Advertisement
E-Paper

দেহ এল পাঁচ মৎস্যজীবীর

রবিবার রাত থেকেই খারাপ হতে শুরু করেছিল আবহাওয়া। ঝড়-জলের রাতে স্বামীর জন্য মন কেমন করছিল যোগমায়া দাসের। পেশায় মৎস্যজীবী স্বামীকে ফোন করে জ্ঞিগেস করেছিলেন, ‘‘ফিরে আসবে?’’ স্বামী তপন দাস ফেরেননি। তবে যখন ফিরলেন তখন তাঁর দেহে আর প্রাণ নেই।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০১৬ ০২:১৮
মন্ত্রীর আশ্বাস। ছবি: শান্তশ্রী মজুমদার।

মন্ত্রীর আশ্বাস। ছবি: শান্তশ্রী মজুমদার।

রবিবার রাত থেকেই খারাপ হতে শুরু করেছিল আবহাওয়া। ঝড়-জলের রাতে স্বামীর জন্য মন কেমন করছিল যোগমায়া দাসের। পেশায় মৎস্যজীবী স্বামীকে ফোন করে জ্ঞিগেস করেছিলেন, ‘‘ফিরে আসবে?’’ স্বামী তপন দাস ফেরেননি। তবে যখন ফিরলেন তখন তাঁর দেহে আর প্রাণ নেই।

সোমবার সন্ধ্যায় মাছ ধরে কাকদ্বীপে ফেরার পথে মাঝ সমুদ্র থেকে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল ৮টি ট্রলার। খোঁজ মিলছিল না ১০৪ জন মৎস্যজীবীর। পরে তাঁদের মধ্যে অনেকে ফিরে এলেও শনিবার রাতে ভারত-বাংলাদেশ জল সীমানায় পাঁচ জনের দেহ উদ্ধার হয়। পুলিশ জানিয়েছে, উদ্ধার করার দেহগুলির মধ্যে এক জনকে সনাক্ত করা যায়নি। অন্যদের নাম তপন দাস (৫০), দীপঙ্কর দাস (৪০), রতন দাস (২৫) এবং হরিপদ দাস (৩৫)। এদের মধ্যে তপনবাবু এবং দীপঙ্করবাবু এফবি মা মহাগৌরী ট্রলারে ছিলেন। রতনবাবু এফবি প্রসেনজিৎ ১ ট্রলারে ছিলেন। হরিপদবাবু ছিলেন এফবি পল্লবী ট্রলারের মাঝি।

প্রশাসন এবং মৎস্যজীবী সংগঠন সূত্রে জানানো হয়েছে, এখনও পর্যন্ত তিন জনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে নির্মল দাস ডায়মন্ড হারবার, অনুপ দাস কাকদ্বীপ এবং হরিকমল দাস বাংলাদেশের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। রবিবার রাত পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছেন ২৩ জন মৎস্যজীবী। প্রশাসন সূত্রের খবর, নিখোঁজদের খোঁজে ভারত-বাংলাদেশের জল সীমান্তে তল্লাশি চালাচ্ছে উপকুলরক্ষীবাহিনী। ফের নতুন করে নিম্নচাপ তৈরি হওয়ায় এখন মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করেছে আবহাওয়া দফতর।

কাকদ্বীপ মহকুমা হাসপাতালে দেহ সনাক্ত করতে এসে মৃত তপন দাসের স্ত্রী যোগমায়াদেবীর আক্ষেপ, ‘‘একটু সময়ের জন্য যোগাযোগ হয়েছিল ফোনে। জিজ্ঞাসা করলাম, এই দুর্যোগে সমুদ্রে যাবে? তখন উনি পাথরপ্রতিমায় ছিলেন। জানালেন, দেখি কী হয়? সেই শেষ কথা।’’ যোগমায়াদেবী তবু এটুকু কথা বলেছিলেন, কিন্তু বাকিদের সেই সুযোগও হয়নি। মৃত রতন দাসের স্ত্রী শিপ্রাদেবী স্বামীর সঙ্গে ভাড়া বাড়িতে থাকতেন। ছেলের বয়স সাড়ে তিন বছর। যাঁদের দেহ উদ্ধার হয়েছে তাঁরা ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী।

এ দিন কাকদ্বীপে দেহগুলি ময়না তদন্তের সময় ছিলেন সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরা। তিনি বলেন, ‘‘মৃতের পরিবারকে মৎস্য দফতর থেকে ২ লক্ষ টাকা, বিমার ১ লক্ষ টাকা ছাড়াও মুখ্যমন্ত্রীর তহবিল থেকে আরও ২ লক্ষ টাকা করে সাহায্য করা হবে। যত দিন না ক্ষতিপূরণের টাকা আসছে তত দিন কাকদ্বীপের এসডিও এবং বিডিওকে সাহায্যের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।’’

এ দিকে, এক দুর্যোগ কাটতে না কাটতেই বঙ্গোপসাগরে ফের হাজির আরও একটি নিম্নচাপ। মৎস্যজীবী সংগঠন সূত্রে জানা গিয়েছে, আবহাওয়া দফতর থেকে বলা হয়েছে ১৬ আগস্ট ফের উত্তাল হতে পারে সমুদ্র। মৎস্যজীবীদের এখন সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। মৎস্যজীবী সংগঠনের নেতা বিজন মাইতি, সতীনাথ পাত্ররা জানিয়েছেন, শুক্রবার কাকদ্বীপ মহকুমার প্রায় ১২০০ ট্রলার গভীর সমুদ্রে পাড়ি দিয়েছিল। তাদের ফেরানোর জন্য রবিবার থেকেই বার্তা পাঠানো শুরু হয়েছে।

Fisherman
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy