Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বিক্ষোভ-অবরোধে তেতে উঠল শিল্পাঞ্চল

রবিবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ আসানসোলের আশ্রম মোড়ে দলীয় সমর্থকদের নিয়ে বিক্ষোভ দেখান তৃণমূল নেতা তথা শহরের মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারি। দুর্গাপুরে ২ নম্বর জাতীয় সড়কের ওল্ড কোর্ট মোড় ও গাঁধী মোড়ে রাতে দফায়-দফায় অবরোধ চলে

বরাকরের ডুবুরডিহি চেকপোস্টের কাছে ঝাড়খণ্ড সীমানায় ২ নম্বর জাতীয় সড়কে গাছের গুঁড়ি, টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ। সোমবার দুপুরে। ছবি: পাপন চৌধুরী

বরাকরের ডুবুরডিহি চেকপোস্টের কাছে ঝাড়খণ্ড সীমানায় ২ নম্বর জাতীয় সড়কে গাছের গুঁড়ি, টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ। সোমবার দুপুরে। ছবি: পাপন চৌধুরী

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:১৯
Share: Save:

কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধর্নার সমর্থনে জেলা জুড়ে অবরোধ-বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করল তৃণমূল। রবিবার রাত থেকেই শুরু হয়ে যায় বিক্ষোভ। সোমবারও সকাল থেকে দফায়-দফায় তা চলতে থাকে। জাতীয় সড়কেও অবরোধ হয়। রাস্তায় গাড়ির টায়ার, গাছের গুঁড়ি জ্বালানো হয়। অবরোধের জেরে সমস্যায় পড়েন যাত্রীরা।

রবিবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ আসানসোলের আশ্রম মোড়ে দলীয় সমর্থকদের নিয়ে বিক্ষোভ দেখান তৃণমূল নেতা তথা শহরের মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারি। দুর্গাপুরে ২ নম্বর জাতীয় সড়কের ওল্ড কোর্ট মোড় ও গাঁধী মোড়ে রাতে দফায়-দফায় অবরোধ চলে। রাস্তার উপরে টায়ার জ্বালানো হয়। চারদিক ঢেকে যায় ধোঁয়ায়। গাঁধী মোড়ের কাছে অবরোধ শুরু হয় রাতে সাড়ে ১১টা নাগাদ। ছিলেন তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায়। বহুক্ষণ অবরোধে আটকে পড়ে অনেক বাস, গাড়ি। রাজবাঁধেও জাতীয় সড়কে বিক্ষোভে শামিল হন তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা। রাত ১০টা নাগাদ রানিগঞ্জে নেতাজি মূর্তি লাগোয়া এলাকায় ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে পুরসভার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) দিবেন্দু ভগতের নেতৃত্বে অবরোধ হয়। প্রায় আধ ঘণ্টা তা চলে। বিক্ষোভ মিছিল হয় নিয়ামতপুরেও।

সোমবার সকাল থেকে ফের তেতে ওঠে শিল্পাঞ্চল। সকাল ১১টা নাগাদ কুলটির নিয়ামতপুর নিউ রোড এলাকায় স্থানীয় কাউন্সিলর বাদল পুঁইতন্ডির নেতৃত্বে কয়েকশো কর্মী-সমর্থক জিটি রোডে বসে পড়েন। দলের ব্লক সভাপতি মহেশ্বর মুখোপাধ্যায় ও যুব সভাপতি বুম্বা চৌধুরীর নেতৃত্বে অবরোধ শুরু হয়। আটকে পড়ে যানবাহন। ব্যতিব্যস্ত হন যাত্রীরা। পুলিশের অনুরোধে সেখানে আধ ঘণ্টার মধ্যে অবরোধ তোলা হলেও ফের লছিপুরে জিটি রোড অবরোধ শুরু হয় দলের নেতা তথা প্রাক্তন পুরপ্রধান বাচ্চু রায়ের নেতৃত্বে। সেখানেও গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আটকে পড়ে পড়ুয়া বোঝাই গাড়িও। দুপুর ১২টা নাগাদ পুলিশ অবরোধ তোলে।

দুর্গাপুরে এ দিন সকালে ডিএসপি কারখানার মেনগেটের সামনে ঠিকা শ্রমিকদের নিয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন আইএনটিটিইউসি-র প্রাক্তন জেলা সভাপতি প্রভাত চট্টোপাধ্যায়। ঘণ্টাখানেক বিক্ষোভ চলে। সগড়ভাঙায় কালো পতাকা নিয়ে মিছিল করেন তৃণমূল কর্মীরা। ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর সুনীল চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে জেপি অ্যাভিনিউয়ে মাঝের মোড়ে প্রায় আধ ঘণ্টা অবরোধ হয়। অ্যাম্বুল্যান্স ও শববাহী গাড়ি বাদ দিয়ে অন্য সব যানবাহন আটকানো হয়। সিটি সেন্টারে এডিডিএ কার্য়ালয় লাগোয়া এলাকা থেকে তৃণমূলের মিছিল বেরোয়। পানাগড়েও মিছিল হয়।

দুপুর সওয়া ১২টা নাগাদ ঝাড়খণ্ড সীমানায় বরাকরের ডুবুরডিহি চেকপোস্টে তৃণমূলের পতাকা হাতে ২ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন কর্মী-সমর্থকেরা। আইএনটিটিইউসি-র ব্লক যুগ্ম আহ্বায়ক বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় তার নেতৃত্বে ছিলেন। রাস্তার মাঝে গাড়ির টায়ার, গাছের গুঁড়ি ফেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এর জেরে বেশ কিছুক্ষণ রাস্তায় চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। দীর্ঘক্ষণ যানবাহনগুলিকে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। ঘণ্টা দুয়েক এই পরিস্থিতি চলার পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে অবরোধ ওঠে।

দুপুর ২টো নাগাদ আসানসোলের আশ্রম মোড়ে জিটি রোড অবরোধ শুরু করেন তৃণমূল নেতা রবিউল ইসলাম। সেই সময়ে বেশ কিছু স্কুলের ছুটি হয়। দাঁড়িয়ে পড়ে পড়ুয়া বোঝাই গাড়িগুলি। পুলিশ অবরোধ তোলে। পুরসভার মেয়র পারিষদ অভিজিৎ ঘটকের নেতৃত্বে খাঁচায় তোতাপাখি নিয়ে আসানসোলের বিএনআর মোড় থেকে একটি মিছিল শুরু হয়। সেটি বাজার পর্যন্ত যায়। বরাকর থেকেও তৃণমূলের একটি মিছিল কুলটি বিধানসভা এলাকা ঘোরে।

বিকেল ৪টে নাগাদ পাণ্ডবেশ্বরের হরিপুর মোড় লাগোয়া ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে প্রায় আধ ঘণ্টা অবরোধ করে পথসভা হয়। ছিলেন তৃণমূলের ব্লক সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। খাসকাজোড়ায় পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক তথা আসানসোলের মেয়র জিতেন্দ্রবাবুও প্রতিবাদসভা করেন।

প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন হয় খনিতেও। এ দিন সকাল ৯টা থেকে ঘণ্টাখানেক সাতগ্রামে ইসিএলের পিওর সিহারশোল কোলিয়ারির উৎপাদন বন্ধ করে বিক্ষোভ দেখায় কেকেএসসি। সকাল ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত কুনুস্তরিয়া এরিয়ার নর্থ সিহারশোল খোলামুখ খনি, কেন্দা এরিয়ার নিউকেন্দা কোলিয়ারির ৪ নম্বর খনি, নিউকেন্দা খোলামুখ খনির উৎপাদনও বন্ধ করে প্রতিবাদ জানায় তারা।

বিজেপি-র জেলা সভাপতি লক্ষ্মণ ঘোড়ুইয়ের অভিযোগ, ‘‘রাজ্যে দু’রকম আইন রয়েছে। একটি তৃণমূলের জন্য, অন্যটি বিরোধীদের জন্য। বিরোধীরা বন্‌ধ-অবরোধ করলে বাধা দেওয়া হয়। অথচ, রাতভর তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা পুলিশের সামনে নানা জায়গায় অবরোধ করে মানুষকে বিপাকে ফেললেন।’’ তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি উত্তমবাবুর পাল্টা বক্তব্য, ‘‘বিজেপি-র কথা আর কেউ শুনছেন না। কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে দেশ বাঁচানোর লড়াইয়ে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে মানুষ যোগ দিয়েছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Unrest TMC Protest CBI
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE