Advertisement
০৫ মে ২০২৪

এত দফায় ভোট কেন, প্রশ্ন তৃণমূলের

রাজ্যে এ বার লোকসভা ভোট হবে ৭ দফায়। দু’বছর আগে রাজ্যে বিধানসভা ভোটও হয়েছিল ৭ দফায়।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৯ ০০:১১
Share: Save:

রাজ্যে এ বার লোকসভা ভোট হবে ৭ দফায়। দু’বছর আগে রাজ্যে বিধানসভা ভোটও হয়েছিল ৭ দফায়। বাংলায় ১১ এপ্রিল থেকে ১৯ মে পর্যন্ত দফায় দফায় দীর্ঘ ভোট করানোর সিদ্ধান্ত ঘিরেই শুরু হয়ে গেল বিতর্ক এবং চাপান-উতোর।

বিজেপির দাবি, বাংলায় ৭ দফায় ভোটগ্রহণ রাজ্য সরকারের জন্য ‘অপমান’। তাদের মতে, কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্তেই স্পষ্ট যে, বাংলায় আইনশৃঙ্খলার হাল খারাপ। তৃণমূল পাল্টা প্রশ্ন তুলেছে, বিজেপি-শাসিত উত্তরপ্রদেশ ও বিহারেও ৭ দফায় ভোট হবে। বিজেপির দাবি মানলে ধরে নিতে হবে, তাদের হাতে থাকা ওই দুই রাজ্যেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সঙ্গিন! তামিলনাড়ুর মতো ৩৯ আসনের রাজ্যে এক দফায় ভোট হলে ৪২ আসনের বাংলায় কেন ৭ দফা, এই প্রশ্নও উঠছে তৃণমূল শিবির থেকে। আবার মাত্র দু’টি করে আসনের ত্রিপুরা ও মণিপুরে দু’দফায় ভোট নেওয়া হবে। ওই দুই রাজ্যেই এখন বিজেপির সরকার।

সাধারণ মানুষের অসুবিধা এবং রমজান মাসে ভোট ফেলার যুক্তি নিয়েই তৃণমূল অবশ্য বেশি সরব হয়েছে। রাজ্যের অন্য দুই বিরোধী দল সিপিএম এবং কংগ্রেস অবশ্য বলেছে, ক’দফায় ভোট হচ্ছে— সেটা বড় কথা নয়। রাজ্যে ভোটের দফা নিয়ে তারা কমিশনের কাছে দরবার করতেও যায়নি বলে জানিয়ে ওই দুই দলের বক্তব্য, মানুষ অবাধে ভোট দিতে পারবেন, এটাই নিশ্চিত করুক নির্বাচন কমিশন।

আরও পড়ুন: পশ্চিমবঙ্গে ৭ দফায় নির্বাচন, দেখে নিন কবে-কোথায় ভোট

ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণার পরে তৃণমূল নেতা ও রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম রবিবার বলেন, ‘‘আমরা যারা রাজনৈতিক দল করি, তাদের অসুবিধা নেই। কিন্তু অসুবিধা মানুষের। এত দিন ধরে ভোট চলবে। রমজানের মধ্যেও ভোট হচ্ছে। বাংলা, বিহার ও উত্তরপ্রদেশের সংখ্যালঘু মানুষের অসুবিধা নিয়ে আমরা চিন্তিত।’’ পাশাপাশিই তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, কেন্দ্রীয় বাহিনী ‘দু’দিনের জন্য’ আসে। রাজ্যে আগেও নানা দফায় এবং কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট হয়েছে। তাতে বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল ২১১টি আসন জিতে ক্ষমতায় ফিরেছে। সুতরাং, ৭ দফায় ভোট হচ্ছে বলে তাঁরা ‘আতঙ্কিত’— এমন মনে করার কোনও কারণ নেই।

বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিংহের দাবি, ‘‘পঞ্চায়েত নির্বাচনে এখানে ভোটের নামে প্রহসন হয়েছে। ভোট লুঠ হয়েছে। মানুষ খুন হয়েছে। বিজেপি-সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এ বিষয়ে কমিশনের কাছে অভিযোগ জানিয়েছিল। কমিশন আমাদের অভিযোগকে মান্যতা দিল।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, পুলিশ পর্যবেক্ষক নিয়ে এসে যথাযথ কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের জন্য তাঁরা কমিশনে আবেদন করেছিলেন। প্রয়োজনে আবার করবেন।

রাহুলবাবুর পাল্টা ফিরহাদের অভিযোগ, ‘‘ওরা সরকারকে ব্যবহার করে এমন রিপোর্ট নির্বাচন কমিশনে পাঠিয়েছে যে, এখানে ৭ দফায় নির্বাচন দেওয়া হল। কিন্তু ভোটের পর বিজেপি বুঝবে, কত ধানে কত চাল! মানুষ ব্যালটে এর জবাব দেবেন।’’ মন্ত্রীর আরও অভিযোগ, ‘এখানে যেটুকু আইনশৃঙ্খলার সমস্যা হয়েছে, তা বিজেপির জন্যই। বিজেপির দাবি উড়িয়ে তাঁর মন্তব্য, ‘‘আমাদের সুবিধাই হল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুধু রাজ্যে নয়, গোটা দেশে প্রচারে যাওয়ার সুযোগ পেলেন। এটা বিজেপির জন্য অশনিসঙ্কেত।’’

বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসুর বক্তব্য, ‘‘ক’দফায় ভোট হল, সেটা বড় কথা নয়। মানুষ অবাধে ও সুষ্ঠু ভাবে নিজের ভোট নিজে দিতে পারলেন কি না, সেটা নিশ্চিত করতে হবে কমিশনকে। গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে এ রাজ্যে।’’ একই সুরে বিরোধী দলনেতা, কংগ্রেসের আব্দুল মান্নান বলেন, ‘‘অবাধ ও নিরপেক্ষ ভোট হচ্ছে কি না, সেটাই বড় কথা। এর আগে ভোটের দিনে গণ্ডগোলের সময়ে অভিযোগ জানিয়ে দেখা গিয়েছে, কমিশনের আধিকারিকেরা ঘুমিয়ে থাকছেন!’’ তবে মান্নান ও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্রেরও মতে, ‘‘রমজানে ভোট না হওয়াই বাঞ্ছনীয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE