পাখাশিল্পী: তালপাতার পাখা তৈরিতে ব্যস্ত সীতারামবাবু। —নিজস্ব চিত্র।
গরম পড়তেই মনে পড়ে তার কথা। কারণ গরম তাড়াতে তার জুড়ি মেলা ভার। তার মানে গ্রামগঞ্জের চিরাচরিত তালপাতার তৈরি পাখার।
গরম পড়ার সঙ্গে সঙ্গে শুধু গ্রাম-মফস্সলে নয়, শহরেও চাহিদা থাকে চালপাতার পাখার। এমনকী বৈদ্যুতির পাখা, এসি-র রমরমরা পরেও। তবে আগের তুলনায় সেই চাহিদা ক্রমশই ক্ষীণ হয়ে এসেছে। আর সেই কারণেই এক সময় গরম পড়ার আগে থেকে যে পাখাগ্রামে ব্যস্ততা দেখা যেত এখন আর তা দেখা যায় না। পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাট ব্লকের গোবর্ধনপুর গ্রাম। এক সময় গোটা গ্রামজুড়ে প্রচুর পাখা শিল্পী ছিলেন। এখানে তৈরি পাখার কদর ছিল সর্বত্র। শহরেও চাহিদা ছিল বেশি। যে কারণে গ্রামের নাম বলতে গেলে অনেকেই পাখাগ্রাম বলে পরিচয় দিতেন গোবর্ধনপুরের। চৈত্র থেকে বৈশাখ, জৈষ্ঠ্য এই তিন মাস হাতপাখারা বাজার। কিন্তু আগের চেয়ে চাহিদা ক্রমশ কমে যাওয়ায় এখন উৎপাদন কমেছে। কমেছে পাখাশিল্পীও। অনেকেই চলে গিয়েছেন ভিন্ন পেশায়। যে দু’একজন শিল্পী রয়েছেন তাঁরাই কোনওরকমে বংশানুক্রমে চলে আসা এই ব্যবসা ধরে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এই সব শিল্পীরা জানালেন, একে বাজার কমে গিয়েছে। তার উপর কমে যাচ্ছে তালগাছ। গাছ কেটে নেওয়ার জন্য মিলছে না তালপাতা। তার উপর তালগাছ থেকে পাতা কাটার জন্য শ্রমিক আগের মতো মিলছে না। তালপাতার দামও আগের তুলনায় বেড়েছে। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই বে়ড়েছে পাখার দামও। অনেকেই এখন তালপাতার পাখার বদলে প্লাস্টিকের তৈরি পাখা ব্যবহার করছেন। সব মিলিয়ে পাখা শিল্পের সঙ্গিন অবস্থা বলে জানালেন গোবর্ধনপুরের পাখাশিল্পী সীতারাম দাস।
সীতারামবাবুর কথায়, ‘‘বাবার হাত ধরে এই ব্যবসায় এসেছিলাম। তখন বয়স মাত্র দশ। এখন আর পাখার সেই সুদিন নেই। তবু বাপ-ঠাকুরদার ব্যবসা বলে কোওরকমে টিকিয়ে রেখেছি।’’ তিনি জানান, গোটা গ্রামে এখন পাখাশিল্পী মাত্র চারজন।
সীতারামবাবু জানান, একটা বড়গাছের তালপাতায় দু’টি পাখা তৈরি হয়। ছোট চারাগাছের পাতায় একটি হাতপাখা হয়। ভাল মানের হলে পাখার দাম পড়ে ২০ টাকা। সাধারণ তালপাতার পাখা ১০ টাকা পড়ে। সারাদিনে ২০ থেকে ২৫টি পর্যন্ত পাখা তৈরি করেন। তবে বাজারে কম পয়সার প্লাস্টিক পাখার প্রচলন বাড়ায় তালপাতার পাখা তৈরির সঙ্গে সঙ্গে প্লাস্টিকের পাখাও তৈরি করছেন সীতারাম বাবু। তাঁর কথায়, ‘‘কী করব, সংসার চালাতে হবে তো!’’
গরমের মধ্যে ঘামতে ঘামতেই পাখা তৈরি করে চলেন সীতারামবাবু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy