Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

অনুসরণ-অনুকরণে নিজস্বতা মার খেয়ে যায়

তিন শিল্পীই শারদীয় উৎসবের কথা মাথায় রেখে তিনটি দুর্গার ইমেজকে প্রতিফলিত করেছেন। যেগুলির মধ্যে একমাত্র অনসূয়া চক্রবর্তীর রচনাতেই রং লাগানো, ভাবনা, ব্রাশিং ইত্যাদি অন্যান্যদের তুলনায় দৃষ্টিনন্দন।

হাতেকলমে: ‘স্ট্রিং অ্যান্ড ইজ়েলস’ প্রদর্শনীর কাজ।

হাতেকলমে: ‘স্ট্রিং অ্যান্ড ইজ়েলস’ প্রদর্শনীর কাজ।

শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৮ ০১:১০
Share: Save:

প্রদর্শনীটি তিন জনের এবং তিন দিনের। সকলেই স্বশিক্ষিত। চর্চা আছে, কিন্তু কাজের উৎকর্ষের দিকটা অবহেলিত। সিরিয়াস অনুশীলন বা নিরন্তর চর্চার মধ্যেও বহু দুর্বলতা থেকে যায়। তবে দীর্ঘ কাল শিল্পকলা দেখার নিরিখে এ কথা বলা সম্ভব— এ রকম দলগত বা একক প্রদর্শনী যে খুব বেশি উতরে যায়, এমনটা নয়। কতিপয় ক্ষেত্রে হয় আর কী। হল ভাড়া নিয়ে দলগত প্রদর্শনী করার ঝক্কি কম নয়। তবুও এ সব চেষ্টাকে সাধুবাদ জানাতেই হয়। বর্তমান প্রদর্শনীটির নাম ‘স্ট্রিং অ্যান্ড ইজ়েলস’। সম্প্রতি শেষ হল গগনেন্দ্র শিল্প প্রদর্শশালায়।

প্রদর্শনীতে তিন জনের কাজ ছিল বিশেষত পশুপাখি, নিসর্গ ও মানুষের কিছু বিশেষ মুহূর্ত নিয়ে ক্যানভাসের বুকে অ্যাক্রিলিকে করা। চর্চা থাকলেও বিস্তর দুর্বলতা চোখ এড়িয়ে যায় না। তা সত্ত্বেও কয়েকটি কাজের পিছনে রীতিমতো পরিশ্রম ছিল, বোঝা যায়। কারণ রং মেশানো ও রং চাপানো এবং রিয়্যালিজ়মকে সেই অনুপাতে রক্ষা করতে পারার দক্ষতা তাতে প্রশ্নাতীত।

জন্তু-জানোয়ার ও পশু-পাখি নিয়ে কাজ করার জন্য সাহস থাকা উচিত। ড্রয়িংয়ের পারদর্শিতা ও অ্যানিম্যাল ড্রয়িংয়ের ক্ষেত্রে শরীরী বাঁক-বিভঙ্গ বোঝা, স্কেলিটন স্ট্রাকচার নিয়ে গভীর অনুশীলন এবং পর্যবেক্ষণোত্তর যে সৃষ্টি— তা কতটা সঠিক মাত্রা পেল, তার গতিবিধি ও চরিত্র সম্পর্কে জানা এক জন শিল্পীর পক্ষে প্রয়োজনীয়। স্বশিক্ষিত শিল্পীরা এই বিষয় নিয়ে কী ভাবে এগোবেন, তা সর্বাগ্রে স্থির করা উচিত। কেননা, এ ক্ষেত্রে অভ্যেস ও অনুশীলনের অভাব চোখে পড়েছে। এ জন্যই আলোকচিত্র থেকে অথবা বিভিন্ন ফোটোগ্রাফিক রেফারেন্স থেকে সাহায্য নিয়ে তাই এখানেও শিল্পীরা কাজ করেছেন। অথচ প্রয়োজন ছিল না। অন্য বিষয় নিয়ে ভাবাই যেত। অনুকরণের চেয়ে স্টাডিমূলক কাজে অনেক বেশি স্বতঃস্ফূর্ততা থাকে। ভুল হলেও থাকে পরবর্তী ধাপে তাকে ঠিক করে নেওয়ার সুযোগ।

সম্প্রতি গগনেন্দ্র শিল্প প্রদর্শশালায় দেখা গেল এই প্রদর্শনীর কাজ।

তিন জনের মধ্যে দীপক বর্মণ বয়সে প্রবীণ। এক কালের এই ব্যাঙ্ক কর্মচারী ছবির জন্য বহু সময় ব্যয় করেন। অবসর যাপনে তাঁর সঙ্গী রং-তুলি-ক্যানভাস। ছোট একটি গ্যালারি করেছেন। দীপকের বিস্তৃত চর্চা জন্তু-জানোয়ার নিয়ে। ‘ওয়ান্ডার্স হর্ন’, ‘দ্য শার্প রানার’ জাতীয় বিকৃত চোখের চিতা, বাঁকানো শিঙের মহিষ কিংবা বাঘসিংহের কাজগুলিতে ওঁর উদ্যোগ সাধুবাদ পাবে। এগুলি দুর্বল নয়, কারণ আলোকচিত্রের রেফারেন্স ছাড়া এ সব তাঁর পক্ষে সম্ভব হত না বলে জানিয়েছেন শিল্পী। কীটপতঙ্গের চরিত্র অবশ্য বেশ ধরেছেন নিজস্ব ধরনে। ‘দ্য স্পিরিট’ বেশ ভাল কাজ।

তিন শিল্পীই শারদীয় উৎসবের কথা মাথায় রেখে তিনটি দুর্গার ইমেজকে প্রতিফলিত করেছেন। যেগুলির মধ্যে একমাত্র অনসূয়া চক্রবর্তীর রচনাতেই রং লাগানো, ভাবনা, ব্রাশিং ইত্যাদি অন্যান্যদের তুলনায় দৃষ্টিনন্দন।

অনসূয়া বহুবিধ নিসর্গ এঁকেছেন। পাহাড়, সমুদ্র, ঝর্না, গাছপালা, তার নেমে আসা দীর্ঘ ঝুরি, আকাশ, তাতে উড়ন্ত বকের সারি, অরণ্য-বনানী, গ্রাম্য পথ, জঙ্গলের নৈঃশব্দ্য... এ সব মন্দ নয়। নানা দুর্বলতা থাকা সত্ত্বেও খুব চেষ্টা করেছেন একটা পরিচ্ছন্ন চেহারা দেওয়ার। পরিপ্রেক্ষিত, চড়া রং, অত্যধিক উজ্জ্বলতা, রচনার একঘেয়েমি, ছবির ফ্রেমিং ইত্যাদি নিয়ে আরও সচেতন হওয়া উচিত ছিল। পেন্টিং কোয়ালিটি বজায় রাখার জন্য রঙের ব্যবহার ও রংকে বোঝা প্রয়োজন।

সুকন্যা বর্মণের ‘ট্র্যাপ’ চোখ টানে। ড্রয়িংয়ে কিছু দুর্বলতা থাকলেও ‘কেয়ার এমব্রেস’-এ প্রদীপের আলো ও তার তীব্র উজ্জ্বলতাকে এক নারীর মুখে সঠিক ধরতে পেরেছেন। ক্যানভাসের উপরে অ্যাক্রিলিকে কাজ করেছেন। দু’-একটি কাজে মন দিলেও অন্য কাজগুলিকে শিশুসুলভ করলেন কেন, বোঝা গেল না। একই শিল্পীর মধ্যে এমন বৈপরীত্য কেন হবে? যেখানে মাধ্যম এক, বিষয়ও অন্য রকম। অর্থাৎ কিনা পরিবর্তিত হয়েও আমূল বদল ঘটেনি। সুকন্যাও যে সব ক্ষেত্রে আলোকচিত্রের সাহায্য নিয়ে অনুসরণের পথে হেঁটেছেন, সেখানে তেমন দুর্বলতা চোখে পড়ে না।

অতনু বসু

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Art Exhibition Exhition
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE