প্রতীকী ছবি।
পূর্ব রেলের সদর দফতর, ফেয়ারলি প্লেস। শনিবার সময়মতোই পৌঁছেছিলেন রেল কর্তারা। সেখানে সদ্য নিযুক্ত রেলমন্ত্রী পীযূষ গয়ালের সঙ্গে বৈঠক ছিল তাঁদের। পূর্ব, দক্ষিণ-পূর্ব ও মেট্রো, তিন রেলেরই ছোট-বড় কর্তারা হাজির হয়েছিলেন ওই বৈঠকে।
শুরুতেই নিজ নিজ জোনের তরফে বিভিন্ন কাজের রিপোর্ট ‘স্লাইড শো’ করে দেখাতে শুরু করেছিলেন রেল কর্তারা। কিছু পরেই পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব রেলের ট্রেনগুলি ঠিক কতটা সময় মেনে চলছে, তার হিসেব চেয়ে বসেন মন্ত্রী। দুই জোনের তরফেই দেখানো হয়, ৯৭ শতাংশেরও বেশি ট্রেন সময়ে চালান তাঁরা। রেলের অন্দরের খবর, সব দেখে মন্ত্রী হাসি মুখে বলে ওঠেন, ‘‘এত খুব ভাল। তা হলে বাকি যে ২ বা ৩ শতাংশ ট্রেন সময়ে চলানো যায়নি, সেই সব যাত্রীকে টাকা ফেরত দেওয়া হোক। এতে তো রেলের ভাবমূর্তি আরও অনেকগুণ উজ্জ্বল হবে।’’ মন্ত্রীর মুখ থেকে আচমকা এ কথা শুনে তাঁর পাশে বসা তিন জোনের অধিকর্তা তো বটেই, সামনের সারিতে বসা বিভিন্ন দফতরের আধিকারিকেরা কিছুটা অস্বস্তিতে পড়ে যান। মন্ত্রী নির্বিকার। তিনি আবার বলে ওঠেন, ‘‘টিকিটের দাম ফেরত দিতে আর কত টাকা লাগবে? ১০০ কোটি? ওটা না হয় বোর্ডই খরচ করবে।’’ এমন কথা শুনে একেবারেই চুপ করে যান রেলকর্তারা। একটু থেমে মন্ত্রী ফের রেলকর্তাদের বলেন, ‘‘আপনাদের হিসেব ঠিক নয়, তা হলে যাত্রীদের এত অভিযোগ আসছে কেন?’’
ঘটনা হল, দীর্ঘ দিন ধরেই প্রায় সর্বত্র অধিকাংশ ট্রেন এক থেকে তিন ঘণ্টা দেরি করে চলছে। যাত্রীরা তিতিবিরক্ত। অথচ বারবার অভিযোগ জানিয়ে ফল তো হচ্ছেই না, উল্টে রেল কর্তারা মাঝে মধ্যেই দাবি করছেন, ‘‘শতকরা ৯৭ শতাংশ ট্রেনই সময় মতো চালানো হচ্ছে।’’ কিন্তু এই প্রথম রেলকর্তাদের ওই হিসেবকে উড়িয়ে যাত্রীদের অভিযোগকেই সত্যি বলে সিলমোহর দিয়েছেন রেলমন্ত্রী।
ইন্টারনেট থেকে পাওয়া তথ্য আর পরিসংখ্যান বলছে, লোকাল ট্রেন তো বটেই, পূর্ব আর দক্ষিণ-পূর্ব মিলিয়ে প্রথম সারির কমপক্ষে ১৫টি ট্রেন নিয়মিত দেরিতে চলে। আর ফি বছর শীতে কুয়াশার জন্য উত্তর ভারতের ট্রেনগুলি ৫ থেকে ১৫ ঘণ্টা পর্যন্ত দেরিতে চলে।
এ নিয়ে কী বলছেন রেল কর্তারা? তাঁদের বক্তব্য, গত ৬৫ বছরে নতুন লাইনের ক্ষেত্রে পরিকাঠামো বেড়েছে মাত্র ২৩ শতাংশ। আর নেতাদের সৌজন্য ফি বছর ট্রেন বাড়ায় ৬৫ বছরে কামরা বেড়েছে ২৫০ শতাংশ। ফলে প্রতিটি সেকশনে লাইনের ক্ষমতার চেয়ে প্রায় ১৫০ শতাংশ বেশি ট্রেন চালাতে হচ্ছে। আর তাতেই হচ্ছে দেরি। রেল কর্তাদের কথায়, একটি ট্রেন মাঝ পথে কোথাও কোনও কারণে একটু বেশি সময় দাঁড়ালেই তার পিছন পিছন আসা ট্রেনগুলিও ওই দেরির চক্করে পড়ে যাচ্ছে। রেল কর্তাদের দাবি, পরিকাঠামো না বাড়ালে ট্রেনের দেরি ঠেকানো যাবে না। তবে সঠিক সময়ে ট্রেন চালানোর জন্য মন্ত্রীর চটজলদি পরামর্শ, রেলের টাইম টেবিলে পরিবর্তন করা হোক। প্রয়োজনে মালগাড়ি এবং যাত্রিবাহী ট্রেন আলাদা আলাদা সময়ে চালাতে হবে। আর শীতে ঠিক মতো ট্রেন চালানোর জন্য ইঞ্জিনে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ‘ফগ লাইট’ লাগানোর নিদানও দিয়েছেন গয়াল ।
তবে খোদ মন্ত্রীর এই দাওয়াইতে রেলে ‘লেট’ রোগ কতটা নির্মূল করা যাবে, সেটাই এখন দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy