ধুন্ধুমার: জয়নগরের কলেজে মারামারিতে আহত ভাস্কর পট্টনায়ককে নিয়ে হাসপাতালের পথে পড়ুয়ারা।
মুখ্যমন্ত্রীর শত নিষেধ, হুঁশিয়ারিতেও তৃণমূলের ছাত্র পরিষদকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যাচ্ছে না।
টাকা নিয়ে ছাত্র ভর্তি বা কলেজের ছাত্র সংসদের দখলদারিকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের ছাত্র সংগঠন টিএমসিপি-র গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে অশান্ত হচ্ছে একের পর এক কলেজ।
রাজ্যের বিভিন্ন কলেজে টাকা নিয়ে ছাত্র ভর্তির চক্রের বাড়বাড়ন্তে গত সপ্তাহেই টিএমসিপির রাজ্য সভানেত্রী জয়া দত্তকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর নির্দেশ ছিল দশ দিনের মধ্যে সংগঠনের নতুন প্রধান ঠিক করতে হবে। সেই সময়সীমা পেরোলেও কবে, কীভাবে তা কার্যকর হবে, সেটা স্পষ্ট নয়।
এই অবস্থায় ভর্তি নিয়ে তোলাবাজির অভিযোগ যেমন থেমে নেই, তেমনই সামনে আসছে বিভিন্ন কলেজে টিএমসিপির নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী মারামারি। শুক্রবার উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের দু’টি কলেজে টিএমসিপির গোলমাল বোমা-গুলি পর্যন্ত গড়িয়েছে।
দিনভর রাজ্যের দু’প্রান্তের দু’টি কলেজ-চত্বরে গোলমালের ঘটনা ঘটলেও রাত পর্যন্ত এ নিয়ে কথা বলার জন্য তৃণমূলের কোনও শীর্ষ নেতাকে পাওয়া যায়নি। টিএমসিপির ভারপ্রাপ্ত দলের মহাসচিব তথা শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। টিএমসিপি নেতৃত্বের তরফেও কাউকে যোগাযোগ করা যায়নি।
কোচবিহারের নার্সিংহোমে চিকিৎসা চলছে গুলিবিদ্ধ মাজিদ আনসারির।
এ দিন সকাল ১১টা নাগাদ জয়নগরের ধ্রুবচাঁদ কলেজে ভর্তি হতে আসা পড়ুয়াদের ভিড় হঠাৎই সন্ত্রস্ত হয়ে ওঠে মুহূর্মুহু বোমার শব্দ, ধোঁয়ায়। ওই কলেজে এখন কোনও নির্বাচিত ছাত্র সংসদ নেই। টিএমসিপিও সেখানে দ্বিধাবিভক্ত। একটি গোষ্ঠী স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক বিশ্বনাথ দাসের নিয়ন্ত্রণে অন্যটি তৃণমূলের প্রাক্তন ব্লক সভাপতি গৌর সরকারের নিয়ন্ত্রণে বলে কলেজ সূত্রের খবর। টাকা নিয়ে টিএমসিপির দু’পক্ষই ভর্তি করাচ্ছে বলে অভিযোগ। কিন্তু কার হাতে ভর্তির রাশ থাকবে, তা নিয়ে বৃহস্পতিবার থেকে দুই গোষ্ঠীর গোলমাল শুরু হয়ে এ দিন বোমাবাজি পর্যন্ত গড়িয়েছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর।
গোটা ঘটনায় তিন জন গ্রেফতার হয়েছে। বিবদমান দুই নেতা একে অপরকে দায়ী করেছেন। এই দুই নেতার ‘লড়াই’ অনেক দিনের। পঞ্চায়েত ভোটে অনেক জায়গায় তাঁরা পরস্পরের বিরুদ্ধে নির্দল প্রার্থী দিয়েছিলেন।
বিকেলে আবার কলেজ ছাত্র মাজিদ আনসারিকে গুলি করে খুনের চেষ্টার অভিযোগে উত্তপ্ত হয়ে উঠল কোচবিহার। বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই ছাত্র কোচবিহার কলেজের টিএমসিপির ইউনিটের আহ্বায়ক। ওই কলেজের দখলদারি নিয়ে টিএমসিপির দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে লড়াই চলছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। এ দিন একটি গোষ্ঠী কলেজে ঢোকার চেষ্টা করলে গোলমালের সূত্রপাত। দুই গোষ্ঠীর হাতাহাতিতে কয়েক জন আহত হন। মাজিদকে তখন হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। কলেজ থেকে বাড়ি ফেরার পথে মাজিদকে গুলি করা হয় বলে অভিযোগ। তবে এই ঘটনার সঙ্গে কলেজের সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেছেন ওই জেলার টিএমসিপি নেতৃত্ব।
কিন্তু কার্যত ‘বেলাগাম’ ছাত্র সংগঠনে রাশ টানতে এত বার মমতা হুঁশিয়ারি দেওয়া সত্ত্বেও কেন কাজ হচ্ছে না, তা নিয়ে দলের অন্দরে এবং রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে। কেন দলীয় নেতৃত্বের কেউ এ ব্যাপারে মুখ না খোলায় সংশয় বেড়েছে।
ছবি: হিমাংশু রঞ্জন দেব, নিজস্ব চিত্র
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy