সেই আশ্রম। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়
রাতের খাওয়া শেষ হলেই ভয়ে সিঁটিয়ে থাকত ওরা। জানত, এ বার ডাক পড়বে। কোন দিন কোন জনের ডাক আসবে, জানত না ছোট ছোট মেয়েরা। কিন্তু সেই ডাক উপেক্ষা করার সাহস ছিল না কারও। ওজর-আপত্তি তুললে জুটত মারধর।
কয়েক বছর ধরে জগদ্দলের পানপুরের একটি আবাসিক আশ্রমে নাবালিকাদের উপরে এ ভাবেই যৌন নিগ্রহ চলছিল বলে অভিযোগ। শুক্রবার রাতে সেই অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে আশ্রমের আধিকারিক এবং তাঁর সহকারীকে। পুলিশ জানায়, ধৃত জিন কিঁউ বার্ক উত্তর কোরিয়ার নাগরিক। উনিশ বছর ধরে তিনি আশ্রমের দায়িত্বে আছেন। ধরা পড়েছে দীপু সরকার নামে এক যুবক। পুলিশ তাঁদের বিরুদ্ধে পকসো আইনে মামলা রুজু করেছে।
শনিবার ধৃতদের বিশেষ আদালতে তোলার কথা ছিল। কিন্তু বিচারক না থাকায় সাধারণ আদালতের এজলাসেই তোলা হয়। বিচারক দু’জনকেই পাঁচ দিনের জন্য জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। সোমবার ফের তাঁদের নিজেদের হেফাজতে চেয়ে বিশেষ আদালতে আবেদন করবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। বার্ক কোন ভিসায় এত দিন ধরে এ দেশে থেকে গেলেন, তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
পানপুরের আশ্রমটির নাম ‘ওয়েজলিন মিশন আশ্রম।’ প্রতিষ্ঠাতা বার্ক নিজেই। একটি ট্রাস্টি বোর্ড তৈরি করে তিনি সেটি চালাচ্ছিলেন। পাশেই রয়েছে একটি স্কুল। সেখানকার ৩৬ জন কিশোরী আশ্রমের আবাসিক। বেশির ভাগই উত্তর ২৪ পরগনার জেলার বাসিন্দা। হয় অনাথ, না হলে হতদরিদ্র পরিবারের।
কী ভাবে যৌন নিগ্রহের কথা সামনে এল? পুলিশ জানিয়েছে, কয়েকজন কিশোরী দিন কয়েক আগে বিষয়টি জানিয়েছিল স্কুলের এক শিক্ষককে। তিনি জেলা সমাজকল্যাণ দফতরে জানান। দফতরের আধিকারিক অমরনাথ রায় খবর দেন পুলিশকে। বৃহস্পতিবার ঘটনার কথা শুনে জগদ্দল থানা আশ্রমের সামনে সাদা পোশাকের পুলিশ মোতায়েন করে। একজন মহিলা কনস্টেবলকে সাদা পোশাকে পাঠিয়ে কথা বলা হয় আবাসিক ছাত্রীদের সঙ্গে।
বহু তথ্য সামনে আসে। এর পরেই শুক্রবার অমরনাথ থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। পুলিশের দাবি, কোনও ভাবে বিষয়টি আঁচ করতে পেরেছিলেন বার্ক। তিনি শুক্রবার রাতেই গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যেতে চেয়েছিলেন আশ্রম থেকে। কিন্তু পুলিশের নজর ছিল। আশ্রম থেকে রাতেই ধরা হয় বার্ক ও দীপুকে।
ছাত্রীরা পুলিশকে জানিয়েছে, বার্ককে সাহায্য করত দীপু। রাত হলে সে-ই কিশোরীদের জিনের ঘরে ডেকে নিয়ে যেত। তারপরে চলত যৌন নিগ্রহ। কিন্তু এত দিন তারা মুখ বুজে ছিল কেন? পুলিশের কাছে ছাত্ররা দাবি করেছে, দীপু তাদের হুমকি দিত, কাউকে কিছু বললে প্রাণে মেরে ফেলা হবে। আশ্রম থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার ভয়ও দেখানো হত। কোথাও যাওয়ার জায়গা না থাকায় মেনে নিতে বাধ্য হত ছোট ছোট মেয়েরা। কিন্তু অত্যাচার ক্রমশ মাত্রা ছাড়াতে থাকায় এক সময়ে মুখ খুলতে বাধ্য হয়েছে বলে পুলিশকে জানিয়েছে ছাত্রীরা। আশ্রমের কয়েকজন কর্মীও জানিয়েছেন, ছাত্রীদের উপরে যৌন নিগ্রহের কথা তাঁদের অজানা নয়। কিন্তু তাঁদেরও প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy