ মানুষকে রাজ্য যে কার্ড দিয়েছে, তা নিয়ে তাঁরা অন্য রাজ্যে গেলে সেখানেও যাতে রেশন পান, তার ব্যবস্থা করতে হবে।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় খাদ্যমন্ত্রীর সঙ্গে রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী ও সচিবদের বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গের খাদ্যসচিব পারভেজ আহমেদ সিদ্দিকি দাবি তোলেন, এই ৩ কোটি ৩২ লক্ষ মানুষকেও ‘এক দেশ, এক রেশন কার্ড’-এর আওতায় নিয়ে আসা হোক। না-হলে তাঁরা অন্য রাজ্যে গেলে বঞ্চিত হবেন। অন্য অনেক রাজ্যও খাদ্য সুরক্ষা আইনের অতিরিক্ত বহু মানুষকে সস্তায় রেশন দেয়। বাংলার দাবি শুনে কেন্দ্রীয় খাদ্যসচিব তাঁকে লিখিত ভাবে রাজ্যের প্রস্তাব জানাতে বলেন।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গত সপ্তাহেই রাজ্যগুলিকে দ্রুত কেন্দ্রের এই প্রকল্পে যোগ দিতে অনুরোধ জানিয়েছিলেন। অতীতে এ নিয়ে রাজ্য সরকার সরাসরি তাদের আপত্তির কথা জানিয়েছিল। তবে এ বার মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি তা খারিজ করে দেননি। কেন্দ্রীয় খাদ্য মন্ত্রকের কর্তাদের দাবি, পশ্চিমবঙ্গ ইঙ্গিত দিয়েছে, ডিসেম্বরের মধ্যেই রেশন কার্ড-আধার সংযুক্তিকরণের কাজ শেষ হয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে ১ জানুয়ারি থেকেই ‘এক দেশ, এক রেশন কার্ড’ প্রকল্পে যোগ দিতে পারবে বাংলা। তবে তার আগে রাজ্যের নতুন দাবি নিয়ে সমাধান বার করতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy