Advertisement
০৫ মে ২০২৪

শয্যা মোটে ১১, ওয়ার্ডে ঠাসাঠাসি ১৬০ মা-শিশু

হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের এমনই অবস্থা। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, সরকারি ভাবে শিশু ওয়ার্ডে শয্যার সংখ্যা মাত্র ১১টি। এ দিকে এখন শিশু ভর্তি থাকছে কোনও দিন ৭০, কোনও দিন আবার ৮০ জন। সঙ্গে থাকছেন তাদের মায়েরাও।

ঠাসাঠাসি: এ ভাবেই থাকতে হচ্ছে। ছবি: সুজিত দুয়ারি।

ঠাসাঠাসি: এ ভাবেই থাকতে হচ্ছে। ছবি: সুজিত দুয়ারি।

সীমান্ত মৈত্র
হাবড়া শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:০৯
Share: Save:

একটি শয্যাতে ঠাসাঠাসি করে শুয়ে আছে তিনটি শিশু। সঙ্গে তাদের মায়েরা। ওয়ার্ডের মেঝেতে বিছানার চাদর, বালিশ পেতেও অসুস্থ শিশুকে নিয়ে রয়েছেন মায়েরা। গোটা ওয়ার্ডে পা ফেলার মতো জায়গা নেই, হাঁটা তো দূরের কথা। এমনই পরিস্থিতির মধ্যে চিকিৎসা চলছে অসুস্থ শিশুদের।

হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের এমনই অবস্থা। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, সরকারি ভাবে শিশু ওয়ার্ডে শয্যার সংখ্যা মাত্র ১১টি। এ দিকে এখন শিশু ভর্তি থাকছে কোনও দিন ৭০, কোনও দিন আবার ৮০ জন। সঙ্গে থাকছেন তাদের মায়েরাও।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজেরা উদ্যোগী হয়ে আরও গোটা ২০টি শয্যার ব্যবস্থা করেছেন ঠিকই। কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।

হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে, বর্তমান পরিকাঠামোতে শয্যা সংখ্যা বাড়ানো বা নতুন ওয়ার্ড তৈরি করা সম্ভব নয়। ফলে হাসপাতালে অসুস্থ শিশুদের চিকিৎসা করাতে নিয়ে এসে দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হচ্ছে শিশুর আত্মীয়দের।

হাসপাতালে বর্তমানে একটি শয্যায় চারটি অসুস্থ শিশুও রয়েছে। এমনকী জ্বরে আক্রান্ত শিশুকে নিয়ে মা মেঝেতে মাদুর, চাদর পেতে বসে রয়েছেন—এমন দৃশ্যও দেখা যায়। জ্বরে আক্রান্ত এক শিশুর মা মেঝেতে বসে বলছিলেন, ‘‘কী করব এখানে তো কোনও শয্যাই খালি নেই। বাধ্য হয়ে নীচে থাকতে হচ্ছে।’’

একই শয্যায় এক মহিলাকে তার শিশু নিয়ে আরও দু’জন রোগীর সঙ্গে থাকতে হচ্ছে। মহিলার কথায়, ‘‘এমন পরিস্থিতিতে বেডে শোয়া যায় না। ছেলের পাশে বসে থেকেই রাত কাটাতে হচ্ছে।’’

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিবারই এই সময় অসুস্থ শিশুর চাপ বাড়ে। জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত রোগী বেশি হয়। শীতকালে আবার অসুস্থ শিশুর সংখ্যা কমে ১০টায় নেমে যায়।

এখন হাসপাতালে আসা অসুস্থ শিশুদের বেশিরভাগই শ্বাসকষ্টের রোগী। সঙ্গে জ্বরে আক্রান্ত শিশুও রয়েছে। সমস্যার কথা মেনে নিয়েছেন সুপার শঙ্করলাল ঘোষও। তিনি বলেন, ‘‘আমরা তো আর কোনও রোগীকে বেড নেই বলে ফিরিয়ে দিতে পারি না। ফলে সকলকেই ভর্তি নিতে হয়।’’ তাঁর দাবি, শ্বাসকষ্টে ভোগা শিশুদের দিন পাঁচেক নেবুলাইজেশন করতে হয়। তার আগে তাদের ছুটি দেওয়া সম্ভব নয়। এই সময়ের মধ্যে আবার নতুন অসুস্থ শিশুও চলে আসছে। ফলে চাপ বেড়েই চলেছে।

জ্বরে আক্রান্ত শিশুকে মেঝেতে রেখে চিকিৎসা করালে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে বলে চিকিৎসকেরা মনে করেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, সে কারণে ওয়ার্ডটি নিয়মিত সাফাই ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা হয়।

কিন্তু শিশুর আত্মীয়দের অভিযোগ, ওয়ার্ডে পাখা চললেও গরমে অনেকে হাঁসফাঁস করছে। কয়েকজন মা শিশুকে কোলে নিয়ে হাতপাখা দিয়ে হাওয়া করছেন। সকলের দাবি, শিশু ওয়ার্ডটি আরও বড় করে বেড সংখ্যা বাড়ানো উচিত।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, শিশু ওয়ার্ডে রোজ কত শিশু ভর্তি হচ্ছে, তার হিসাব স্বাস্থ্য দফতরে পাঠানো হয়। ফলে স্বাস্থ্য দফতর গোটা বিষয়টি সম্পর্কে জানে। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের একটি প্ল্যানিং সেল রয়েছে। তারাই বিষয়টি দেখছেন।

হাবড়া হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির সদস্য তথা পুরপ্রধান নীলিমেশ দাস জানিয়েছেন, হাসপাতালে এখন মোট শয্যার সংখ্যা ১৩১। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের কাছে ৩৩০ শয্যা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়ছ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Congested Hospital Baby ward
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE