ব্যবস্থা: প্রিয়াঙ্কার জন্য। নিজস্ব চিত্র
সদ্যোজাত মেয়ের অবস্থা সঙ্কটজনক। অবস্থা খারাপ মায়েরও। তবুও মনের জোরে বারাসত হাসপাতাল থেকেই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিলেন উনিশ বছরের মা। মঙ্গলবার হাসপাতালের সুপার সুব্রত মণ্ডল বলেন, ‘‘পরীক্ষা দেওয়া নিয়ে মেয়েটির জেদের কাছে হার মানতে হয়েছে। অসম্ভব মানসিক জোর।’’
হাসপাতাল সূত্রে খবর, ২২ মার্চ অসুস্থ হয়ে ওই হাসপাতালে ভর্তি হন প্রিয়াঙ্কা বারুই বিশ্বাস। রাতেই কন্যাসন্তানের জন্ম দেন তিনি। সদ্যোজাতের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস জানান, শিশুটির ওজন ছিল মাত্র ১৪০০ গ্রাম। সময়ের অনেক আগে ভূমিষ্ঠ হওয়ায় শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা ছাড়াও নানা জটিলতা ছিল। ফলে সিক নিউ বর্ন কেয়ার ইউনিট-এ (এসএনসিইউ) ভর্তি রাখতে হয় শিশুকে।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর খানেক আগেই মছলন্দপুরের বাসিন্দা প্রিয়াঙ্কার বিয়ে হয় ঠাকুরনগরের ব্যবসায়ী রঞ্জন বিশ্বাসের সঙ্গে। রঞ্জনবাবু এ দিন বলেন, ‘‘সন্তানকে নিয়ে বাড়ি ফিরে পরীক্ষাটা দেবে ভেবেছিল। কিন্তু পরীক্ষার আগে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাবে না জেনে প্রিয়াঙ্কার মনটা ভেঙে যায়।’’ এর পরেই নার্স, চিকিৎসকদের কাছে হাসপাতাল থেকেই পরীক্ষা দেওয়ার আর্জি জানান প্রিয়াঙ্কা।
প্রিয়াঙ্কার মানসিক দৃঢ়তা দেখে সোমবার উত্তর ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন হাসপাতালের সুপার। বারাসতের মহকুমা শাসক পীযুষকান্তি দাস বলেন, ‘‘উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সঙ্গে যোগাযোগ করে হাসপাতালেই পরীক্ষা নেওয়ার বিষটি জানাই।’’ সোমবার রাতেই অনুমতি দেয় সংসদ।
মঙ্গলবার সংসদ ও প্রশাসনের কর্তাদের উপস্থিতিতে হাসপাতালের একটি ঘরে পরীক্ষায় বসেন নতুন মা। প্রিয়াঙ্কা বলেন, ‘‘মেয়ের শরীর খারাপ, আমারও। কিন্তু পরীক্ষা দিতে না পারলে মনটা ভেঙে যেত।’’
হাসপাতালের নার্সরাও জানান, মেয়েকে দেখভালের পাশাপাশি সময় পেলেই বই নিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যেতেন প্রিয়াঙ্কা।
মঙ্গলবার পরীক্ষা শেষে মেয়েকে দেখে ফের বই নিয়ে বসে পড়েন মা। পরশু ইংরেজি পরীক্ষা। কাকে ধন্যবাদ জানাবেন? প্রিয়াঙ্কা বলেন, ‘‘এখন নয়। রেজাল্ট হাতে পেয়ে আগে ডাক্তারবাবুদের কাছেই আসব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy