নোট বাতিলের বিরোধিতায় তখন নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে মোদী সরকারের তুলোধোনা করছেন মুখ্যমন্ত্রী বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশে বসে রয়েছেন লোকসভায় তৃণমূল দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে বিঁধে মমতা বলছেন,‘‘আমাকে গুলি করুন, ভয় পাই না। কিন্তু মানুষের হয়রানি বরদাস্ত করব না!’’ কম বেশি ঠিক এমনই সময় সুদীপবাবুর মোবাইলে আসে একটি টেক্সট মেসেজ। মোবাইলে সাইলেন্ট মোডে থাকায় তখন খেয়াল করেননি। পরে সাংবাদিক বৈঠক শেষ হতে মেসেজটি দেখেই উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠেন প্রাক্তন এই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী।
কী লেখা ছিল তাতে? সিবিআই ইন্সপেক্টর বি ঘোষালের পাঠানো ওই টেক্সট মেসেজের মূল বক্তব্য ছিল, ‘‘দয়া করে আপনার ই-মেল অ্যাডড্রেসটা পাঠান। একটা নোটিস পাঠানোর আছে।’’ সঙ্গে সঙ্গেই মমতাকে ওই টেক্সট মেসেজটি দেখান সুদীপবাবু। তার পর মোদী সরকারের বিরুদ্ধে আরও ক্ষোভে ফেটে পড়েন তৃণমূল নেত্রী। ঘনিষ্ঠ মহলে মমতা বলেন, ওঁরা ভেবেছেটা কি? এ ভাবে ধমকে চমকে রাজনীতি করবে? তদন্ত না ছাই স্রেফ প্রতিহিংসার রাজনীতি করছে বিজেপি।
সিবিআই ও তৃণমূল সূত্রে খবর, শুধু সুদীপবাবু নয়, কদিন আগে তৃণমূলের আর এক সাংসদ শতাব্দী রায়কেও নোটিস পাঠিয়েছে সিবিআই। তাঁকে বলা হয়েছে, আগের বার আপনার আইনজীবী প্রশ্নের যে জবাব দিয়েছেন তা সন্তোষজনক নয়। ফলে এ বার সাংসদ যেন ব্যক্তিগত ভাবে হাজির হয়ে প্রশ্নের জবাব দেন। যদিও সুদীপবাবু নোটিস সম্পর্কে মন্তব্য করতে চাননি। শতাব্দীও ফোন ধরেননি বা এ ব্যাপারে টেক্সট মেসেজের জবাব দেননি।
সিবিআইয়ের সূত্রের মতে, এঁরা ছাড়াও সারদা ও রোজ ভ্যালি কাণ্ডে তৃণমূলের আরও কিছু রাঘব বোয়াল নেতার বিরুদ্ধে তাঁদের কাছে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও নথি রয়েছে। তাঁদেরও সিবিআই দফতরে তলব করা হতে পারে। প্রসঙ্গত, সিবিআইয়ের নোটিসের পাশাপাশি সম্প্রতি আয়কর দফতর তৃণমূলের চার জন নেতা-মন্ত্রীকে নোটিস ধরিয়েছে বলেও খবর। এর মধ্যে এক তৃণমূলের নেতার মিজোরামের ব্যবসার কাগজপত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে আয়কর দফতর। বাকি তিন জন মমতা-মন্ত্রিসভার শীর্ষ সারির সদস্য।
উল্লেখযোগ্য হল, সারদা তথা চিট ফাণ্ড মামলা নিয়ে গত আট দশ মাসে সিবিআই তদন্তে কিন্তু খুব বেশি তৎপরতা নজরে পড়েনি। বরং এক প্রকার থমকেই গিয়েছিল তদন্ত। নারদ কাণ্ডের তদন্ত নিয়েও হাত গুটিয়ে বসে ছিল সংসদীয় এথিক্স কমিটি। যা দেখে বাংলায় বিরোধী রাজনৈতিক দল গুলি মোদী ভাই-দিদি ভাই আঁতাতের অভিযোগও করছিলেন। কিন্তু ইদানীং তৃণমূল নেত্রী কেন্দ্র বিরোধিতায় সক্রিয় হয়ে ওঠার পর পরই ঘটনাচক্রে আবার সিবিআই তৎপর হয়ে উঠেছে। তাই এ প্রশ্নও উঠছে যে, তা হলে কি রাজনৈতিক ভাবে সিবিআই-কে ব্যবহার করছে মোদী সরকার? বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘‘তদন্তের সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক নেই। মানুষ মনে করে এই লুঠের জন্য তৃণমূলই দায়ী। সত্য সাময়িক প্রতারিত হলেও পরাজিত হবে না। দোষীরা শাস্তি পাবেনই।’’
কেন্দ্রের প্রতিহিংসার রাজনীতিকে যে তিনি ভয় পাচ্ছেন না, সেই বার্তা দিতে চেয়ে মমতা বলেন, ‘‘আমাকে জব্দ করতে জেলে পুরলে, আমার কণ্ঠরোধ করতে মেরে ফেললেও আপস করব না। দেখি ওরা আর কী করতে পারে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy