দিন কয়েক আগে বেস্ট সেলিব্রিটি সিঙ্গারের পুরস্কার নিতে যখন মঞ্চে উঠছিলেন শ্রদ্ধা কপূর, সবার নজর ছিল তাঁরই দিকে।
স্মার্ট ক্রপড টপ, চুল টপ বান করে বাঁধা, প্যান্টস্যুট আর গলায় একটা স্টেটমেন্ট নেক-পিস— সঙ্গীতের সেই অ্যাওয়ার্ড শো-তে শ্রদ্ধা বুঝিয়ে দিলেন অ্যান্ড্রোজিনি স্টাইল শুধু পাশ্চাত্য ফ্যাশন সার্কিটই নয়, ভারতীয় ফ্যাশন সার্কিটেও কতটা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
বিদেশের ফ্যাশনে অ্যান্ড্রোজিনি-যুগ ডানা মেলেছে, কম দিন হল না। অ্যাঞ্জেলিনা জোলি তাঁর পোশাক চিন্তায় যে ভাবে মিলিয়েমিশিয়ে দিয়েছেন পুরুষ এবং নারী সত্তার অন্তর্নিহিত শক্তি, তা তো অকল্পনীয়! বাদ যাননি ‘টোয়াইলাইট’ খ্যাত অভিনেত্রী ক্রিস্টেন স্টুয়ার্টও। কালো রংয়ের স্যুট-জ্যাকেট, তার সঙ্গে মানানসই স্ল্যাকস আর বেশ ঝকঝকে লোফার এবং ভি-গলার সাদা সোয়েটারে ক্রিস্টেনও এখন এই ফ্যাশনের অন্ধ ভক্ত।
দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ফ্যাশন উইকে এই ফ্যাশন ট্রেন্ড অনেক দিন ধরেই জনপ্রিয়। কিন্তু এই শহরে কি বিশেষ কোনও ছাপ ফেলতে পেরেছে অ্যান্ড্রোজিনি স্টাইল?
ডিজাইনার ডুয়ো দেব-নীল-এর নীল জানালেন তাঁদের এ বারের স্প্রিং-সামার কালেকশনে দারুণ ভাবে নিয়ে আসছেন অ্যান্ড্রোজিনি পোশাক। ‘‘পোশাকের ক্ষেত্রে এই নারী-পুরুষ বিভাজনের বরাবরের বিরোধী আমরা। পোশাকের ক্ষেত্রে ফ্লুইডিটি-টা খুব জরুরি,’’ বলেন নীল। ওঁদের সংগ্রহে বাইক প্রিন্টের শাড়ি, জ্যাকেট বা ওভারসাইজড জ্যাকেটের তাই খুব রমরমা।
কিন্তু এ শহরে অ্যান্ড্রোজিনি ফ্যাশন কি শুধু সেলিব্রিটিরাই বেছে নিচ্ছেন? বয়সটাও তো একটা বিষয়। কলেজপড়ুয়া বা অল্পবয়সিরা যে এই স্টাইলটায় স্বচ্ছন্দ হবেন, তা তো বলাই বাহুল্য। নীল কিন্তু বললেন অন্য কথা। ‘‘এক ৫০ বছরের মহিলা এসেছিলেন
আমার কাছে। বললেন তাঁকে বাইক প্রিন্টের জাম্পস্যুট তৈরি করে দিতে। অর্ডার দিয়ে বানিয়ে নিয়ে গেলেন তিনি। বয়সটা তাই কোনও ব্যাপারই নয়। অ্যাটিটিউডটাই আসল।’’
সে কারণেই ওঁদের কালেকশনে উঁকি মারলেই পেয়ে যাবেন চে-গেভারা শাড়ি বা বাইক প্রিন্টের জ্যাকেট। এমনকী নানা মজাদার প্রিন্টের টি-শার্টও।
সদ্য পা-রাখা এই ফ্যাশন স্টেটমেন্ট কতটা প্রভাবিত করছে জেন ওয়াইদের? আইটি সেক্টরে কর্মরত সহেলি পুরকায়স্থ বললেন, ‘‘মাঝে মধ্যেই যে পোশাকগুলো পরি, সেটা কতটা ফেমিনিন বা কতটা ম্যাসকুলাইন, তা অত ভেবে দেখি না। সেটাকে অ্যান্ড্রোজিনি ফ্যাশন বলতেই পারেন। তবে আলাদা করে কোনও পোশাক কিনে পরিনি এখনও।’’
স্পা-ইনচার্জ তুর্নিশা চক্রবর্তী বা অ্যাড এজেন্সিতে চাকরি করা বিজয়িনী বন্দ্যোপাধ্যায় আবার প্রায়ই মাতেন অ্যান্ড্রোজিনি ফ্যাশনে। বিজয়িনী বললেন, ‘‘আমি ব্র্যান্ডেড আউটলেটগুলো থেকে কিনি পোশাকগুলো। চিনোস আর হাই-ওয়েস্টেড প্যান্ট বেশি পরি।’’ তুর্নিশার আবার পছন্দ ওভারসাইজড জ্যাকেট। কখনও বা চওড়া কাঁধের কোট-ও। ‘‘আমার এক বন্ধু তো রিসেন্টলি একটা পার্টিতে আমাকে ব্রড শোল্ডারড কোট পরা দেখে চমকে গিয়েছিল,’’ হাসতে হাসতে জানান তুর্নিশা।
শহরের আর এক ডিজাইনার অগ্নিমিত্রা পল যেমন বললেন, ‘‘আমি বেশ কিছু ওভারসাইজড জ্যাকেট বানিয়েছি। সিক্যুইনড জ্যাকেটও। সেগুলো করেছি খাদি বা হ্যান্ডলুম ফেব্রিকে। এই জ্যাকেটগুলো পুরুষ, মহিলা, যে কেউ পরতে পারেন।’’ অগ্নিমিত্রা মনে করেন কলকাতা তো আর পুণে বা বেঙ্গালুরু বা মুম্বই নয় যেখানে ফ্যাশন নিয়ে মানুষ পরীক্ষানিরীক্ষা করতে ভালবাসেন খুব। তাই এই ফ্যাশন ট্রেন্ড পুরোপুরি ঢুকতে সময় তো একটু লাগবেই।
বয়ফ্রেন্ডস ক্লোথ, এলজিবিটি, ট্রান্সজেন্ডার শব্দগুলোর মোহ থেকে বেরিয়ে একবার অ্যান্ড্রোজিনাস ফ্যাশনে নিজেকে সাজিয়ে দেখতেই পারেন। ভয় নেই, এই পোশাক পরলেই আপনাকে ফ্যাশন শো-তে হাঁটতে হবে না। একটু অন্য রকম দেখাক না। ক্ষতি কি?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy