প্রত্যেক বাবাই চান তাঁর ছেলের মধ্যে নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করতে। ছেলেকে সফল দেখার আশায় অনেক ক্ষেত্রেই বাবারা বেশ কঠোর হন। আর সেখানেই শুরু সমস্যা। বাবা-ছেলের সম্পর্কের মাঝে এসে পড়ে অভিমান, রাগ, কথা বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো একাধিক সমস্যা। কিন্তু এই সমস্যার শিকড় কোথায়, তা তো খুঁজে বার করতেই হবে। তবেই তো পাওয়া যাবে সমাধান।
সমস্যা কোথায়?
অনুপস্থিতি: পেশার কারণে হোক বা অন্য কারণে বাড়িতে বাবাকে খুব বেশি সময় পায় না সন্তানরা। ফলে মায়ের সঙ্গে তাদের যতটা সখ্য গড়ে ওঠে, বাবার সঙ্গে সম্পর্ক অনেকটাই জটিল হয়ে যায়।
কঠোর অনুশাসন: পেশাগত জীবনে ছেলেকে সফল দেখতে চান সব বাবাই। ফলে ছোট থেকে চাপ সৃষ্টি শুরু হয় সন্তানের উপরে। তার পড়াশোনা ও কেরিয়ার নিয়ে সব সময়ে প্রশ্ন করায় ছেলেরাও বাবার সঙ্গ একটু এড়িয়েই চলে।
মনে রাখতে হবে
• শুধু মাত্র সন্তানকে আদেশ করলেই হবে না। মনে রাখতে হবে, সন্তানের কাছে তার মা-বাবাই রোল মডেল। ফলে আপনি যেমন আচরণ করবেন, সে-ও তেমনই শিখবে। আপনাকে হয়তো কাজের প্রয়োজনে অনেকটা সময় বাইরে থাকতে হয়, বাড়ি ফিরেও মোবাইলে বুঁদ। তখন ছেলেকে পড়তে বসতে বললে, সে কিন্তু আপনার কথা শুনবে না। বরং ছেলের বইপত্র টেনে নিয়ে পাতা উলটে দেখুন। ছেলেকে ডেকে বুঝতে চান। সে কিন্তু আপনাকে বোঝানোর ছলেই খানিকটা পড়ে ফেলবে।
• পেরেন্টিং কনসালট্যান্ট পায়েল ঘোষ জানালেন, ‘‘বাবা ও ছেলে একসঙ্গে ব্যক্তিগত সময় কাটানো জরুরি। দু’জনে রাস্তায় হাঁটতে বেরোতে পারেন। বয়ঃসন্ধিতে ছেলের মনে এমন অনেক প্রশ্ন জাগে, যার উত্তর মায়ের কাছ থেকে জানা একটু অস্বস্তিকর। এই সময়ে একজন বাবা খুব সহজেই ছেলের কাছের বন্ধু হয়ে উঠতে পারেন।’’
• ছোটবেলায় কড়া হাতে শাসন করলেও ছেলের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাবাকে কিন্তু সংযত হতে হবে। ছোটবেলায় মেরেধরে পড়তে বসালেও বড় বয়সে সে কাজ চলবে না। তখন বুঝিয়েসুঝিয়ে ছেলেকে পথে আনতে হবে।
• টাকাপয়সা নিয়েও মনোমালিন্য হতে পারে। যতটা টাকা দিচ্ছেন, তাতে ছেলের প্রয়োজন নাও মিটতে পারে। আপনাকেও বুঝতে হবে, সময় এগিয়েছে। ছেলের খরচের জায়গা বেড়েছে, জিনিসের দামও। ছেলেকেও বুঝতে হবে, সে যা চাইছে, সেই পরিমাণ টাকা বা দামী জিনিস কেনার ক্ষমতা তার বাবার আছে কিনা! পারস্পরিক সমঝোতাই কিন্তু এ সমস্যা মেটাবে।
• মনে রাখতে হবে, ছেলের রোল মডেল কিন্তু তিনিই। ফলে ছেলের সামনেই তার মাকে ‘তুমি চুপ করো’ বা ‘তুমি এ বিষয়ে জানো না’ ধরনের কথা বলে বসাটা ঠিক নয়। ছেলেও কিন্তু ক্রমে সেই ব্যবহারটাই শিখবে।
• দোকান-বাজারে গেলে ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে যান। নিজের কাজেও তাকে ইনভল্ভ করুন। তা হলে দু’জনের সখ্য গড়ে উঠবে।
• সন্তানকে সময় দিতে হবে। রোজ ছেলের সঙ্গে সময় কাটান। অল্প অল্প করে সেই সময়টা বাড়াতে পারেন। কাজের চাপে সারা সপ্তাহ ছেলের সঙ্গে খুব বেশি সময় কাটাতে না পারলে, সপ্তাহান্তে ছেলেকে কাছে টেনে নিন। পুরো দিন সে যেমন চায়, সে ভাবেই সময় কাটান। দেখবেন সে ক্রমশ আপনার কাছে আসবে। এ বার ধীরে ধীরে আপনি যে ভাবে ওর সময়টা কাজে লাগাতে চান, ওকে সেই কাজে নিযুক্ত করুন।
• যে কোনও সম্পর্কের গোড়ার কথা বন্ধুত্ব। আর বন্ধুত্ব পোক্ত হয় সঠিক বোঝাপড়ায়। তাই ছেলেকে বোঝার চেষ্টা করুন। নিজের সমস্যাও ছেলের সঙ্গে আলোচনা করুন। নিজের সাফল্য ও ব্যর্থতা দুই-ই ছেলের সামনে তুলে ধরুন। অফিসে কাজের চাপ, মাইনে না বাড়া, চাকরি চলে যাওয়ার মতো জটিল সমস্যা নিয়েও ছেলের সঙ্গে কথা বলুন। এতে আপনার কাজ ও সাধ্য সম্পর্কে তার ধারণা হবে। আপনার সমস্যার কথা জানতে পারলে অহেতুক আবদার করে বসবে না। একই সঙ্গে বাস্তব জগৎ কতটা কঠিন, টাকার মূল্য কতখানি... সবই বুঝতে শিখবে।
ছেলেদেরও দায়িত্ব নিতে হবে
• বাড়িতে কোনও সমস্যা হলেই রাগারাগি, চেঁচামেচি করাটা সমাধান নয়। পায়েল ঘোষ বললেন, ‘‘হয়তো এমন কোনও শাখা নিয়ে পড়াশোনা করতে চায় বা পেশা হিসেবে নিতে চায়, যে বিষয়ে বাবা জানেনই না। সে ক্ষেত্রে বাবা বাধা দিতে পারেন। সেটা কিন্তু ছেলের ভবিষ্যতের জন্যই। তিনি সেই বিষয়ে জানেন না বলেই হয়তো সেই পেশার সাফল্য নিয়ে নিশ্চিত হতে পারছেন না। সে ক্ষেত্রে যথাসম্ভব ডেটা সংগ্রহ করে যুক্তি দিয়ে বাবাকে বোঝাতে হবে।’’
• একটা বয়সের পরে বাবা যখন অবসর নিচ্ছেন আর ছেলের কর্মজীবন শুরু হচ্ছে, এই সময়টা খুব স্পর্শকাতর। এই সময়ে বাবারা অনেক বেশি সংবেদনশীল হয়ে পড়েন। ছোটখাটো কথাতেই হয়তো অপমানিত হন। অন্য দিকে ছেলেও কর্মজগতে পা রেখে বাবার কথা শুনতে নারাজ। এই সময়ে দু’জনকেই বুঝে চলতে হবে। ছেলেকে তখন একটু পরিণত ভাবেই পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে। বাবাকে বোঝাতে হবে। আর এমন কোনও আচরণ করা চলবে না, যাতে বাবা আঘাত পান। অন্য দিকে ছেলের সিদ্ধান্তের উপরে বাবাকেও ভরসা রাখতে হবে। নইলে ছেলের আত্মবিশ্বাসও বাড়বে না।
ছেলের সঙ্গে সময় কাটান। দেখবেন, বাইরে মেশার দরকার পড়ছে না। ঘরের মধ্যে পেয়ে যাবেন আপনার প্রিয় বন্ধু।
মডেল: জয়দীপ সিংহ, লক্ষ্য পঞ্জাবি; ছবি: দেবর্ষি সরকার; মেকআপ: অভিজিৎ পাল; লোকেশন: অলটেয়ার বুটিক হোটেল, রাজারহাট
ফুড পার্টনার: ৬, বালিগঞ্জ প্লেস
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy