রাতের রিষড়া স্টেশনে বছর চোদ্দোর কিশোরীটিকে একা বসে থাকতে দেখে রেল পুলিশের সন্দেহ হয়েছিল। জিজ্ঞাসাবাদের পরে সে দাবি করে, সৎমায়ের অত্যাচার থেকে বাঁচতেই সে মুর্শিদাবাদের বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছে। জিআরপি তাকে চাইল্ড লাইনের হাতে তুলে দিয়েছে।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কিশোরীটি দাবি করেছে যে তার বাড়ি মুর্শিদাবাদের মহিষাস্থলি গ্রামে। ছোটবেলায় তার মা মারা গেলে বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। সৎমায়ের চার সন্তান। কিশোরীর অভিযোগ, সৎমা তাকে গরম শিকের ছ্যাঁকা দেয়। খেতে দেয় না। নিয়মিত স্কুলে যেতেও দেয় না। বাধ্য হয়ে পেট চালানোর জন্য তাকে বিড়ি বাঁধতে হয়।
কিশোরী জানিয়েছে, তাঁর বাবা ভিন রাজ্যে রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। বাড়িতে বৃদ্ধা ঠাকুমা সৎমায়ের মারধর থেকে তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করলেও লাভ হয়নি। বাধ্য হয়ে শুক্রবার সকালে জমানো হাজার দশেক টাকা এবং আধার কার্ড নিয়ে সে ঘর ছেড়েছে। কিশোরীর দাবি, বিড়ি বেঁধে দিনে শ’খানেক টাকা উপার্জন হয়। বাড়ি ছাড়ার আগে জমানো সেই টাকাই নিয়ে এসেছে সে। কিশোরীর সব দাবিই খতিয়ে দেখছে চাইল্ড লাইন ও জিআরপির কর্তারা।
মুর্শিদাবাদ থেকে কী ভাবে সে রিষড়ায় এসে পৌঁছল সে? ওই কিশোরীর দাবি, শ্রীরামপুরে তার মাসি থাকে। শুক্রবার সে ট্রেনে চেপে প্রথমে ব্যান্ডেল, তারপর হাওড়ায় যায়। সেখান থেকে বাসে চেপে বালিঘাটে আসে। বিকেলে এক টোটোচালককে বিষয়টি জানালে তিনি ওই কিশোরীকে নিয়ে শ্রীরামপুরের নানা জায়গায় ঘুরলেও সেই আত্মীয়ের সন্ধান মেলেনি। রাত ৮টা নাগাদ ওই টোটো চালক তাকে রিষড়া স্টেশনে নামিয়ে ট্রেনে চেপে হাওড়া হয়ে বাড়ি ফিরে যেতে বলে। তার পরে কী করবে ভেবে না পেয়ে রিষড়া স্টেশনেই বসেছিল সে। হুগলি জেলা চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির (সিডব্লিউসি) নির্দেশে ওই কিশোরীকে আপাতত উত্তরপাড়ার একটি হোমে রাখা হয়েছে। তার শারীরিক পরীক্ষা ও কাউন্সেলিং হয়েছে। মুর্শিদাবাদ চাইল্ড লাইনেও বিষয়টি জানানো হয়েছে।
ওই কিশোরীর পরিবারের সঙ্গে এ দিন যোগাযোগ করা হলে ওই কিশোরীর মায়ের দাবি, ‘‘মেয়ে আমার উপরে রাগ করেই এমন কথা বলছে। ও আমার বড় মেয়ে গো।’’ পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার সকাল থেকে ওই কিশোরীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। রবিবার রাত ন’টা পর্যন্ত তার পরিবারের লোকজন নানা জায়গায় খোঁজ করেছেন। পরে সংবাদমাধ্যমের কাছে বিষয়টি জানতে পেরে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে ওই পরিবার। ওই কিশোরীর মা বলছেন, ‘‘মেয়েকে যতক্ষণ দেখতে না পাচ্ছি ততক্ষণ স্বস্তি নেই।’’
আজ, সোমবার ওই কিশোরীর পরিবারের লোকজন উত্তরপাড়ার হোমে যাবেন বলে জানিয়েছেন। ওই কিশোরীর মা বলছেন, ‘‘অভাবের সংসার। ওর বাবা কেরলে কাজ করে। আমরা বাড়িতে বিড়ি বাঁধি। মেয়ে কথা না শোনায় ওকে মারধর করেছিলাম। কিন্তু ভাবতে পারিনি ও এমন কাণ্ড করে বসবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy