সাবিত্রী মিত্র
প্রবল বিতর্কের মুখে পড়ে শেষ পর্যন্ত তাঁর মহার্ঘ চশমার দাম নিজেই মিটিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র! রাজ্যের উদ্বাস্তু পুনর্বাসন দফতরের মন্ত্রী সাবিত্রী তাঁর চশমার দাম বাবদ লক্ষাধিক টাকার বিল জমা দিয়েছিলেন সরকারের কাছে। তাঁর বিল স্বরাষ্ট্র দফতরের অনুমোদনও পেয়েছিল। সরকারি সূত্রের খবর, স্বরাষ্ট্র দফতরের মন্ত্রী স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুমোদন সাপেক্ষেই সবুজ সঙ্কেত পেয়েছিল সাবিত্রীর চশমার বিল। কিন্তু মা-মাটি-মানুষের কথা বলে ক্ষমতায় আসা একটি সরকারের মন্ত্রী লক্ষ টাকার চশমা করিয়েছেন, এই খবর প্রকাশ্যে এসে বিতর্ক শুরু হতেই সাবিত্রীর মাথার উপর থেকে হাত তুলে নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী! তাঁর তিরস্কার শোনার পরেই তড়িঘড়ি বিলের টাকা ফেরত দিয়ে দিয়েছেন মন্ত্রী।
সাবিত্রীর চশমা-কাণ্ড নিয়ে বৃহস্পতিবার হইচই বেধেছিল বিধানসভায়। অধিবেশনের উল্লেখ-পর্বের শুরুতেই এ দিন মন্ত্রীর দামি চশমার বিষয়টি তোলেন প্রাক্তন মন্ত্রী, সিপিএমের আনিসুর রহমান। তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী এই বিধানসভাতেই বলেছিলেন, কোনও বিধায়কই পাঁচ হাজার টাকার বেশি চশমায় খরচ করবেন না। সেখানে এমন ঘটনা কী করে ঘটল!’’ এই নিয়ে স্পিকারের ব্যাখ্যা দাবি করেন আনিসুর। উত্তরে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘চশমার জন্য বিধায়কেরা পাঁচ হাজার টাকার বেশি পান না। এর বেশি কিছু বলতে পারব না।’’ বাম বিধায়ক শাজাহান চৌধুরীও এ দিন উল্লেখ-পর্বে বিষয়টি সভায় তোলেন। সরব হয়েছিলেন কংগ্রেসের কয়েক জন বিধায়কও।
সভার দ্বিতীয়ার্ধে সাবিত্রী কক্ষে ঢোকার পরেই বিধায়কদের মধ্যে তাঁর ‘একলাখি’ চশমা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়। কয়েক জন বিধায়কের সঙ্গে তাঁকে চশমা নিয়ে কথা বলতেও দেখা যায়। এক সময় সাবিত্রী নিজের চশমাটা খুলে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে দেখান। বিষয়টি নিয়ে প্রবল অস্বস্তি তৈরি হয়েছে বুঝে পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছেও গিয়েছিলেন সাবিত্রী। কিন্তু বিল সংক্রান্ত কোনও ব্যাখ্যা পার্থবাবু শুনতে রাজি হননি। শাসক দল সূত্রের খবর, পার্থবাবুর মনোভাব বুঝেই সাবিত্রী ফোনে সরাসরি কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে। তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, তাঁর নিজেরই কি ওই বিলের অঙ্ক নিয়ে অস্বস্তি হচ্ছে না? এই নিয়ে আবার জানতে চাওয়ার কী আছে? তার পরেই বিলের টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন সাবিত্রী। পরে পার্থবাবুও বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বিষয়টিতে ক্ষুব্ধ। অবিলম্বে সাবিত্রীকে টাকা ফেরত দিতে বলা হয়েছে।’’
বিতর্ক তৈরি হওয়ার পরে সাবিত্রী অবশ্য জানিয়েছেন, পারিবারিক ভাবে তিনি নিজেই ওই চশমার বিল বহনে সক্ষম। বিধানসভার অলিন্দে তাঁর দাবি, চেক মারফত রিজার্ভ ব্যাঙ্কে সরকারি ট্রেজারিতে এ দিনই ৯৯ হাজার ৮৮০ টাকা জমা দিয়ে দিয়েছেন। চোখে পরে-থাকা চশমাটি দেখিয়ে সাবিত্রী এ দিন বলেন, ‘‘পার্ক স্ট্রিটের একটি দোকান থেকে এই চশমাটা আর একটা তৈরি করিয়েছিলাম। ৩৫ হাজার টাকা করে দাম নিয়েছিল। আর একটা চশমা সারাই করতে দিয়েছিলাম। তিনটে চশমার দাম আর রোজ যে প্রচুর ওযুধ খাই, তারই বিল বাবদ ওই টাকা পেয়েছিলাম।’’ ২০১৩ সালে জমা দেওয়া ওই বিলের টাকা মাস পাঁচেক আগে তিনি পেয়েছিলেন বলে দাবি করে উদ্বাস্তু পুনর্বাসন মন্ত্রী জানান, আগামী দিনে চশমা-বাবদ আর কোনও বিল তিনি রাজ্য সরকারকে জমা দেবেন না।
মন্ত্রীর নিজের দেওয়া হিসেব ব্যাখ্যা করলে দাঁড়াচ্ছে, দু’টি নতুনচশমার দাম ৭০ হাজার এবং একটি চশমা সারাতে প্রায় ৩০ হাজার টাকা লেগেছিল। যা শুনে এ দিন শাসক শিবিরের বিধায়কদের মধ্যেই চর্চা শোনা গিয়েছে, চশমা সারাতে ৩০ হাজার! এ তো সত্যিই চোখ কপালে তুলে দেওয়ার মতো! আর বিরোধীদের প্রশ্ন, মন্ত্রী হিসাবে সাবিত্রীর চশমার বিল ঘুরে এসেছিল মমতার স্বরাষ্ট্র দফতর থেকে। এখন কি বিতর্ক দেখেই নৈতিক অবস্থান নিতে চাইলেন মুখ্যমন্ত্রী?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy