Advertisement
০৫ মে ২০২৪

মেয়ে হলে শুভেচ্ছা, উপহার ১১টি গাছ

পুষ্পিতা প্রকল্পের লোগো। রাজস্থানের পিপলান্ত্রি থেকে বর্ধমানের পূর্বস্থলী। এলাকা, ভাষা, জীবনযাপন আলাদা। মিল শুধু ভাবনায়। ক্রমশ বেড়ে চলা দূষণ ঠেকানো আর মেয়ে জন্মানোয় উৎসাহ দেওয়ার ভাবনা।

কন্যাসন্তান জন্মানোর পরে গাছ লাগাচ্ছে প্রশাসন। বর্ধমানের বগপুরে। — নিজস্ব চিত্র।

কন্যাসন্তান জন্মানোর পরে গাছ লাগাচ্ছে প্রশাসন। বর্ধমানের বগপুরে। — নিজস্ব চিত্র।

বিতান ভট্টাচার্য ও কেদারনাথ ভট্টাচার্য
কলকাতা ও পূর্বস্থলী শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৬ ০৪:৩২
Share: Save:

পুষ্পিতা প্রকল্পের লোগো।

রাজস্থানের পিপলান্ত্রি থেকে বর্ধমানের পূর্বস্থলী। এলাকা, ভাষা, জীবনযাপন আলাদা। মিল শুধু ভাবনায়। ক্রমশ বেড়ে চলা দূষণ ঠেকানো আর মেয়ে জন্মানোয় উৎসাহ দেওয়ার ভাবনা।

গত ন’বছরে রাজস্থানের রাজসামন্দ জেলার পিপলান্ত্রির যত ঘরে মেয়ে জন্মেছে, প্রশাসনের তরফে তাঁদের ১১১টি করে গাছ দেওয়া হয়েছে। রুখু অঞ্চল বদলেছে সবুজে।

পূর্বস্থলী ১ ব্লকেও এ বার ঠিক হয়েছে, এলাকায় মেয়ে জন্মালে বাড়ি বয়ে এসে শুভেচ্ছা জানাবেন প্রশাসনের প্রতিনিধিরা। মঙ্গলবার এমনই তিন পরিবারের হাতে ১১টি করে গাছ তুলে দিয়ে শুরু হল প্রকল্পের। ব্লক প্রশাসনের দাবি, বনসৃজন, কন্যা-জন্মে উৎসাহ দেওয়া ও জনসংযোগ প্রকল্পের মূল লক্ষ্য।

বিডিও পুষ্পেন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পিপলান্ত্রি চোখে আঙুল দিয়ে সত্যিটাকে দেখাচ্ছে। আমরাই বা পিছনে থাকি কেন? মেয়েরা আর গাছ— গোটা পৃথিবীকে ধরে রেখেছে। সরকার এমন উদ্যোগকে সব সময় সমর্থন করে।’’

মেয়েদের সঙ্গে গাছের চারার ভবিষ্যত মিলিয়ে প্রশাসনের উদ্যোগ একেবারে নতুন নয়। গত সপ্তাহেই ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্পের প্রাপক ছাত্রীদের হাতে একটি করে মূল্যবান গাছের চারা তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন। কয়েক বছর পরে গাছটি বড় হলে প্রাপক ছাত্রীদের তা থেকে আয় করার সুযোগ থাকবে। সে প্রকল্পের নাম ‘বনশ্রী’। আবার ১০০ দিনের প্রকল্পেও চারাগাছের পরিচর্যা করার জন্য কাজ নির্দিষ্ট আছে। তবে তা শুধু মেয়েদের জন্য নয়। পূর্বস্থলী-১ ব্লকের প্রকল্পে এই দুই প্রকল্পেরই মিশেল রয়েছে। প্রকল্পের নাম প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে ‘পুষ্পিতা’।

ঠিক হয়েছে, এলাকার আশা-কর্মীরা সদ্যোজাতের পরিবারকে চিহ্নিত করে স্থানীয় পঞ্চায়েতে খবর দেবেন। পঞ্চায়েত প্রধান ঠিক করবেন মেয়েটির পরিবারের জব-কার্ডধারী সদস্যকে কী ভাবে গাছ লাগানো, পরিচর্যা, রক্ষণাবেক্ষণের কাজে লাগানো যায়। মেয়েটির ভবিষ্যত প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে মেহগিনি, সেগুন, শিরিষ, অর্জুনের মতো বাজারে মূল্যবান গাছ যেমন দেওয়া হবে, তেমনই কাঁঠাল, জামরুলের মতো ফলদায়ী গাছও থাকবে ওই ‘এগারোর’ তালিকায়।

গাছের দেখভাল, বেড়া দেওয়া ইত্যাদি প্রয়োজনে প্রথম বছরে ১,৯৫০ টাকা দেওয়া হবে শিশুকন্যার পরিবারকে। মেয়ে বড় হলে তার লেখাপড়া, বিয়ের প্রয়োজনে (অবশ্যই সাবালিকা অবস্থায়) গাছ কাটা যেতে পারে। শর্ত একটাই, ফের সমান সংখ্যায় গাছ লাগাতে হবে। বাড়িতে বা অন্যত্র নিজস্ব জমি থাকলে সেখানেই লাগানো হবে গাছ। আর জমি না থাকলে গাছ লাগানো হবে খাসজমিতে। সরকারি আধিকারিকদের সামনেই ওই শিশুর পরিবার গাছগুলি লাগাবে।

মঙ্গলবার ব্লকের তিনটি পরিবারের কাছে যান প্রশাসনের কর্তারা। প্রথমে শ্রীরামপুর পঞ্চায়েতের সদ্য মা হওয়া রুমা রায়ের কাছে। শুভেচ্ছাপত্রে সঙ্গে পরিচ্ছন্নতা, মেয়ের পড়াশোনা নিয়ে সচেতনতার বার্তা, টিকাকরণ ও শিশুর যত্নের নানা তথ্য জানানো হয় তাঁকে। তার পরে উঠোনের পাশে লাগানো হয় ১১টি গাছ। রুমাদেবী বলেন, ‘‘মেয়ে হওয়ায় বিডিও এসে গাছ দিয়ে শুভেচ্ছা জানাবেন ভাবতেই পারছি না। খুব ভাল লাগল।’’

পরের গন্তব্য বগপুর পঞ্চায়েতের দুই গ্রামে লায়লা খাতুন ও ডালিয়া মণ্ডলের বাড়ি। গাছ ও শুভেচ্ছাপত্র নিয়ে পৌঁছনো প্রশাসনের কর্তারা সাবালিকা হওয়ার আগে মেয়ের বিয়ে দিতে নিষেধ করেন দু’টি পরিবারকেই। মেয়ের উচ্চশিক্ষার প্রয়োজনে কী ভাবে প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে গাছ কাটা যাবে, সে কথাও জানানো হয়। পূর্বস্থলী ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দিলীপ মল্লিক জানান, প্রকল্প সফল করতে এলাকার মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ সব রকম সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন।

ফেরার আগে তিন মেয়ের মা-কে বিডিও বলে আসেন, ‘‘মেয়ের মতোই যত্ন করবেন গাছগুলোর। ওরাও কিন্তু কম নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Girl child Trees
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE