কান জুড়ে থাকা হেডফোনে গমগম করে বাজছিল গান। পরিচিত একজনকে দেখতে পেয়ে রেল লাইন টপকাতে গেলে শনিবার সকালে ব্যারাকপুর স্টেশনে আপ কাটোয়া লোকালের ধাক্কায় ছিটকে পড়েছিলেন শঙ্খদীপ মুখোপাধ্যায় (২০)।
তখনও কথা বলার অবস্থা ছিল। তাঁকে ঘিরে জমে থাকা ভিড়ের দিকে তাকিয়ে বলেছিলেন, ‘‘আমি আর বাঁচব না।’’ তবে চেষ্টার কসুর করেননি অন্য রেল যাত্রী থেকে রেল পুলিশের কর্মীরা। একটি গাড়িতে করে রক্তাক্ত শঙ্খদীপকে ব্যারাকপুর বিএন বসু মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করানো হয়। খবর দেওয়া হয় ব্যারাকপুরের কে এন মুখার্জি রোডে তাঁর বাড়িতে। বিএন বসু মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানান, অবস্থা সঙ্কটজনক হওয়ায় শঙ্খদীপকে কলকাতার আর জি কর হাসপাতালে স্থানান্তরিত করানো হয়েছিল। ডানলপ পার হওয়ার পরই অ্যাম্বুল্যান্সেই নিস্তেজ হয়ে পড়েন তিনি। বেলঘরিয়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে জানান।
দুর্ঘটনার পরেও ফেরেনি হুঁশ। হেডফোন গুঁজে একই জায়গায় রেললাইন পারাপার। নিজস্ব চিত্র
শঙ্খদীপের বাবা তারকনাথ মুখোপাধ্যায় ছবি আঁকেন। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে নির্বাক হয়ে গিয়েছেন। ছেলের ছবি আঁকড়ে কেঁদে চলেছেন মা মাধুরীদেবী। নিউটাউনে একটি বেসরকারি হাসপাতালের কফি শপে কাজ করতেন শঙ্খদীপ। সকালে সওয়া ৮টা নাগাদ কাজে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন তিনি। ‘গানের পোকা’ বলে বন্ধু মহলে পরিচিত ছিলেন। দিন রাত কানে হেডফোন লাগানো থাকত। রেল পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শিয়ালদহমুখী ট্রেন ধরতে ২ নম্বর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকা শঙ্খদীপ এক পরিচিতকে দেখে লাইন টপকে ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। পৌনে ৯টা নাগাদ একের এ প্ল্যাটফর্মে ঢুকছিল আপ কাটোয়া লোকাল। তখনই পা বাড়িয়েছেন ট্র্যাকের মধ্যে। কারও চিৎকার কানে যায়নি দু’কানে বড় হেডফোন লাগানো থাকায়। ট্রেনের গতি কম থাকলেও ধাক্কায় ছিটকে পড়া তরুণের মাথা ফেটে যায়, কান ও চোখ দিয়ে রক্ত বেরোতে থাকে। রাজু নামে পরিচিত একজন ফোনে খবর দেন তারকনাথবাবুর পাশের বাড়িতে। শঙ্খদীপের এক জামাইবাবু সুপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ওর কানে হেডফোন ছিল। ব্যাগের মধ্যেও আরেকটা হেডফোন ছিল। এত গান শুনতে ভালবাসত, গানই ওর প্রাণ নিল।’’