শিক্ষিকা ফুলরেণু সরকারকে খুনের অভিযোগে এক জন ধরা পড়লেও পুলিশের মতে এখনও অন্তত চার জন বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে পুরোপুরি নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না হিঙ্গলগঞ্জের কনেকনগরের বাসিন্দারা।
কনেকনগের দোতলা বাড়িতে বেশির ভাগ সময়ে একাই থাকতেন ফুলরেণুদেবী। তাঁর স্বামী দীনবন্ধু সরকার বেলুড় বিদ্যামন্দির হস্টেলের কর্মী। ছেলে শঙ্কর কলকাতায় পড়াশোনা করেন। তাঁরা মাঝে মধ্যে যাতায়াত করতেন ওই বাড়িতে। স্থানীয় সান্ডেলেরবিল শ্রীরামকৃষ্ণ সেবা মিশনের গদাধর পাঠশালায় ছোট ছেলেমেয়েদের পড়াতেন ফুলরেণু। পাশাপাশি তাঁরই এক নিকটাত্মীয়ের সঙ্গে একটি অর্থলগ্নি সংস্থায় যুক্ত ছিলেন। ১৩ জুলাই রাতে দুষ্কৃতীরা তাঁকে ধারাল অস্ত্র দিয়ে নৃশংস ভাবে কুপিয়ে খুন করে। ঘটনায় যুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে রাস্তা অবরোধ, বিক্ষোভ, এমনকী পুলিশ কর্মীদের মারধরের ঘটনাও ঘটে। তখন পুলিশ জানিয়েছিল, খুনিদের অনেকে গ্রামবাসীদের ভিড়ে মিশে বিক্ষোভে সামিল হয়েছে।
খুনের অভিযোগে গ্রামেরই যুবক বিশ্বজিৎ মণ্ডল ওরফে বাপিকে পুলিশ গ্রেফতার করে কিছু দিন আগে। জানা যায়, পুলিশ পেটানোর দিন সে ছিল বিক্ষোভকারীদের সামনের সারিতে। সংবাদপত্রে তার ছবিও ছাপা হয়েছিল। বর্তমানে সে জেলহাজতে। হিঙ্গলগঞ্জ থানার ওসি মনিরুল ইসলাম সরকারের দাবি, জেরায় বাপি খুনের কথা স্বীকার করেছে। বাকি অভিযুক্তদের নামও জানিয়েছে সে।
কিন্তু কেন খুন হলেন ফুলরেণু?
পুলিশের দাবি, বাপির কুপ্রস্তাবে ওই শিক্ষিকা রাজি না হয়নি। সেই আক্রোশেই লোকজন নিয়ে তাঁর উপরে চড়াও হয় বাপি। যদিও বাপির বাবার বক্তব্য, কোনও তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই ছেলেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শিক্ষিকাকে খুনে জড়িতেরা গ্রেফতার না হওয়ায় গ্রামবাসীদের বিক্ষোভে সামিল হওয়ার জন্যই বাপিকে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসিয়েছে পুলিশ। বস্তুত, বাপিকে ৮ দিন নিজেদের হেফাজতে রেখেও তদন্ত যে খুব বেশি দূর এগোয়নি, তা বলাই বাহুল্য। গ্রামবাসীদের বক্তব্য, খুনের অস্ত্রটুকুও উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। ফলে মামলাও কতটা জোরদার হবে, তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
বাকি অভিযুক্তেরা ধরা পড়ছে না কেন? প্রশ্নের উত্তরে পুলিশের এক কর্তা জানান, উপযুক্ত তথ্য-প্রমাণ জোগাড়ের জন্য সময় নেওয়া হচ্ছে। বাপিকে ধরতেও যে কারণে বেশ কিছুটা সময় লেগে গিয়েছিল। নতুন করে কাউকে গ্রেফতার করতে না পারলেও পুলিশ দফায় দফায় জেরা করেছে ফুলরেণুর স্বামী, ছেলে ও বাপির এক আত্মীয়কে। বাপিকে নিয়ে সন্দেশখালির কয়েক জায়গায় দুষ্কৃতীদের খোঁজ চালানো হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। এ দিকে, গ্রামবাসীদের বক্তব্য, খুনের ঘটনায় সব অভিযুক্ত যেহেতু এখনও ধরা পড়েনি, ফলে আতঙ্ক পিছু ছাড়ছে না। খুনের পর থেকে বেশ কয়েকটা মাস ভয়ে কাটিয়েছেন তাঁরা। রাতে একা বেরোতে সাহস করতেন না অনেকেই। মহিলারা খুব প্রয়োজনেও দল বেঁধে বেরোনোই পছন্দ করতেন। বাপিকে গ্রেফতারের পরে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও এখনও গ্রামের পরিবেশ পুরোপুরি আতঙ্কমুক্ত নয়।
পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, ফুলরেণু যে অর্থলগ্নি সংস্থার কাজে যুক্ত ছিলেন, সেখানকার টাকা আত্মসাতের কোনও চক্রান্তে জড়িয়েও তাঁকে খুনের ঘটনায় সামিল হতে পারে কেউ। গ্রামবাসীদের একাংশের আবার দাবি, খুনের কারণ খুঁজতে গিয়ে কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বেরোতে পারে। তাই গড়িমসি করছে পুলিশ। সীমান্তে পাচারচক্রের সঙ্গে এই খুনের সম্পর্ক আছে কিনা, সে প্রশ্নও তুলছেন তাঁরা। সব দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
দীনবন্ধুবাবু বলেন, “খুন যে-ই করুক, আমরা চাই তাদের চরম শাস্তি হোক। না হলে আমরা শান্তিতে ঘুমোতে পারব না।” একই ভাবে আশঙ্কায় গ্রামবাসীও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy