Advertisement
০২ মে ২০২৪

পেনশন তুলতে গিয়ে বাদুড়িয়া ও রায়দিঘিতে দুই বৃদ্ধের মৃত্যু

এ বার ব্যাঙ্কে পেনশনের টাকা তুলতে গিয়ে একই দিনে রাজ্যের দু’প্রান্তে দু’জনের অস্বাভাবিক মৃত্যু হল।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৪:৪৫
Share: Save:

এ বার ব্যাঙ্কে পেনশনের টাকা তুলতে গিয়ে একই দিনে রাজ্যের দু’প্রান্তে দু’জনের অস্বাভাবিক মৃত্যু হল।

এক জন বাদুড়িয়ার রবীন মুখোপাধ্যায় (৭২)। অন্য জন রায়দিঘির ভীষ্মদেব নস্কর (৮০)। শুক্রবার দু’জনেই ব্যাঙ্কে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন। দু’টি ক্ষেত্রেই অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করেছে পুলিশ। দেহ দু’টি ময়না-তদন্তে পাঠানো হয়েছে। পুলিশের অনুমান, দু’জনেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন।

নোট-দুর্ভোগে এ রাজ্যে মৃত্যু-মিছিল শুরু হয়েছে আগেই। কিছুদিন আগে ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়ানোর ধকল সহ্য করতে না পেরে দিনহাটায় এক প্রৌঢ়ের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছিল। তার পরে বর্ধমানের কালনায় এক ভাগচাষির অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনাতেও জড়িয়ে যায় নোট বাতিল কাণ্ড। ডাকঘরে টাকা তুলতে গিয়ে হৃদ্‌রোগে মৃত্যু হয় চুঁচুড়ার এক বৃদ্ধের। একই ভাবে মারা যান বীরভূমের এক প্রাক্তন সেনাকর্মীও। সেই তালিকায় যুক্ত হল আরও দু’জনের নাম। শুক্রবার ওই দু’জনের মৃত্যুর কথা উল্লেখ করে নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্রতিদিন মানুষ হয়রান হচ্ছে, এটিএমে টাকা নেই। লাইনে দাঁড়িয়ে মানুষ মরে যাচ্ছে। এই নিয়ে গোটা দেশে ৮৪ জন মারা গেল। ওরা আর কত মৃত্যু চায়!’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রবীনবাবুর বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার বাদুড়িয়ার ঘোষপুর এলাকায়। তিনি কেন্দ্র সরকারের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী। বাড়িতে একাই থাকতেন। ছেলেমেয়ে কলকাতায় থাকেন। এ দিন দুপুরে পেনশনের টাকা তুলতে রবীনবাবু একাই হাবরা থানার মছলন্দপুর এলাকায় স্টেট ব্যাঙ্কের শাখায় যান। শাখাটি তাঁর বাড়ির এক কিলোমিটারের মধ্যেই। সেখানে পেনশনভোগীদের টাকা তোলার আলাদা লাইন ছিল। জনাপাঁচেকের পিছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন রবীনবাবু। ২৮০০ টাকা তুলে তিনি এক জনের আসার অপেক্ষায় ব্যাঙ্কেই ঘুরছিলেন। হঠাৎই অসুস্থ বোধ করায় সেখানকার একটি বেঞ্চে বসে পড়েন।

ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা গিয়েছে, বেঞ্চে বসে ঘামছিলেন রবীনবাবু। পড়েও যান। তাঁকে প্রথমে স্থানীয় এক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। খবর দেওয়া হয় পুলিশে। মছলন্দপুর ফাঁড়ির পুলিশ এসে তাঁকে হাবরা স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন।

বয়স ৮০ ছুঁলেও রায়দিঘির কঙ্কনদিঘি গ্রামের ভীষ্মদেববাবুও একাই ভ্যানে চড়ে গিয়েছিলেন বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে রায়দিঘি বাজারে, ইউনাইটেড ব্যাঙ্কের শাখায়। স্থানীয় প্রাথমিক স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ওই বৃদ্ধ বৃহস্পতিবারও ব্যাঙ্ক থেকে কিছু টাকা তুলেছিলেন। এ দিন গিয়েছিলেন পেনশনের ১২ হাজার টাকা তুলতে। ‘ভাউচার’ লেখার আগেই তিনি পড়ে যান। তাঁকে রায়দিঘি গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন। গ্রাহকদের একাংশের অভিযোগ, ব্যাঙ্ক থেকে মাত্র দু’হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছিল। সে কথা শুনেই ভাউচার লেখার আগে পড়ে যান ওই বৃদ্ধ।

ব্যাঙ্ক ম্যানেজার প্রদীপ কুমার ওই অভিযোগ মানেননি। তিনি বলেন, ‘‘পেনশন তোলার তেমন লাইন ছিল না। ওই বৃদ্ধকে দাঁড়াতেও হয়নি। অনেকেই দু’হাজারের বেশি টাকাও তুলেছেন। ব্যাঙ্কের তরফে টাকা তোলার কোনও মাপকাঠি নির্দিষ্ট করা হয়নি। ভাউচার লিখতে গিয়েই ওই বৃদ্ধ অসুস্থ হয়ে পড়েন।’’

ভীষ্মদেববাবুর তিন ছেলে, তিন মেয়ে। সকলেই বিবাহিত। ছোট ছেলে পঙ্কজের কাছেই থাকতেন বৃদ্ধ। পঙ্কজ বলেন, ‘‘বয়স হলেও বাবা সুস্থই ছিলেন। বাবাকে বলেছিলাম, তুমি ব্যাঙ্কে যাও। আমি একটু পরে গিয়েই নিয়ে আসছি। কিন্তু এল তাঁর মৃত্যুসংবাদ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Elderly Death Pension
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE