প্রতীকী ছবি।
কয়েকটি জেলায় চেয়ারম্যানদের বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ উঠছে। সর্বোপরি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের কার্যকলাপ পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ করছেন স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা। ফলে সংসদের বিষয়টি অনেক ক্ষেত্রেই বিকাশ ভবনের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। এই অবস্থায় সব জেলায় সংসদ ভেঙে ফেলার ভাবনাচিন্তা চলছে বলে জানাচ্ছেন বিভিন্ন সংসদ-কর্তা ও শিক্ষক।
চেয়ারম্যানেরা সরকার মনোনীত। তা সত্ত্বেও প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ ভেঙে দেওয়ার উদ্যোগ কেন, সেই প্রশ্ন উঠছে। তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে শিক্ষা শিবিরে। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, আগে সব সংসদের কাজকর্মের মূল্যায়ন হবে। ভাঙা হবে কি না, সেটা পরের প্রশ্ন।
শিক্ষা সূত্রের খবর, গত সোমবার তৃণমূল ভবনে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে দলীয় প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের বৈঠকে বিভিন্ন জেলা সংসদের চেয়ারম্যানদের বিরুদ্ধে হরেক অভিযোগ তোলেন শিক্ষকেরা। ওই বৈঠকে উপস্থিত এক শিক্ষক পরে বলেন, ‘‘চেয়ারম্যানদের নামে নানা অভিযোগ শুনে মন্ত্রী সাফ জানিয়ে দেন, সংসদই আর থাকছে না।’’ ওই বৈঠকের আহ্বায়ক অশোক রুদ্রকে প্রশ্ন করা হলে এ বিষয়ে তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি। পার্থবাবু অবশ্য বলেন, ‘‘শিক্ষকেরা কী বলছেন, জানি না। আইন মেনে যে-সব সংসদ তৈরি হয়েছে, চাইলেই সেগুলো ভেঙে দেওয়া যায় না। সংসদের কাজকর্মের মূল্যায়ন হচ্ছে। রিপোর্ট পেয়ে দেখব, কী করা যায়।’’
আরও পড়ুন: স্কুলে যৌন নিগ্রহ রোধে বিধি চাইছে হাইকোর্ট
মন্ত্রী এ কথা বললেও স্কুলশিক্ষা দফতরের খবর, সরকারের তরফে এর আগেও বিভিন্ন আধিকারিককে জানানো হয়েছে, ওই সব সংসদের বিলুপ্তি ঘটতে চলেছে। অধিকাংশ ক্ষমতাই এখন পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ এবং স্কুলশিক্ষা দফতরের হাতে চলে এসেছে। ফলে ওই সব সংসদের আর প্রয়োজন নেই।
সংসদ বিলুপ্তির আইনি দিক নিয়ে এক দফা আলোচনাও হয়েছে বলে স্কুলশিক্ষা দফতরের এক কর্তার দাবি। তিনি বলেন, ‘‘আইন দফতরে এই বিষয়ে আলোচনা চলছে। কিছু নথিও পাঠানো হয়েছে। সংসদ ভাঙতে গেলে আইন সংশোধন করতে হবে।’’
আরও পড়ুন: ডিএ বাড়ল ভিন্ রাজ্যে কর্মরতদের, ক্ষোভ বঙ্গে
১৯৭৩ সালের পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা আইনে সব জেলায় একটি করে প্রাথমিক শিক্ষার বোর্ড গড়ার বিধান দেওয়া হয়। গড়াও হয়েছিল সেই সব বোর্ড। তার পরে, ১৯৮৯-’৯০ সালে আইন সংশোধন করে বোর্ডের বদলে তৈরি হয় ‘জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ’। তার চেয়ারম্যান মনোনীত করে সরকার। জেলা স্কুল পরিদর্শক (প্রাথমিক) পদাধিকার-বলে সংসদের সচিব হন। নির্বাচিত শিক্ষক-প্রতিনিধি, মনোনীত বিধায়ক, জেলা পরিষদে শাসক গোষ্ঠীর প্রতিনিধি, শিক্ষাকর্মীদের প্রতিনিধি, মনোনীত শিক্ষানুরাগী ও সংখ্যালঘু প্রতিনিধি এবং স্কুলশিক্ষা দফতরের কয়েক জন মনোনীত সদস্য নিয়ে তৈরি হয় এই সংসদ।
স্কুলশিক্ষা দফতরের এক কর্তা জানান, বাম জমানায় বদলি থেকে শুরু করে নিয়োগের সব ক্ষমতা সংসদের হাতেই ছিল। নিয়োগের জন্য পদ তৈরি, পরীক্ষা নেওয়া, এমনকি নিয়োগপত্র দেওয়ার পুরো কাজটাই করত এই সংসদ। পরে, ২০১২ সালে নিয়োগের অধিকাংশ ক্ষমতা চলে যায় পর্ষদের হাতে। এখন সংসদ শুধু নিয়োগপত্রই দেয়। তবে কলকাতার ক্ষেত্রে এর গঠন কিছুটা আলাদা। এ ক্ষেত্রে সংসদকে মিড-ডে মিল এবং সর্বশিক্ষার পুরো বিষয় দেখতে হয়।
তা হলে সংসদ বিলুপ্তির প্রশ্ন কেন? এক শিক্ষক জানাচ্ছেন, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের দাপটের ফলে ওই সব সংসদ অনেক ক্ষেত্রেই বিকাশ ভবনের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। তবে একটি জেলার প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘গণতন্ত্র বজায় রেখেই সংসদের কাজ চলে। প্রাথমিক শিক্ষায় রাজ্যের উন্নতিও হচ্ছে। সার্বিক উন্নয়নে সংসদের ভূমিকাও রয়েছে। তা সত্ত্বেও এই ভাবনাচিন্তা কেন, বোঝা যাচ্ছে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy