মনোনয়নপত্র জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে ডিএসও এবং টিএমসিপি সমর্থকদের সংঘর্ষ। শুক্রবার পাঁশকুড়া কলেজে।—নিজস্ব চিত্র।
কোথাও তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) প্রতিপক্ষ অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (এবিভিপি), কোথাও এসএফআই।
কোথাও ছাত্রীদের জাপটে ধরে মনোনয়ন ছিনতাইয়ের অভিযোগ। কোথাও ইট-বোমা নিয়ে হানাহানি। উত্তর থেকে দক্ষিণ কলেজ ভোটে মনোনয়নকে ঘিরে উত্তাপের পারদ ক্রমেই চড়ছে রাজ্যে।
শুক্রবার মনোনয়ন ঘিরে সবচেয়ে বড় অশান্তি হয় উত্তর ২৪ পরগনার মিনাখাঁর। বামনপুকুরের হুমায়ুন কবীর মহাবিদ্যালয়ের মনোনয়ন ঘিরে তৃণমূল এবং এবিভিপির গোলমাল থামাতে গিয়ে বোমার স্প্লিন্টারে জখম হন দুই পুলিশকর্মী। পুলিশের তিনটি গাড়ি ভাঙচুর হয়। একটি সার্ভিস রিভলভারও লুঠ করে নেওয়া হয়। সেটি অবশ্য পরে উদ্ধার করে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, ২৯ জানুয়ারি উত্তর ২৪ পরগনায় কলেজ-ভোট। মিনাখাঁর কলেজটির সামনে সকাল থেকেই জমায়েত করে টিএমসিপি। সেখানে তৃণমূলের স্থানীয় নেতাদেরও দেখা গিয়েছে। বাসন্তী রোডে তারা এবিভিপি-র লোকজনকে আটকে মারধর করে বলে অভিযোগ। প্রতিবাদে রাস্তার একটু দূরে জমায়েত করে এবিভিপি-র লোকজন। পুলিশের দাবি, দু’দলের জমায়েত থেকেই বোমা ছোড়া হয়। গুলিও চলে।
পুলিশের গাড়ি লক্ষ করেও বোমা ছোড়া হয়। তাতে জুলু রহমান ও রঞ্জিত ঘোষ নামে দুই পুলিশকর্মী জখম হন। তাঁদের এক জনকে চার জন অপহরণের চেষ্টা করে বলে অভিযোগ। সাংবাদিকদের দিকেও বোমা ছোড়া হয়। ৩টে নাগাদ আরও পুলিশ গিয়ে অবস্থা সামলায়।
টিএমসিপি নেতা মসিউর রহমানের অভিযোগ, “বিজেপিই গোলমাল করে। থামাতে গেলে পুলিশের উপরেও আক্রমণ করেছে ওরা।” বসিরহাটের তৃণমূল সাংসদ ইদ্রিশ আলির দাবি, “আমাদের ছেলেরা কিছু করেনি। এবিভিপি নিজেরাই ঝামেলা পাকিয়ে আমাদের বদনাম করছে।” অভিযোগ মানেনি এবিভিপি। সংগঠনের কলেজ ইউনিটের সম্পাদক পার্থরঞ্জন মণ্ডলের অভিযোগ, “তৃণমূলের কিছু বহিরাগত কালীতলার কাছে আমাদের সমর্থকদের উপরে হামলা করে। পুলিশ তাঁদের উদ্ধার করে কলেজে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করে। সেই রাগেই তৃণমূলের লোকজন পুলিশের উপরে হামলা করেছে।” তা হলে এবিভিপির লোকজনের হাতে লাঠি-বোমা-আগ্নেয়াস্ত্র দেখা গেল কেন? পার্থর দাবি, বোমা বা আগ্নেয়াস্ত্র ছিল না। কিন্তু তৃণমূলের হামলার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতেই বাধ্য হয়ে লাঠিসোটা ধরতে হয়েছিল।
সিপিএম কর্মীকে মার তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের।
শুক্রবার শ্রীরামপুর কলেজের সামনে। ছবি: প্রকাশ পাল।
কলেজের অধ্যক্ষ সুভাষ বিশ্বাস অবশ্য জানান, গোলমাল হয়েছে কলেজ চত্বরের বাইরে। কিছু মনোনয়ন এ দিন জমাও পড়েছে।
স্বরূপনগরের শহিদ নুরুল ইসলাম স্মৃতি মহাবিদ্যালয়েও এ দিন মনোয়নপত্র তোলার সময়ে তাদের কর্মী-সমর্থকদের টিএমসিপির ছেলেরা মারধর করে বলে অভিযোগ এসএফআইয়ের। প্রতিবাদে ঘণ্টাখানেক অবরোধও করে তারা। টিএমসিপি অভিযোগ মানেনি।
অশান্তি হয়েছে হুগলির শ্রীরামপুর কলেজের সামনেও। এসএফআই ও টিএমসিপির মধ্যে দফায় দফায় মারামারি এবং ইট ছোড়াছুড়িতে দুই ছাত্রী-সহ আহত হন দু’পক্ষের কয়েক জন। ঘটনায় জড়িয়ে পড়েন সিপিএম ও তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও। লাঠি চালিয়ে পুলিশ পরিস্থিতি সামলায়।
অশান্তির আবহে দুই মেদিনীপুরের কলেজেও মনোনয়ন তোলা ও জমা শুরু হয়েছে। এবিভিপি-র দাবি, বেলদা কলেজে তাদের প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা দিতে বাধা দেয় টিএমসিপি। পাঁশকুড়া কলেজে মনোনয়ন জমা দিতে গিয়ে টিএমসিপি-র মারে দুই ছাত্রী-সহ আট ডিএসও কর্মী আহত হন বলে অভিযোগ। মহিষাদল রাজ কলেজে এবিভিপি-র তিন কর্মীকে মারের অভিযোগ উঠেছে টিএমসিপি-র বিরুদ্ধে। রামনগর কলেজেও মনোনয়নকে কেন্দ্র করে টিএমসিপি-র দুই গোষ্ঠীর লড়াইয়ে উত্তেজনা ছড়ায়। অধ্যক্ষের ঘরের টেবিল, চেয়ার ভাঙা হয় বলেও অভিযোগ।
বাদ নেই কলকাতাও। এ দিনও দমদম মতিঝিল সায়েন্স কলেজের চত্বরে এবিভিপির সঙ্গে গোলমাল হয় টিএমসিপির। ইট পড়তে থাকে। এবিভিপির অভিযোগ, টিএমসিপির ছোড়া ইটে তাদের দু’জন আহত হন। দু’টি মোটরবাইক ভাঙচুর হয়। টিএমসিপি অভিযোগ মানেনি।
শিলিগুড়ির বাগডোগরার কালীপদ ঘোষ তরাই মহাবিদ্যালয়ে এসএফআইয়ের এক ছাত্রীকে ধরে মনোনয়নপত্র ছিনতাইয়ের চেষ্টা ওঠে টিএমসিপির বিরুদ্ধে। অভিযোগ, বাধা দিতে গেলে পুলিশের উপর চড়াও হওয়ার চেষ্টা করে টিএমসিপি’র সমর্থকরা। মালদহের গাজল কলেজে আবার টিএমসিপির পোস্টার-ফেস্টুন ছিঁড়ে দেওয়ার অভিযোগকে কেন্দ্র করে এ দিন দুপুরে গোলমাল হয়। বীরপাড়া কলেজে এবিভিপি কর্মীদের উপরে খুকরি দিয়ে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে টিএমসিপির বিরুদ্ধে। হামলায় ৬ জন জখম হন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy