Advertisement
১১ মে ২০২৪

মালদহ কেন স্তব্ধ বিজেপির ডাকে, জল্পনা

মালদহ জুড়ে তাঁর চেনা প্রতাপে কি ক্রমেই ভাঁটার টান? শনিবার, বিজেপি-র ডাকা মালদহ ও ডুয়ার্স বনধের সকাল থেকে স্তব্ধ মালদহ শহরের চেহারা এমনই প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে মন্ত্রী তথা শাসক দলের দাপুটে নেতা কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরীকে। তবে, বিরোধীদের জটলা থেকে উঠে আসছে অন্য এক কটাক্ষ, বিজেপি-র বন্ধ সফল করতে কৃষ্ণেন্দুর ‘প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয়’ নেই তো?

শনিবার মালদহ শহরে বিজেপির মিছিল।  ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়।

শনিবার মালদহ শহরে বিজেপির মিছিল। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:০০
Share: Save:

মালদহ জুড়ে তাঁর চেনা প্রতাপে কি ক্রমেই ভাঁটার টান? শনিবার, বিজেপি-র ডাকা মালদহ ও ডুয়ার্স বনধের সকাল থেকে স্তব্ধ মালদহ শহরের চেহারা এমনই প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে মন্ত্রী তথা শাসক দলের দাপুটে নেতা কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরীকে।

তবে, বিরোধীদের জটলা থেকে উঠে আসছে অন্য এক কটাক্ষ, বিজেপি-র বন্ধ সফল করতে কৃষ্ণেন্দুর ‘প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয়’ নেই তো?

দিন কয়েক আগেই বিষোদ্গার করে দল ছেড়ে বিজেপি’তে যোগ দিয়েছেন রাজ্যের এক মন্ত্রী। বিজেপি-র দাবি, শাসক দলের আরও কয়েকজন মন্ত্রী পা বাড়িয়ে রয়েছেন তাদের দিকে। দাবি, সেই ‘কয়েকজন’-এর তালিকায় রয়েছেন কৃষ্ণেন্দুবাবুও। সেই আবহে এ দিনের সফল মালদহ বন্ধ ‘বার্তাবহ’ বলেই মনে করেছেন জেলা সিপিএম এবং কংগ্রেস নেতারা।

যা শুনে কৃষ্ণেন্দু অবশ্য বলছেন, “আমার প্রভাব কমছে কিনা তা মালদহের মানুষই জানেন। আর আমার দলত্যাগের ব্যাপারে কে কী বলছেন তার উত্তর আমার কাছে নেই।”

উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন কলেজে ছাত্র সংসদের নির্বাচন ঘিরে টিএমসিপি-র নাগাড়ে হামলার অভিযোগে এ দিন মালদহ ও ডুয়ার্সে বন্ধের ডাক দিয়েছিল বিজেপি। ডুয়ার্সের অন্যত্র বন্ধ বিক্ষিপ্ত ভাবে সফল হলেও মালদহ শহরে তার প্রভাব কতটা পড়বে তা নিয়ে সংশয় ছিল খোদ জেলা বিজেপি-র মধ্যেই। কিন্তু শনিবার সকাল থেকে বন্ধ দোকানপাট, সুনসান যানবাহনহীন রাস্তা দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন জেলা বিজেপি নেতারাই। তাঁদেরই এক জন মৃদু হেসে বলছেন, “বন্ধ সফল করতে আমরা যতটা না রাস্তায় নামলাম, তার চেয়ে বেশি চোখে পড়ল তৃণমূলের বন্ধ-ব্যর্থ করার ব্যাপারে গা ছাড়া মনোভাব।” জেলা বিজেপি সভাপতি শিবেন্দু শেখর রায় এই ‘সফল’ বন্ধের পিছনে

তাঁদের ‘নৈতিক জয়’কেই বড় করে দেখছেন। মালদহের বন্ধ সম্পর্কে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মন্তব্যও তাৎপর্যপূর্ণ, “খবর পেয়েছি, ওখানে বিক্ষিপ্ত ভাবে দু’একটা দোকান খোলা ছিল।”

মালদহে বন্ধ সফল করতে সকাল থেকেই রাস্তায় নেমেছিলেন বিজেপি কর্মীরা। ইংরেজবাজারের রথবাড়িতে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক কিছুক্ষণের জন্য অবরোধও করা হয়। শহরের বেশ কয়েকটি স্কুলে মিছিল করে গিয়ে বন্ধ রাখার আবেদনও জানান বিজেপি সমর্থকেরা। সব মিলিয়ে ব্যাহত জনজীবনের ছবিটা প্রকট হতেই সদলবলে মাঠে নামেন কৃষ্ণেন্দু। অনুগামীদের নিয়ে শহরের রাস্তায় মিছিল করেন তিনি। তবে লাভ হয়নি। খোলেনি দোকানপাট। তাঁদের মিছিল ফিরে যেতেই রাস্তা ফের ঝিমিয়ে পড়ে। জেলা শহরে তাঁর প্রভাব এমন হারিয়ে গেল কেন?

কৃষ্ণেন্দু যুক্তি দিচ্ছেন, “আসলে বন্ধের দিন ভাঙচুর হলে বিমার টাকা মেলে না। তাই কেউ ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি বের করতে চায় না। তা ছাড়া ইদানীং যে কেউ বন্ধ ডাকলে ব্যবসায়ীদের অনেকেই বাড়তি ছুটি কাটানোর মেজাজ ছেড়ে বেরতো চাননা।”

তাহলে মানুষকে অভয় দিয়ে জনজীবন স্বাভাবিক করতে তাঁর পথে নামায় কোনও লাভ হল না? গোমরা মুখে উত্তর এড়িয়ে গিয়েছেন মন্ত্রী। সিপিএমের জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্র অবশ্য কৃষ্ণেন্দুর রাস্তায় নামাকে কটাক্ষ করতে ছাড়ছেন না। বলছেন, “বন্ধে সব কিছু তো বন্ধই থাকে। তবু মন্ত্রীর পথে নামার ঘটনা অন্য বার্তা বহন করে!” কৃষ্ণেন্দুর ‘লোক দেখানো’ পথ পরিক্রমায় মালদহ জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারির কটাক্ষ, “ব্যাপারটা তাৎপর্যপূর্ণ!”

মালদহে তৃণমূলের নিরন্তর আকচাআকচির ঘটনা নতুন নয়। মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুবাবু ছাড়াও দফতরহীন অন্য এক মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র এবং জেলা সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেনের পারস্পারিক সম্পর্ক সামাল দিতে পারেননি খোদ দলনেত্রীও। এ দিন বিজেপি-র বন্ধ সফল হওয়ার পরে কৃষ্ণেন্দুর বিরুদ্ধে সরাসরি মুখ না খুললেও সাবিত্রী বলছেন, “আমি কলকাতায়। তাই বন্ধ কেন সফল হল বলতে পারব না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

bandh strike bjp malda
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE