বাদুড়িয়া, বসিরহাটে সদ্যোজাত শিশু পাচার চক্রের কাজকর্ম নিয়ে তোলপাড়ের মধ্যে এ বার বাচ্চা পাচারের অভিযোগ উঠল মালদহ এবং ডায়মন্ড হারবারেও। এই ধরনের দু’টি মামলায় শিশু প্রকল্পের এক কর্তা এবং এক সিআইডি-কর্তাকে তলব করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। মালদহের ক্ষেত্রে শিশু প্রকল্পের হেফাজতে দেওয়ার পরে একটি শিশুকন্যার খোঁজ নেই। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে ডায়মন্ড হারবারের সরকারি হাসপাতাল থেকেই উধাও হয়ে গিয়েছে একটি শিশু।
শিশু পাচারের অভিযোগ পেয়ে হাইকোর্ট ডেকে পাঠিয়েছে মালদহের চাইল্ড লাইন প্রকল্পের কর্তাকে। বিচারপতি অসীম রায় ও বিচারপতি মলয়মরুত বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্যের গভর্নমেন্ট প্লিডারকে শুক্রবার নির্দেশ দিয়েছে, আগামী বুধবার বেলা সাড়ে ১০টায় হাজির হয়ে ওই কর্তাকে জানাতে হবে, তাঁর হেফাজতে থাকা শিশুকন্যাটি নিখোঁজ হয়ে গেল কী ভাবে। ডায়মন্ড হারবার হাসপাতাল থেকে দু’বছরের একটি শিশুর নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় সিআইডি-র পদস্থ কর্তাকে ওই দিনই আদালতে হাজির থাকার নির্দেশ দিয়েছে একই ডিভিশন বেঞ্চ।
হাইকোর্টের আইনজীবী কল্লোল মণ্ডল ও সৈয়দ নুরুল আরফিন জানান, তাঁদের মক্কেল, মালদহের বাসিন্দা জয়শ্রী চৌধুরীর সঙ্গে সুমন্ত সরকারের বিয়ে হয় ২০১৩ সালে। বিয়ের সময় জয়শ্রী নাবালিকা ছিলেন। ২০১৪ সালে তাঁর একটি মেয়ে হয়। তার কিছু দিনের মধ্যেই গোলমাল শুরু হয় জয়শ্রী-সুমন্তের মধ্যে। সন্তানকে শ্বশুরবাড়িতে রেখে বেরিয়ে আসেন ওই তরুণী। ঠুকে দেন বধূ-নির্যাতনের মামলা। মালদহের মহিলা থানার কর্মীরা জয়শ্রীর শিশুকন্যাকে জেলার চাইল্ড লাইন প্রকল্পের কর্তার হাতে তুলে দেন।
গত বছর স্বামীর সঙ্গে জয়শ্রীর সম্পর্ক জোড়া লাগে বলে জানান তাঁর আইনজীবীরা। সুমন্ত-জয়শ্রী তখন চাইল্ড লাইন প্রকল্পের কর্তার কাছে গিয়ে তাঁদের সন্তান ফেরত চান। অভিযোগ, প্রকল্প-কর্তা তখন ওই দম্পতিকে বলেন, তিনি সেই শিশুকন্যাকে কলকাতার চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি (সিডব্লিউসি) বা শিশু কল্যাণ সমিতির হাতে তুলে দিয়েছেন। কিন্তু জয়শ্রীরা সিডব্লিউসি-র কাছে গিয়ে জানতে পারেন, তাঁদের সন্তানকে সেখানে পাঠানোই হয়নি। মেয়ের খোঁজে হন্যে হয়ে সম্ভাব্য সমস্ত জায়গায় ঘোরেন ওই দম্পতি। সন্তানকে না-পেয়ে গত সেপ্টেম্বরে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন জয়শ্রী-সুমন্ত। সন্তান পাচারের অভিযোগ জানিয়ে মামলা দায়ের করেন বিচারপতি অসীম রায়ের ডিভিশন বেঞ্চে।
মামলাটি এ দিন শুনানির জন্য উঠলে গভর্নমেন্ট প্লিডার (জিপি) অভ্রতোষ মজুমদারকে ডেকে পাঠান বিচারপতি। জিপি এজলাসে হাজির হলে বিচারপতি রায় তাঁকে বলেন, ‘‘গুরুতর অভিযোগ। বুধবার বেলা সাড়ে ১০টায় মালদহের চাইল্ড লাইন প্রকল্পের কর্তাকে এই আদালতে হাজির করুন। ওঁকে জানাতে হবে, শিশুকন্যাটি কোথায় রয়েছে।’’
দু’বছরের একটি শিশুর হদিস মিলছে না ডায়মন্ড হারবারেও। তবে শিশুকন্যা নয়, সেটি শিশুপুত্র। পুলিশ জানায়, গত ২১ অক্টোবর ডায়মন্ড হারবার মহকুমা হাসপাতাল থেকে দু’বছরের ছেলেটি নিখোঁজ হয়েছে। তার হদিস পেতে বিচারপতি রায়ের ডিভিশন বেঞ্চে মামলা করেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, ওই শিশুটিকে চিকিৎসার জন্যই ডায়মন্ড হারবার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। তার অভিভাবকদের অভিযোগ, তাঁদের দূরসম্পর্কের এক আত্মীয়া শিশুটিকে পাচার করে দিয়েছেন।
সরকারি আইনজীবী সাবির আহমেদ জানান, শিশুটির হদিস না-মিললেও ওই মহিলা-সহ পাঁচ জনকে ইতিমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার পরেই শিশুটির হদিস পেতে সিআইডি-কর্তাকে বুধবার আদালতে হাজির থাকার নির্দেশ দেয় ডিভিশন বেঞ্চ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy