Advertisement
১১ মে ২০২৪

মৃত্যুর সার্টিফিকেট লেখায় বহু গলদ

পুরসভার স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, শহরের বিভিন্ন শ্মশান, কবরস্থানে জমা দেওয়া ডেথ সার্টিফিকেট ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রেই সরকারের নির্দিষ্ট নির্দেশিকা মেনে তা লেখা হচ্ছে না।

অনুপ চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:২১
Share: Save:

সরকারি নির্দেশিকার রীতিনীতি না মেনেই বহু ডেথ সার্টিফিকেট লেখা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছে কলকাতা পুরসভা। তাদের অভিযোগ, সার্টিফিকেটে মৃত্যুর কারণ লেখার ক্ষেত্রে বড় ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। ফলে বহু ক্ষেত্রেই রোগের প্রকৃত কারণ নথিভুক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। এই প্রবণতা বেসরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি সরকারি হাসপাতালেও দেখা যাচ্ছে বলে পুরসভার অভিযোগ।

পুরসভার স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, শহরের বিভিন্ন শ্মশান, কবরস্থানে জমা দেওয়া ডেথ সার্টিফিকেট ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রেই সরকারের নির্দিষ্ট নির্দেশিকা মেনে তা লেখা হচ্ছে না। অথচ ডাক্তারি কোর্সের মধ্যেই রয়েছে, ডেথ সার্টিফিকেট কী ভাবে লিখতে হয় তার খুঁটিনাটি। এ ধরনের সার্টিফিকেটে অন্ত্যেষ্টি হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু রোগের প্রকৃত কারণ নথিভুক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে কোন রোগে কত জন মারা যাচ্ছেন, সেই গুরুত্বপূর্ণ পরিসংখ্যান ঠিক মতো মিলছে না। মার যাচ্ছে রোগ দমনে সরকারি প্রকল্পের বরাদ্দও।

সম্প্রতি এ সব নিয়েই রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিবকে চিঠি দিয়েছে পুরসভার স্বাস্থ্য দফতর। তাতে বলা হয়েছে, রাজ্যের সব হাসপাতাল, নার্সিংহোম থেকে প্রাইভেট চিকিৎসক— সকলকেই নিয়ম মেনে ডেথ সার্টিফিকেট লিখতে নির্দেশ দিক সরকার। তা না হলে বহু ক্ষেত্রে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ অধরাই থেকে যাবে।

যদিও গত সেপ্টেম্বরে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরে পাঠানো ওই চিঠির জবাব এখনও আসেনি বলেই পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের একাধিক কর্তাকে ফোন করা হলেও তাঁরা এর জবাব এড়িয়ে গিয়েছেন।

পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের উপদেষ্টা তপন মুখোপাধ্যায় জানান, ৪ বছরের এমবিবিএস কোর্সে ফরেনসিক অ্যান্ড স্টেট মেডিসিন বলে একটা বিষয় রয়েছে। স্টেট মেডিসিনের মধ্যেই বলা রয়েছে, কী ভাবে বার্থ (জন্ম) এবং ডেথ (মৃত্যু) সার্টিফিকেট লিখতে হয়। কেউ মারা যাওয়ার পর মৃত্যুর কারণ উল্লেখ করে যে সার্টিফিকেট দেওয়া হয়, চিকিৎসা পরিভাষায় তাকে বলে মেডিকেল সার্টিফিকেট অব কজ অব ডেথ সংক্ষেপে এমসিসিডি। কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্র দফতরের অধীনে অফিস অফ দি রেজিস্ট্রার জেনারেল, ইন্ডিয়া-র নির্দেশে ছাপানো ৪এ ফর্মে তার বয়ান নির্দিষ্ট করা রয়েছে। তাতে মৃতের নাম, ঠিকানা, বয়স, কোথায় চিকিৎসা হয়েছে, কখন মারা গিয়েছেন, এ সবের পাশাপাশি কজ অফ ডেথ এর জায়গায় ‘ইমিডিয়েট কজ’, ‘অ্যান্টিসিডেন্ট কজ’-এর মতো খুঁটিনাটি তথ্য আলাদা আলাদা ভাবে লিখে জমা দিতে হয়।

এ সবের এত প্রয়োজন কেন?

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের এক চিকিৎসক জানান, কে মারা যাচ্ছেন, সেটার থেকেও বড় কথা হল কোন রোগে তিনি মারা যাচ্ছেন। যদি নথি থেকে দেখা যায়, কোনও একটা নির্দিষ্ট অসুখ, যেমন ডায়াবেটিস, ক্যানসার বা ডেঙ্গিতে মৃত্যুর হার বেশি, তা হলে রাজ্য বা কেন্দ্র সরকার সেই রোগ দমনে বাড়তি গুরুত্ব দেয়। বাড়ে বরাদ্দের হারও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE