চেন্নাইয়ের দুর্যোগ এখনও কাটেনি। তবে কপাল খুলতে শুরু করেছে দক্ষিণবঙ্গের!
গত কয়েক দিনের মেঘলা আকাশ কেটে শুক্রবারই রোদের দেখা পেয়েছে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গ। দিনের তাপমাত্রাও খানিকটা বেশি মালুম হয়েছে। আকাশ পরিষ্কার থাকায় রাতে তাপমাত্রা নামতে শুরু করেছে। টের পাওয়া গিয়েছে ঠান্ডা হিমেল হাওয়ার। বৃহস্পতিবারের তুলনায় এক ধাক্কায় শুক্রবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি কমে গিয়েছে।
হাওয়া অফিসের খবর, বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২২.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শুক্রবার রাত ১৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি নেমে এসেছে। আবহবিদেরা জানান, মেঘ কাটতেই উত্তুরে হাওয়ার মুখে বাধা দুর্বল হয়ে গিয়েছে। তার জেরেই রাতের তাপমাত্রা কমছে। বাতাসে শীত-শীত ভাবটা ফিরে আসছে।
কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে শীত হাজির হয় উত্তর ভারত থেকে বয়ে আসা কনকনে উত্তুরে হাওয়ার হাত ধরে। আবহাওয়া দফতর সূত্রের খবর, অক্টোবর মাসের অর্ধেক দিন পেরোলেই ভূমধ্যসাগরীয় এলাকা থেকে ঠান্ডা, ভারী হাওয়া (পশ্চিমী ঝঞ্ঝা) আফগানিস্তান, পাকিস্তান হয়ে কাশ্মীরে বয়ে আসে। তার ফলে কাশ্মীর এবং সংলগ্ন উত্তর ভারতের পাহাড়ি এলাকায় বৃষ্টি-তুষারপাত হয়। সেখান থেকেই ঠান্ডা উত্তুরে হাওয়া বয়ে আসে দক্ষিণবঙ্গে।
এ বারও অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে গোটা কয়েক পশ্চিমী ঝঞ্ঝা বয়ে আসায় দক্ষিণ হিমেল হাওয়া বয়ে আসতে শুরু করেছিল। কিন্তু নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকেই উত্তর ভারতে ঝঞ্ঝার খরা দেখা দেয়। আবহবিদেরা বলছেন, প্রশান্ত মহাসাগরে জলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি (এল নিনো)-র ফলে বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ুর মতিগতি বিগড়ে গিয়েছে। তার ফলে একের পর এক ঘূর্ণাবর্ত-নিম্নচাপ তৈরি হয়েছে। বঙ্গোপসাগরের পরিমণ্ডল বিগড়ে গিয়ে উত্তুরে হাওয়ার মুখে বাধা তৈরি করেছে। এবং এর ফলেই নভেম্বরের শেষ থেকে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের হাওয়ায় হিমেল ভাব উধাও হয়ে গিয়ে ভ্যাপসা গরম ফিরে এসেছিল।
শুক্রবারই কলকাতার গঙ্গার পাড়ে একটি সরকারি অফিসের কর্তা বলছিলেন, ‘‘আগে নভেম্বর গোড়া থেকেই অফিসে ফ্যান বন্ধ করে রাখতে হত। এ বার দেখছি, ডিসেম্বরেও ফ্যান না চালিয়ে উপায় নেই।’’ কেউ কেউ নভেম্বরের গোড়ায় রাতে গায়ে চাদর চাপিয়ে ঘুমোতেন। এ বার ডিসেম্বরের প্রথম দিনে রাতে ফ্যান চালাতে হয়েছে তাঁদের। ঠান্ডা-গরম মিলিয়ে অসুস্থ হয়েও পড়ছেন অনেকে। গলায় খুশখুশে কাশি, সর্দি, জ্বর-জ্বর ভাব নিয়েই রাস্তায় বেরোচ্ছেন লোকজন।
এ বারে কী হতে চলেছে?
আবহবিদদের ব্যাখ্যা, শীত জাঁকিয়ে বসতে গেলে আকাশ পরিষ্কার থাকতে হবে। দিনে চড়া রোদ ওঠার ফলে মাটি গরম হবে এবং রাতে আকাশ পরিষ্কার থাকায় সেই তাপ দ্রুত বিকিরিত হয়ে তাপমাত্রা নামিয়ে দেবে। দিন ও রাতের তাপমাত্রার ফারাক যত বাড়বে, ততই শীত মালুম হবে। তবে সেই ফারাক যে তড়িঘড়ি হবে না, তা-ও জানিয়ে দিচ্ছেন হাওয়া অফিসের বিজ্ঞানীরা। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বলছেন, উত্তুরে হাওয়ার বাধা সরে গিয়েছে ঠিকই। তবে এত দিন যে মেঘের কাঁটা ছিল, তা পুরোপুরি সরতে আরও দিন দুয়েক লাগবে। সোমবার থেকে শীত-শীত ভাবটা আরও বেশি করে মালুম হবে। এবং এই তাপমাত্রার পতনের জেরেই ধীরে ধীরে শীত জাঁকিয়ে বসতে পারে। কবে?
‘‘শীত জাঁকিয়ে বসতে বসতে ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ পেরিয়ে যেতে পারে। যদি না ফের বঙ্গোপসাগরে নতুন কোনও বাধা হাজির হয়,’’ বলছেন এক আবহবিজ্ঞানী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy