Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ভালুক আর মার্মালেডের গল্প

অভিনয়ের কথা যদি বলতেই হয়, তা হলে কী করে প্যাডিংটনের কণ্ঠে বেন হুইশকে উপেক্ষা করা যায়! আর একই সঙ্গে আসে ছবিতে ফিনিক্স বুকাননের চরিত্রে হিউ গ্রান্টের কথা।

রূম্পা দাস
শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:০৩
Share: Save:

এক যে ছিল ভালুক। ভারী মিষ্টি কুতকুতে দুই চোখে অপার মায়া। মাথায় লাল টুপি। আদ্যোপান্ত ভাল ভালুক সে। দু’হাতে দুটো টুথব্রাশ নিয়ে একসঙ্গে ঘষে দাঁত মাজে। লোককে মিস্টার, মিস, মিসেস ছাড়া সম্বোধন করে না! আর অরেঞ্জ মার্মালেড দেখলেই এক্কেবারে কুপোকাত। পাঁউরুটির মধ্যে প্রিয় মার্মালেডের কমলাটে মোটা পরত লাগিয়ে টুপির নীচে রেখে দেয় সে। এ হেন মিষ্টি ভালুককে তো অনেকে চেনেন। নাম তার প্যাডিংটন। উইন্ডসর গার্ডেনে ব্রাউন ফ্যামিলিতে নিজের জায়গা পেয়েছে সে। এলাকায় বেশির ভাগ লোকজনেরই প্রিয়পাত্র প্যাডিংটন।

ছোটবেলায় যে আন্ট লুসি তাকে বাঁচিয়েছিল, তার এ বার ১০০তম জন্মদিন। আন্ট লুসির আবার লন্ডন দেখার বড় সাধ। এর মধ্যেই প্যাডিংটন মিস্টার গ্রুবারের অ্যান্টিক শপে খুঁজে পেয়েছে একটা পপ-আপ বুক, যার থিম কিনা আবার লন্ডন। সেই বইয়ের পাতায় পাতায় চোখ বোলালে জ্যান্ত হয়ে ওঠে সেন্ট পলস ক্যাথিড্রাল, বিগ বেন, টাওয়ার অব লন্ডন! ফলে আন্ট লুসির জন্মদিনে এই বইয়ের চেয়ে সেরা উপহার আর কী-ই বা হতে পারে! কিন্তু বইয়ের যে অনেক দাম। তাই প্যাডিংটন টাকা জমাতে লোকের বাড়ির কাচের জানালা পরিষ্কার করা থেকে শুরু করে সালোঁয় চাকরি— সবই চালায়। ইতিমধ্যেই একদিন চুরি যায় সেই বই। আশ্চর্য ভাবে অ্যান্টিক শপে প্যাডিংটনের পায়ের ছাপ! প্রমাণ দেয় দোকানে পড়ে থাকা মার্মালেডও। ফলে আর কী? সাধের ভালুক সোজা গরাদের পিছনে। সেখানেও মার্মালেডের রেসিপি দিয়ে কিস্তিমাত করে প্যাডিংটন। বন্ধু জোটায়, নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য বেরিয়ে পড়ে। এত দিন কিন্তু ব্রাউন পরিবারও থেমে ছিল না। তারাও নিজেদের সমস্ত ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে নেমে পড়েছে শার্লকের ভূমিকায়। চোর কি ধরা পড়বে? প্যাডিংটন কি পারবে সাধের ব্রাউন পরিবারে ফিরে আসতে? আন্ট লুসি কি জন্মদিন একাই কাটাবে, উপহার ছাড়া? সে সব দেখতে গেলে কিন্তু এক ঘণ্টা ৪৩ মিনিটের ম্যাজিকের মতো সফরটা চেখে দেখতেই হবে।

প্যাডিংটন টু

পরিচালনা: পল কিং

অভিনয়: বেন হুইশ (কণ্ঠ), হিউ গ্রান্ট,
হিউ বনেভিল, স্যালি হকিন্স

৬.৫/১০

অভিনয়ের কথা যদি বলতেই হয়, তা হলে কী করে প্যাডিংটনের কণ্ঠে বেন হুইশকে উপেক্ষা করা যায়! আর একই সঙ্গে আসে ছবিতে ফিনিক্স বুকাননের চরিত্রে হিউ গ্রান্টের কথা। একজন আদ্যোপান্ত নার্সিসিস্ট অভিনেতার চরিত্রে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে তাঁর ডায়লগ আউড়ে যাওয়ার অনায়াস ক্ষমতা দেখে মুগ্ধ হতে হয়। ছবির প্রত্যেকটি চরিত্র নিজেদের ভূমিকায় সাবলীল। তবে আলাদা করে বলতে হয় পল কিংয়ের পরিচালনায় এই ছবির রঙের খেলা ও সিনেমাটোগ্রাফির কথা। বিশেষ করে যেখানে মিক্সড ডিজিট্যাল এফেক্টের মাধ্যমে প্যাডিংটন মিনিয়েচার হয়ে আন্ট লুসির হাত ধরে পপ-আপ বুকের পাতার ভিতর ঢুকে যায়। আর পাতা উল্টোনোর সঙ্গে ক্যামেরার প্যান অনবদ্য হয়ে ওঠে! অতি উচ্চকিত না হয়েও সাধারণ থেকে সাধারণতর হওয়ার মধ্যে যে ভাল লাগা লুকিয়ে থাকে, তারই কথা বলে ‘প্যাডিংটন টু’।

ছবির পরতে পরতে ছড়িয়ে রয়েছে রূপকথা। সেই রূপকথার হাত ধরে কয়েদখানার পাইপ হয়ে যায় টেলিফোন, গায়ে দেওয়ার কম্বল হয়ে যায় হট এয়ার বেলুন, চোখের জল থেকে জন্ম নেয় আস্ত একটা অরণ্য! এই ছবি গল্প বলে ভালমানুষির। সেই ভাল মানুষের আরও ভাল হতে চাওয়ার প্রবণতা আসলে কোথাও না কোথাও জয়গান গায় বেঁচে থাকার, ভাল থাকার। সে রূপকথা ভালবাসার!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE