সুপ্রিম কোর্ট।—ফাইল চিত্র।
তৃণমূল নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রীর বিরুদ্ধে বিদেশ থেকে বিধিবহির্ভূত ভাবে সোনা আনা সংক্রান্ত অভিযোগ নিয়ে একটি জনস্বার্থ মামলায় আজ পশ্চিমবঙ্গ সম্পর্কে তীক্ষ্ণ মন্তব্য করল সুপ্রিম কোর্ট। শুনানির সময় প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ বলেন, ‘‘জানি না, কার দাবি সত্যি। তবে পশ্চিমবঙ্গে কী চলছে, আমরা তার গভীরে গিয়ে দেখতে চাই।’’
শীর্ষ আদালতে ওই জনস্বার্থ মামলাটি করেছেন কেন্দ্রীয় পরোক্ষ কর ও শুল্ক পর্ষদ (সিবিআইসি)-এর সদস্য রাজকুমার বার্থওয়াল। তাঁর দাবি, পশ্চিমবঙ্গে কেন্দ্রীয় সংস্থার অফিসারেরা কাজ করতে ভয় পাচ্ছেন। রাজ্য পুলিশ তাঁদের হুমকি দিচ্ছে। রাজ্য পুলিশকে সংযত হতে নির্দেশ দেওয়া হোক। সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা বলেন, ১৫ মার্চ রাতে কলকাতা বিমানবন্দরে শুল্ক দফতরের অফিসারদের কাজে বাধা দেওয়া হয়। তার ভিত্তিতেই এই মামলা। প্রধান বিচারপতি বিষয়টিকে ‘খুব, খুব গুরুতর’ আখ্যা দেন। ঘটনায় রাজ্য সরকারের জবাবদিহি চেয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
এর আগে কলকাতা হাইকোর্টে শুল্ক দফতর অভিযোগ তোলে, অভিষেকের স্ত্রী রুজিরা গত ১৫ মার্চ বিমানে ব্যাঙ্কক থেকে বিধিবহির্ভূত ভাবে সোনা এনেছেন। অন্য দিকে অভিষেক একে ‘রাজনৈতিক চক্রান্ত’ বলে খারিজ করলেও কেন্দ্র সুপ্রিম কোর্টে মৌখিক অভিযোগে বলে, রুজিরাকে শুল্ক দফতর কলকাতা বিমানবন্দরে আটক করার পরে রাজ্য পুলিশ গায়ের জোরে তাঁকে বার করে নিয়ে যায়। পুলিশ শুল্ক অফিসারদের হুমকিও দেয়।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
আইনজীবী তথা রাজনীতিকেরা বলছেন, সোনা-কাণ্ড নিয়ে যে রাজ্য সরকার তথা তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের উপরে চাপ তৈরির চেষ্টা হচ্ছে, সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থ মামলা থেকেই তা স্পষ্ট। এর আগে সিবিআই সারদা-তদন্তে রাজ্য পুলিশ-প্রশাসনের বাধার অভিযোগ তুলে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল। আজ সিবিআইসি সদস্যের মামলাতেও সেই একই সুর মিলেছে।
আজ প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘কেউ কিছু বিষয়ে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। এটা খুব, খুব গুরুতর। জানি না, কার দাবি সত্যি। কিন্তু বিষয়টা উপেক্ষা করা যায় না। প্রয়োজন হলে আমরা নিজে থেকে গোটা ঘটনায় হস্তক্ষেপ করতে পারি। পশ্চিমবঙ্গে কী চলছে, আমরা তার গভীরে গিয়ে দেখতে চাই।’’
রাজ্যের আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেছিলেন, এই মামলা দাঁড়ায় না। কারণ সিবিআইসি-র সদস্য রাজকুমার বার্থওয়ালের সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই। রাজ্যের বক্তব্য জানতে চেয়ে নোটিস জারিতেও প্রতিবাদ জানান তিনি। কিন্তু প্রধান বিচারপতি গগৈ ও বিচারপতি সঞ্জীব খন্নার বেঞ্চ সেই আপত্তি মানেননি।
বিষয়টিকে নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক ইস্যু করার চেষ্টা হচ্ছে বলে ইঙ্গিত দিয়ে মনু সিঙ্ঘভি জানান, এই মামলায় অভিযোগের সব কিছু সংবাদমাধ্যমে রিপোর্ট হবে। প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘আমরা কি রিপোর্টিংয়ে বাধা দেব? কে কী রিপোর্ট করছেন, তা নিয়ে আমরা চিন্তিত নই।’’
২৯ মার্চ প্রধান বিচারপতির সামনে সোনা-কাণ্ড নিয়ে অভিযোগ তুলে তুষার মেহতা বলেন, পশ্চিমবঙ্গে আইনশৃঙ্খলা নেই। বিমানবন্দরে সাংসদের স্ত্রীর সাতটি ব্যাগ তল্লাশির জন্য আটক করা হলে, স্থানীয় পুলিশ এসে শুল্ককর্তাদের কাজ বন্ধ করতে বলে। কারা রুজিরাকে আটক করেছেন, তা জানতে চাওয়া হয়। হুমকি দেওয়া হয়, মহিলাকে না ছাড়লে শুল্ক অফিসারদের বিরুদ্ধেই এফআইআর করে গ্রেফতার করা হবে। শেষে অনুমতি ছাড়াই পুলিশ রুজিরাকে বার করে নিয়ে যায়। গোটা ঘটনা সিসিটিভি-তে ধরা আছে বলেও দাবি করেছিলেন মেহতা।
রাজ্য সরকার সূত্রের যুক্তি, রুজিরার ব্যাগ তল্লাশির সময় শুল্ক দফতর ‘বাধা’ পেলে, সেই অভিযোগ থানায় জানাতে সাত দিন সময় নিল কেন? কেনই বা অভিযোগ জানানোর চার দিন পরে তাঁকে সমন পাঠানো হল? রাজ্য সরকারের এক কর্তা বলেন, কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায়ের বেঞ্চ ইতিমধ্যে এই সব প্রশ্ন তুলেছে। সুপ্রিম কোর্টেও রাজ্য একই প্রশ্ন তুলবে। সিসিটিভি-তে কোনও প্রমাণ নেই বলেও রাজ্য সরকারি সূত্রের দাবি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy