এ ভাবেই হাত, পা বেঁধে রাখা হয় বাবাকে। নিজস্ব চিত্র
কয়েক দিন বাড়ির বাইরে বৃদ্ধকে দেখেননি পড়শিরা। সন্দেহের বশে তাঁরাই পুলিশ ডেকে গাড়ির যন্ত্রাংশের ব্যবসায়ী ৮৫ বছরের বৃদ্ধ অমরনাথ নারংকে ঘরে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করলেন। বৃহস্পতিবার পশ্চিম বর্ধমানের পানাগড়ের প্রয়াগপুরের এই ঘটনায় জড়িত অভিযোগে অমরনাথবাবুর বড় ছেলে অশোক ও ছোট ছেলে রবীন্দ্রকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অমরনাথবাবুর আক্ষেপ, ‘‘সম্পত্তি হাতাতে ওরা অত্যাচার করছিল।’’
অমরনাথবাবুকে প্রতিদিন রাস্তায় পায়চারি করতে বা হোটেলে খাবার খেতে যেতে দেখা যেত। কিন্তু গত শুক্রবার থেকে তাঁকে দেখেননি পড়শিরা। পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে এ দিন কয়েকজন পড়শি অমরনাথবাবুর বাড়িতে ডাকাডাকি করেন। কিছুক্ষণ পরে দরজা খোলে রবীন্দ্র। পুলিশ জানিয়েছে, সে সময় দোতলার একটি ঘর থেকে খুব জোরে টেলিভিশনের শব্দ পাওয়া যাচ্ছিল। সেই ঘরেই দু’টি খাটের মাঝখানে পড়েছিলেন বৃদ্ধ। মুখে শাড়ির অংশ গোঁজা। পিছমোড়া করে দু’হাত বাঁধা। বাঁধা দুই পা-ও। গোঙাচ্ছেন।
পুলিশ বৃদ্ধকে উদ্ধার করে পানাগড় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যায়। সেখান থেকে থানায় গিয়ে দুই ছেলের বিরুদ্ধে তাঁকে ওই অবস্থায় ফেলে রাখা ও চার বছর ধরে সম্পত্তির লোভে অত্যাচার চালানোর অভিযোগ করেন অমরনাথবাবু। তাঁর অভিযোগ, ‘‘ছেলেদের ব্যবসা করে দিয়েছি। সম্পত্তি প্রায় সবটাই দিয়েছি। যেটুকু সম্পত্তি আছে আমার, তা হাতাতেই ওরা অত্যাচার করছিল। গত শুক্রবার থেকে অত্যাচারের মাত্রা বাড়ে।’’
বৃদ্ধের অভিযোগ, ওই দিন তাঁকে ঘরে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে ছিটকিনি আটকে দেওয়া হয়। খাবার বলতে মিলেছিল রুটি আর জল। শৌচকর্মের জন্য ছেলেদের ‘তত্ত্বাবধানে’ দিনে কয়েকবার ঘরের বাইরে যাওয়ার ‘ছাড়’ মিলত। এ দিন শৌচাগারে যাওয়ার পরে ‘‘বাড়ির বাইরে যাব বলতেই ছেলেরা বেঁধে ফেলে রাখে,’’ বলতে বলতে গলা ধরে আসে বৃদ্ধের। জানান, তাঁর উপরে ‘অত্যাচারের’ প্রতিবাদ করেও ফল না হওয়ায় দীর্ঘদিন আগে বাপের বাড়িতে চলে গিয়েছেন দুই পুত্রবধূ। প্রাপ্তবয়স্ক দুই নাতি একই বাড়িতে থাকেন। তবে তাঁরা বাবা-কাকার বিরুদ্ধে যেতে পারেননি। আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি (পূর্ব) অভিষেক মোদী বলেন, ‘‘অমরনাথবাবুকে খুনের চেষ্টা-সহ বেশ কিছু ধারায় তাঁর দুই ছেলেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’’
থানায় পুলিশ বৃদ্ধকে ভাত, ডাল, মাছের ঝোল খেতে দেয়। কিন্তু তা দেখে অমরনাথবাবুর জিজ্ঞাসা, ‘‘ছেলেরা কি খেয়েছে? ওরা না খেলে খাব কী করে?’’
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy