Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

তৃণমূলের ভাল লোকেদের বাড়ি যান: সূর্যকান্ত

ক’দিন আগেই বাঁকুড়ার সমাবেশ থেকে তৃণমূলের ভাল লোকেদের কাছে টানতে বলেছিলেন সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য সূর্যকান্ত মিশ্র। জঙ্গলমহলের আর এক জেলা পশ্চিম মেদিনীপুরের সমাবেশ থেকে সেই সুরেই এ বার তৃণমূলের ভাল লোকেদের বাড়ি বাড়ি যাওয়ার পরামর্শ দিলেন তিনি। রবিবার সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্মেলনের প্রথম দিনে মেদিনীপুরে সমাবেশের আয়োজন ছিল।

মেদিনীপুর কলেজ-মাঠে সিপিএমের জেলা সম্মেলনে বক্তা সূযর্কান্ত মিশ্র। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল

মেদিনীপুর কলেজ-মাঠে সিপিএমের জেলা সম্মেলনে বক্তা সূযর্কান্ত মিশ্র। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:০৯
Share: Save:

ক’দিন আগেই বাঁকুড়ার সমাবেশ থেকে তৃণমূলের ভাল লোকেদের কাছে টানতে বলেছিলেন সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য সূর্যকান্ত মিশ্র। জঙ্গলমহলের আর এক জেলা পশ্চিম মেদিনীপুরের সমাবেশ থেকে সেই সুরেই এ বার তৃণমূলের ভাল লোকেদের বাড়ি বাড়ি যাওয়ার পরামর্শ দিলেন তিনি।

রবিবার সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্মেলনের প্রথম দিনে মেদিনীপুরে সমাবেশের আয়োজন ছিল। সেখানেই সূর্যবাবু বলেন, “বাংলা থেকে বর্গিদের (তৃণমূল) তাড়ানোর সময় এসেছে। এই নয় সকলকে তাড়াবেন। যাঁরা জেলে-টেলে যাবেন, যাবেন। কিন্তু যাঁরা ওদের ঝান্ডা বইতেন, সেই সব শ্রমিক, খেটে খাওয়া মানুষকে লাল ঝান্ডার তলায় আনতে হবে। তাঁদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বলতে হবে, লাল ঝান্ডা যদি মাথা তুললে আপনি নিশ্চিন্তে বাড়িতে থাকতে পারবেন। যদি তৃণমূল করতে চান, স্বাধীন ভাবে করতে পারবেন।”

খাগড়াগড়, সারদা-কাণ্ডে তৃণমূল এখন নাস্তানাবুদ। শাসকদলের সঙ্কটের এই পরিস্থিতিই যে সিপিএমের ‘ঘুরে দাঁড়ানো’র আদর্শ সময়, এ দিন দলের কর্মী-সমর্থকদের সেই বার্তাও দিয়েছেন সূর্যবাবু। তাঁর কথায়, “মনে রাখবেন, এখন সময় ইঞ্চি ইঞ্চি করে এগোনোর। ওদের (তৃণমূল) আজ আপনাদের আটকানোর সাহস নেই।”

পরিস্থিতি যে বদলাচ্ছে, তা বোঝাতে সূর্যবাবু বলেন, “কলকাতা থেকে আসতে আসতে দেখছিলাম, রাস্তায় লাল ঝান্ডা আছে। আর কোনও ঝান্ডা নেই! ওদের এখন ঝান্ডা পোঁতার লোকই নেই। আপনাদের আটকানোর সাহস নেই। লাল ঝান্ডা এগোচ্ছে, তৃণমূল পিছোচ্ছে।” সমাবেশে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুকেও বলতে শোনা যায়, “প্রতিবাদে মুখর হতে হতে প্রতিরোধের ব্যুহ তৈরি করে ওদের জনবিচ্ছিন্ন করতে হবে।”

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সিপিএমের ২২তম সম্মেলন উপলক্ষে রবিবার মেদিনীপুর কলেজ মাঠের সমাবেশে ভিড়ও হয়েছিল যথেষ্ট। সিপিএম নেতৃত্বের দাবি, সব মিলিয়ে প্রায় ৫০ হাজার জমায়েত হয়েছিল। যদিও পুলিশের একটি সূত্রের বক্তব্য, লোক হয়েছিল হাজার কুড়ি। তবে চোখে দেখে বোঝা যাচ্ছিল ২০১২ সালে এই মাঠেই সিপিএমের শেষ সমাবেশে যে লোক হয়েছিল, এ দিনের ভিড় তাকে ছাপিয়ে গিয়েছে। ভিড় দেখে উজ্জীবিত সিপিএম নেতৃত্বও। দলের জেলা সম্পাদক দীপক সরকার বলেন, “এই সমাবেশ প্রমাণ করে সন্ত্রাস শেষ কথা বলে না, জনগণই শেষ কথা বলেন।”

২০১১-র বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে জঙ্গলমহলের তিন জেলা বাঁকুড়া, পুরুলিয়া এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের ক্রমশ অস্তিত্ব হারিয়েছে সিপিএম। পঞ্চায়েত নির্বাচন থেকে গত লোকসভা ভোট, প্রতিটিতেই মুখ থুবড়ে পড়েছে দল। কিন্তু এ বার এই তিন জেলাতেই সম্মেলন পর্বের সমাবেশে ভিড় দেখে সিপিএম নেতৃত্ব তৃপ্ত। তাঁরা মনে করছেন, ধীরে ধীরে হলেও জঙ্গলমহলে পায়ের তলার জমি ফিরে পাচ্ছে দল। এ দিন মাওবাদী-তৃণমূল যোগের অভিযোগও ফের টেনে আনেন বিমানবাবু। তিনি বলেন, “তৃণমূল-মাওবাদী যোগসাজশে সিপিএমের উপর একের পর এক হামলা হয়েছে। এই জেলাতেই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে খুন করার পরিকল্পনা হয়েছিল। তৃণমূল দুঃখপ্রকাশ করেনি। হামলা-আক্রমণের নিন্দাও করেনি।”

সিপিএমের সমাবেশে ভিড় নিয়ে অবশ্য চিন্তিত নন তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের জেলা সভাপতি দীনেন রায় বলেন, “ওদের কিছু কর্মী-সমর্থক আছেই। তাই কিছু লোক হয়েছে। তবে মানুষ ওদের পাশে নেই!” বিজেপির জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায়ের মতে, “ভিড় আর ভোটকে এক করে দেখলে ভুল হবে। রাজ্যের মানুষ এখন বিজেপিকে বিকল্প হিসেবে দেখছেন।”

গ্রামাঞ্চলেও এই মুহূর্তে অনেকে বিজেপিতে নামও লেখাচ্ছেন। এ দিনের সভায় তাই বিজেপিকেও বিঁধতে ছাড়েননি সিপিএম নেতৃত্ব। বিমানবাবু বলেন, “বিজেপিকে ছাড়া যাবে না। তৃণমূল যেমন বদলা নয়, বদল চাই এই কথা বলে এসে বদলা নিতে শুরু করল, বিজেপিও তেমন সুদিন আসবে বলে এসে বলতে শুরু করল, এখন তেতো বড়ি খেতে হবে! তৃণমূলকে ক্ষমা করা যায় না। বিজেপিকেও ক্ষমা করা যায় না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

suryakanta mishra cpm tmc district meeting
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE