Advertisement
১১ মে ২০২৪

স্কুল ফেলে ঝাড়ু বেচে ওঠে স্কুলের খরচ

এই সময়ে স্কুলে ছুটি থাকে। কিন্তু স্কুল খুললেও আলিপুরদুয়ারের প্রত্যন্ত কিছু এলাকায় পড়ুয়ারা যায় না। কেন?

ঝাড়ু বেচছে ছাত্রেরা। —নিজস্ব চিত্র

ঝাড়ু বেচছে ছাত্রেরা। —নিজস্ব চিত্র

রাজু সাহা
শামুকতলা শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০২০ ০৪:৪৩
Share: Save:

সারা বছর যাতে স্কুল করা যায়, সে জন্য পিকনিকের মরসুমে স্কুলছুট! হাতে তখন ঝাড়ু নিয়ে ওরা ঘোরে পিকনিক স্পটে। আলিপুরদুয়ারের প্রত্যন্ত কিছু এলাকায় পড়াশোনা চালাতে এই কৌশলই নিয়েছে চতুর্থ থেকে ষষ্ঠ শ্রেণির জনা দশেক পড়ুয়া।

শীতের এই সময়ে আলিপুরদুয়ারের ফাসখোয়া, জয়ন্তী ভরে যায় পিকনিকের দলে। আসেন অনেক পর্যটকও। তাঁদের কাছে ফুল ঝাড়ু বিক্রি করে ছোট ছেলেরা। কেউ পড়ে চতুর্থ শ্রেণিতে, কেউ পঞ্চমে। এক জন এ বারে উঠেছে ষষ্ঠ শ্রেণিতে। এই সময়ে স্কুলে ছুটি থাকে। কিন্তু স্কুল খুললেও তারা যায় না। কেন? ফুলঝাড়ু বেচতে বেচতেই জবাব দিল সুজল মাহালি, রীতেশ বার্মারা: এগুলো বিক্রি করতে হবে তো! সুজল, রীতেশ বা ম্যাথু তিরকেদের বাড়ি হাতিপোতা, ফাসখোয়া এলাকায়। তারা জানাল, দিনমজুর বাবা-মা পড়ার সব খরচ দিতে পারেন না। তাই তো ঝাড়ু বেচতে হয়।

স্থানীয়দের কথায়, এই গাছগুলিকে ব্রুমস্টিক প্লান্ট বা ঝাড়ু গাছ বলে। এই গাছের ডালপালা থেকে ভাল ফুলঝাড়ু হয়। সুজল, রীতেশদের বসতি পাহাড়ের পাদদেশে। তাদের বাড়ির বড়রা পাহাড় থেকে এই গাছের ডাল সংগ্রহ করে আনেন। সুজল বলে, ‘‘তার পরে সেগুলিকে ভাল করে বেঁধে ঝাড়ু বানানো হয়। আমরা সেই ঝাড়ুই বিক্রি করি।’’

আরও পড়ুন: খুনের মামলায় মুকুলকে টানা দু’ঘণ্টা জেরা

রীতেশ, ম্যাথুদের কথায়, ‘‘স্কুল না গিয়ে ঝাড়ু নিয়ে আমাদের পথে নামতেই হয়। না হলে সারা বছর পড়ব কী করে?’’ এই সব এলাকার বাসিন্দারা খুবই গরিব। চা বাগানে কাজ বা দিনমজুরি করে তাদের দিন চলে। গত দু’বছর ধরে তারা ঠিক করে নিয়েছে, এই সময়ে ঝাড়ু বেচে আয় করবে। তাতে টাকা কেউ কিনবে বই, কেউ দেবে হাইস্কুলে ভর্তি হওয়ার খরচ। এই শিশুদের পড়াশোনার আগ্রহ দেখে বিস্মিত পর্যটকেরাও। কোচবিহারের দিনহাটা থেকে বেড়াতে এসেছেন নীলিমা সেন। তিনি বলেন, ‘‘ছেলেগুলোর পড়ার প্রতি আগ্রহ দেখে খুব ভাল লাগছে। তবে প্রশাসনিক কর্তারাও ওদের কথা ভাবুন। না হলে স্থায়ী সমাধান হবে না।’’

তুরতুরিখণ্ড গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান চন্দ্রিমা সিং বলেন, ‘‘ফাসখোয়া পিকনিক স্পটে কিছু ছেলে ঝাড়ু বিক্রি করে, সেটা শুনেছি। তবে পড়াশোনার খরচ জোগাতে তারা এই কাজ করে কি না, সেটা জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখব। ওদের সঙ্গে কথা বলব। ওদের পড়াশোনার ক্ষেত্রে যাতে কোন সমস্যা না হয়, সেটা অবশ্যই দেখব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Alipurduar Education
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE