Advertisement
০৫ মে ২০২৪
Ambulance

মিলল না অ্যাম্বুল্যান্স, হাসপাতালে ভর্তি করাতে যন্ত্রণাকাতর কিশোরকে ভ্যানে চরকিপাক

ওই কিশোরের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার রাতে বাইকের ধাক্কায় পাঁজরে ও হাতে গুরুতর চোট লাগে তার।

ভ্যানরিকশা করে আহত কিশোরকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে হাসপাতাল। —নিজস্ব চিত্র।

ভ্যানরিকশা করে আহত কিশোরকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে হাসপাতাল। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০২০ ২১:১৩
Share: Save:

হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার জন্য অ্যাম্বুল্যন্স নয়, ভ্যানরিকশায় চরকিপাক খেতে হল এক কিশোরকে। হাসপাতালে গেলেও তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। ফের সেই ভ্যানরিকশায় থানা ঘুরে আবারও হাসপাতাল। শনিবার লকডাউনের দিন এমন ঘটনার সাক্ষী থাকল কলকাতা।

ওই কিশোরের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার রাতে বাইকের ধাক্কায় পাঁজরে ও হাতে গুরুতর চোট লাগে তার। ওই দুর্ঘটনার পর বছর চোদ্দোর কার্তিক সরকারকে নিয়ে যাওয়া হয় এনআরএস হাসপাতালে। প্রাথমিক চিকিৎসার পর সেখান থেকে তাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু শনিবার সকাল থেকে তাঁর হাতে ও বুকে প্রচণ্ড যন্ত্রণা হতে থাকে। প্রতিবেশীরা ফের ওই কিশোরকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে উদ্যোগী হন। কিন্তু কোথাও অ্যাম্বুল্যান্স মেলেনি। এর পর একটি ভ্যান রিকশায় করে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় আরজি কর হাসপাতালে। কিন্তু সেখানে তাঁকে ভর্তি নেওয়ার বদলে উল্টে থানায় যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। বলা হয়, এটা দুর্ঘটনা। ফলে পুলিশে অবিযোগ দায়ের করে তবেই হাসপাতালে ভর্তি হওয়া যাবে।

এর পর ওই কিশোরকে নিয়ে জোড়াসাঁকো থানায় নিয়ে যান তাঁর পরিজনেরা। এবং আবারও সেই ভ্যান রিকশায়। কিন্তু থানায় গেলেও পুলিশ কোনও অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করেনি বলে অভিযোগ। আইনমাফিক দুর্ঘটনার অভিযোগ নিয়ে ওই কিশোরকে ফের ভ্যান রিকশায় করে আরজি করে পাঠানোর ব্যবস্থা করে তারা। এর পর ওই কিশোর হাসপাতালে চিকিৎসার সুযোগ পায়। কিন্তু খাস কলকাতার বুকে আহত এক কিশোর ভ্যানরিকশায় করে রক্ত ও স্যালাইন চলা অবস্থাতে এক বার হাসপাতাল, এক বার থানা— চিকিৎসার জন্য চরকি পাক খেতে হল!

আরও পড়ুন: করোনা আক্রান্ত ৯ দিনের শিশু, মূত্রথলির জটিল অপারেশনের নজির মেডিক্যালে

থানা তো বটেই আরজি কর হাসপাতালের যাওয়ার রাস্তায় যাতায়াতের পথে শ্যামবাজারের মোড়ে কয়েক বার ওই ভ্যান-রিকশাকে দেখেছেন একাধিক পুলিশকর্মী। ওই কিশোরের আত্মীয় অজয় সিংহ, যিনি এ দিন কার্তিককে ভ্যানরিকশায় চাপিয়ে এক বার থানা, এক বার হাসপাতাল করেছেন, তাঁর অভিযোগ, ‘‘লকডাউনের দিনে শ্যামবাজারের মোড়ে অনেক পুলিশকর্মী ছিলেন। তাঁরাও আমাদের দেখে এগিয়ে আসেননি। অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করলে ছেলেটাকে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে ভর্তি করানো যেত। আবার হাসপাতাল যদি আমাদের পুলিশের কাছে না ফেরত, তা হলেও ছেলেটার যন্ত্রণা আর একটু তাড়াতাড়ি কমত।’’

পুলিশ এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ উভয়েই তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছে। পুলিশের দাবি, ওই কিশোরের আত্মীয়রা যদি সাহায্য চাইতেন, তা হলে নিশ্চয়ই সদর্থক পদক্ষেপ করা হত। অজয়ের পাল্টা দাবি, “ওই সময় রোগীর প্রাণ বাঁচাব না লকডাউনের সময় কোথায় অ্যাম্বুলেন্স আছে, তার জন্য পুলিশের কাছে সাহায্য চাইব। ওরা তো সব দেখেছে।” আর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, নিয়ম অনুযায়ীই সবটা করা হয়েছে। পুলিশে অভিযোগ দায়ের হওয়ার পর নিয়ম মেনে ওই কিশোরের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: বেসরকারি হাসপাতালে করোনা চিকিৎসার খরচ রাশে ভরসা অ্যাডভাইজ়রি

এই ঘটনায় সরব হয়েছেন মানবাধিকার কর্মীরা। মানবাধিকার কর্মী রঞ্জিত শূর বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য পরিষেবা পাওয়া মানুষের অধিকার। কোভিড রোগী হোক বা না হোক, স্বাস্থ্য পরিষেবা পেতে সকলকেই চূড়ান্ত হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। এতে তো মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ambulance RG Kar Hospital Lockdown NRS hospital
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE