আজ যাই? বলে, দু’পা এগিয়ে, এক পা পিছিয়ে, লুকোচুরি খেলে সে গেল! কিন্তু ত্বক যে তাকে ভোলেনি। যতই করুন যত্ন, শীত ঠিক তার আঁচড় রেখে যায় সারা শরীরে। সোয়েটারের পরত ছাড়লেই, খরখরিয়ে উঠছে হাত-পা। স্কার্ফের বাঁধন খোলামাত্র, খসখসে আর উড়ো চুল। চিরুনি দিলেই চমকে উঠছে স্থিরতড়িৎ। মনে ঘা দিয়ে ঝরছে খুশকির খোসাও? সক্কলকে এক তুড়িতে তাড়াতে, দেহে ফিরিয়ে আনুন আর্দ্রতা। অর্থাৎ শিখে নিন রিহাইড্রেশনের খানকয় রেসিপি।
পর্যাপ্ত জল, ফলের রস, টসটসে কালো আঙুর, অঙ্কুরিত ছোলা-বাদাম, সবুজ আনাজ ডায়েটে রাখুন। শরীরযন্ত্র অন্দর থেকে স্নিগ্ধ হলেই লাবণ্য চুঁইয়ে পড়বে চুল থেকে পায়ের নখে।
চুল থেকেই করুন শুরু। মাথার চামড়ার মৃত কোষ বা খুশকির জবাব হল, দু’-এক দিন অন্তর নরম ভেষজ শ্যাম্পু। সপ্তাহে এক বা দু’বার শ্যাম্পুর ঘণ্টা দেড়েক আগে, জলপাই তেলে লেবুর রস নিংড়ে, তা হালকা গরম করে আঙুলের ডগা (নখ বাঁচিয়ে) দিয়ে আলতো মালিশ করুন মাথার ত্বকে। দু’-তিন মিনিট ধরে। এ বার, সামান্য গরম জলে পরিষ্কার তোয়ালে ডুবিয়ে, জল ঝরিয়ে মিনিট দশ মাথায় জড়িয়ে রাখুন। হয়ে গেল ঘরোয়া স্পা-ট্রিটমেন্ট। আমলা, রিঠা, শিকাকাই, জবাকুসুম দেওয়া ভেষজ শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। স্প্রে-বোতলে কন্ডিশনার-ক্রিম, চায়ের লিকার মেশানো জল ও ভাল সিরাম রাখুন। ভিজে চুলে মিশ্রণটি স্প্রে করুন। চুল শুকোলে আঁচড়ে দেখুন। খুশকি উধাও। রাপুনজেলকে লজ্জা দেওয়ার মতো জেল্লাদার কেশরাশি। ডগা-চেরা চুল বা চুল পড়ার সমস্যার জন্য দায়ী গরম জল আর ড্রায়ারের ভুল ব্যবহার। গরম জল চুল ভীষণ শুকনো করে। শীতের ভয় জয় করতে, মধু খেয়ে একটু গা গরম করে স্নানে যান। দরকার পড়লে হেয়ার-ড্রায়ার চালান উপর থেকে নীচে।
মুখের স্বাভাবিক তেলা ভাব ধরে রাখতে, জলের ঠান্ডা ছোঁয়াটুকু কাটানো, কুসুম গরম জলে মুখ ধোবেন। তুলতুলে তোয়ালে দিয়ে অল্প অল্প জল শুষে, মুখ মুছবেন। তার পর ময়শ্চারাইজার। জবাফুল গুঁড়ো আর এসেনশিয়াল অয়েল মেশানো ফেস-সিরাম (ভাল কসমেটিকসের দোকানে পাওয়া যায়) একসঙ্গে মিশিয়ে মুখে ছিটিয়ে, শুকোতে দিন। ৩০ সেকেন্ডে ঔজ্জ্বল্য আসবে।
দেহের মসৃণতার জন্য, স্নানের আগে, তেল মালিশের পরই সাদা মাখন, খাঁটি ঘি, মধু, মিছরি দানা মিশিয়ে মাখুন। পুরনো কোষ উঠে যাবে। স্নান শেষ মাত্র বডি-ক্রিম লাগিয়ে নিন।
পায়ে কোকোনাট শিয়া বাটার ক্রিম লাগালে অনেকক্ষণ তার নরম রেশ থাকবে। আফ্রিকার এই বিখ্যাত বাদামতেল এ বঙ্গের সব জায়গাতেই মেলে। না পেলে লাগান আম-দই। পেলব হবেই পা।
গোড়ালিতে পেট্রোলিয়াম জেলি মেখে পরিষ্কার মোজায় ঢেকে রাখলে নোংরা, জীবাণুর ঝামেলা থাকবে না। জলে অ্যাপল সাইডার ভিনিগার বা লেবুর রস দিয়ে কিছুক্ষণ পা ভিজিয়ে রেখে, ঝামাপাথর দিয়ে ঘষে ফাটা অংশ তুলে ফেলুন। তার পর লাগান ভিটামিন-ই দেওয়া ফুটক্রিম। গোড়ালি কোনও দিনই লুকোতে হবে না।
চিনি আর কমলালেবুর খোসা মিশিয়ে ঠোঁটে ঘষলে, মরা কোষ উঠে মোলায়েম ভাব ও গোলাপি আভা দেখা দেবে। তখন তো বটেই, রাতেও মুখে নাইট ক্রিমের পাশাপাশি, ঠোঁটে লিপ-জেলি লাগান। গোলাপের পাপড়ির মতো মখমলি হয়ে উঠবে ঠোঁট। লিপ গ্লস লাগালেই মুহূর্তে তার রং ধাঁধাবে।
এতটুকুই ছোঁয়া। তাতেই শরীর-উদ্যানে ফুটবে শিশিরভেজা রূপের ফুল। ঠিক যেমন, পুরনো ডাল-পাতা ঝরিয়ে নতুন সবুজে সেজে উঠে দাঁড়াচ্ছে আপনার জানালার বাইরের ঝাঁকড়া-মাথাওয়ালা গাছটি। যার ডালে লুকিয়ে বসে আমার কথায় সায় দিচ্ছে স্বয়ং কোকিলপাখি। কুহু, কু-উউ...
মডেল: দর্শনা
ছবি: দেবর্ষি সরকার
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy