Advertisement
১১ মে ২০২৪
Dengue

৯২ শতাংশ ডেঙ্গি কম, সাফল্য ত্রিফলা রসায়নেই 

রাজ্যে ২০১৯ সালের ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত নথিভুক্ত ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৫৬,২৬৯।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

প্রদীপ্তকান্তি ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২০ ০৪:২৫
Share: Save:

পরিকল্পনা। নজরদারি। সমন্বয় ।

ত্রিফলা মন্ত্রে ভর করে গত বারের তুলনায় রাজ্যে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা কমল ৯২ শতাংশ।

রাজ্যে ২০১৯ সালের ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত নথিভুক্ত ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৫৬,২৬৯। আর চলতি বছরে তা এক লাফে কমেছে ৯২ শতাংশ। বর্তমান পরিসংখ্যান অনুসারে, ডেঙ্গি রোধে সাফল্যের ব্যাট তুলে বঙ্গজনতার অভিনন্দন গ্রহণ করার পথে অনেকাংশে দফতর অগ্রসর হয়েছে বলে দাবি পুর কর্তা-আধিকারিকদের। ২০২০ সালের ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত ৪৪২৪ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন বলে নথিভুক্ত। ডেঙ্গি প্রতিরোধে চলতি বছর নোডাল হিসেবে কাজ করেছিল পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর।

কী ভাবে এল সাফল্য?

প্রথমত, অতীতের ত্রুটি-বিচ্যুতির যাতে পুনরাবৃত্তি না হয়, সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে পরিকল্পনা তৈরি করে পুর দফতর। একটি ওয়েব-নির্ভর অ্যাপ তৈরি করা হয়। তার মাধ্যমে ডেঙ্গি প্রতিরোধে একেবারে তৃণমূল স্তরের সঙ্গে সমন্বয় রাখে দফতর। তার ফলে বাড়ি বাড়ি যাওয়া (হাউস টু হাউস) টিমের সদস্যরা ডেঙ্গির মশা জন্মানোর কোনও বিপজ্জনক পরিবেশ দেখতে পেলে তা জানিয়েছে ভেক্টর কন্ট্রোল টিমকে (ভিসিটি)। দ্রুত পদক্ষেপ করতে পেরেছে ভিসিটি। এই দু’টি টিমের মূল কর্মীর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রাখতেন পুর দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মী-আধিকারিকরা। ফলে ডেঙ্গি প্রতিরোধের কাজকর্ম নিয়ে কোনও পদক্ষেপের প্রয়োজন পড়লে সরাসরি দুই টিমের মূল কর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ করে নির্দেশ দিতে পারতেন তাঁরা। কারণ, অতীতে দেখা গিয়েছে, বাড়ি বাড়ি যাওয়া টিমের সদস্যরা কিছু পুরসভায় জানালেও নানা কারণে পদক্ষেপ করতে গড়িমসি হত। সে কারণে সমন্বয় ঠিক রাখতে এ বার আগেভাগে ওই দুই টিমের মূল কর্মীর বিস্তারিত তথ্য পুর দফতর নিয়ে রেখেছিল। যা এলাকায় নজরদারি চালাতে সহায়ক হয়েছিল।

দ্বিতীয়ত, ডেঙ্গি প্রতিরোধের কাজে জেলাভিত্তিক নোডাল হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল দফতরের যুগ্ম সচিব পর্যায়ের আধিকারিকদের। উত্তর ২৪ পরগনার জন্য অবশ্য একাধিক আধিকারিক দায়িত্বে ছিলেন। একই সঙ্গে, সেচ, জনস্বাস্থ্য, শিক্ষা দফতরের সঙ্গে সমন্বয়েও ছিলেন ‘সিনিয়র’ আধিকারিকরা। তাতে জেলা এবং ওই সব দফতরের অধীনে থাকা এলাকা, প্রতিষ্ঠানের নজরদারি এবং পরিকল্পনা তৈরিতে সুবিধা হয়েছিল। যা ডেঙ্গি রোধে সাফল্যের অন্যতম রসায়ন বলে মনে করছেন পুর দফতরের কর্তা-আধিকারিকরা। বিভিন্ন পুর এলাকার খালে ময়লা ফেলার অভিযোগ ওঠে স্থানীয়দের কারও কারও বিরুদ্ধে। তা নিয়মিত পরিষ্কার করার জন্য পদক্ষেপ করতে সেচ দফতরের সঙ্গে সমন্বয় করে নজরদারি চালায় পুর কর্তৃপক্ষ। অন্য বছর উত্তর ২৪ পরগনার ডেঙ্গির প্রাদুর্ভাবে নাম জড়ায় কেষ্টপুর লাগোয়া বাগজোলা খালের। এ বার তাই ওই খালের নজরদারিতে বাড়তি জোর দিয়েছিল পুর দফতর। যা কাজে এসেছে বলে দাবি। তাই অন্য বারের থেকে কয়েক গুণ ভাল রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার ডেঙ্গি পরিস্থিতি, তেমনই মত পুর দফতরের। তবে ওই জেলার বিধাননগর পুর এলাকার কোনও কোনও অংশ নিয়ে সম্পূর্ণ চিন্তা মুক্ত হতে পারেননি পুর দফতরের কর্তা-আধিকারিকরা। সঙ্গে শ্রীরামপুর পুরসভা এবং হাওড়ার অল্প অংশ নিয়ে এখনও পুরোপুরি উদ্বেগ কাটাতে পারেননি তাঁরা।

জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ভিসিটি-র নির্ধারিত ২৮ রাউন্ড পরিদর্শনের কাজ শেষ হয়েছে। তবে বাড়ি বাড়ি যাওয়া টিমের নির্ধারিত ১০ রাউন্ডের বাকি রয়েছে দু’বার পরিদর্শন। সঙ্গে ২০ সেপ্টেম্বর থেকে রাজ্যের বিভিন্ন পুর এলাকায় শুরু হওয়া ‘ডেঙ্গি বিজয় অভিযান’-ও সাফল্যের পিছনে ভূমিকা নিয়েছে বলে মনে করেন পুর দফতরের কর্তা-আধিকারিকরা। তাঁদের মতে, ‘‘যাঁর যা দায়িত্ব ছিল, তিনি তা পালনে চেষ্টার কসুর করেননি। সবাই মিলে চেষ্টা করাতে সাফল্য এসেছে। এটা টিম এফর্ট।’’ ডেঙ্গি প্রতিরোধের কাজকর্ম সামলায়, দেখাশোনা করে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের অধীনে থাকা রাজ্য নগরোন্নয়ন সংস্থা (সুডা)।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dengue Coronavirus in West Bengal Health Department
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE