Advertisement
১৮ মে ২০২৪

প্রসব নিয়ে নজরদারি প্রশাসনের

অসীমাই শুধু নন, সাগরের সুধাময়ী পাত্র, নামখানার দেবকী হালদারদের কাছেও একই ভাবে আশাকর্মীরা বাড়িতে পৌঁছে গিয়েছেন, যাতে হাসপাতালে সুস্থ সন্তানের জন্ম দিতে পারেন মায়েরা।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

শান্তশ্রী মজুমদার
কাকদ্বীপ শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৭ ০১:৫৫
Share: Save:

নভেম্বরের শুরুতে পাথরপ্রতিমার শ্রীধরনগরের সন্তানসম্ভবা অসীমা জানার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন স্থানীয় আশাকর্মী। প্রসবের দিন কবে রয়েছে, তা জেনে নিয়ে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তির প্রক্রিয়া নজরদারি করেছেন তিনিই।

অসীমাই শুধু নন, সাগরের সুধাময়ী পাত্র, নামখানার দেবকী হালদারদের কাছেও একই ভাবে আশাকর্মীরা বাড়িতে পৌঁছে গিয়েছেন, যাতে হাসপাতালে সুস্থ সন্তানের জন্ম দিতে পারেন মায়েরা।

কিছু দিন আগেও পরিস্থিতি এমনটা ছিল না। গত তিন মাসে কাকদ্বীপ মহকুমায় প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন এসেছে। নদী-খাঁড়ি সমৃদ্ধ প্রত্যন্ত এলাকায় বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নিয়ে কাকদ্বীপ মহকুমা। বাড়িতেই সন্তান প্রসবের রীতি ছিল বেশির ভাগ ক্ষেত্রে। এখন প্রায় সব প্রসবই হচ্ছে হাসপাতালে। এলাকায় তিন মাস আগেও প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের হার ছিল ৮৩.৮৫ শতাংশ। এখন তা পৌঁছে গিয়েছে ৯৯ শতাংশে।

প্রশাসনের কড়া পদক্ষেপের জেরেই এটা সম্ভব হচ্ছে বলে দাবি কর্তাদের। জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও বলেন, ‘‘সারা জেলাতেই এই ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। তবে কাকদ্বীপ মহকুমার মতো এলাকায় তা পিছিয়ে ছিল। আমরা এখন আশা কর্মী থেকে শুরু করে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, পঞ্চায়েত ব্লক এবং মহকুমা সব প্রশাসনিক স্তরকে প্রসবের সঙ্গে যুক্ত করতে পেরেছি বলেই এটা সম্ভব হয়েছে।’’

কী ভাবে হল এই অসাধ্যসাধন?

জেলাশাসক প্রায় তিন মাস আগে নির্দেশ দিয়েছিলেন, সন্তানসম্ভবাদের বাড়িতে পৌঁছে আশা কর্মীদের নজরদারি করতে হবে। যাতে বাচ্চা সুস্থ ভাবে হাসপাতালেই প্রসব হতে পারে। যেখানে আশাকর্মী নেই, সেখানে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরাই এই কাজ করছেন। রোগীর প্রসবের দিন জেনে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া পর্যন্ত দায়িত্ব নিতে হচ্ছে আশা কর্মী বা অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের। প্রতি শনিবার পঞ্চায়েত থেকে ব্লকে যাচ্ছে যাবতীয় প্রসবের রিপোর্ট, তা মহকুমা হয়ে জেলা পর্যন্ত পৌঁছে যাচ্ছে মাসের শেষে। মাঝখানে কারও গাফিলতি থাকলে তাকে জবাবদিহি করতে হচ্ছে।

অসীমার কথায়, ‘‘জোয়ার-ভাটার জন্য ঘাটে অপেক্ষা করতে হত। নৌকোয় বড় এলাকায় পৌঁছেও হাসপাতালের নিশ্চয়যানের (সন্তান সম্ভবাদের জন্য সরকারি অ্যাম্বুল্যান্স) জন্য অপেক্ষা করে থাকতে হত। এ সব ঝামেলা পোহাতে হত বাড়ির লোকজনকেই। এখন কিন্তু আশা কর্মীরাই আমাদের কাছে এসে সব ব্যবস্থা করছেন।’’ অনেক সময়ে প্রত্যন্ত এলাকায় অ্যাম্বুল্যান্স যেতে চাইত না বলেও জানালেন অনেকে।

ডায়মন্ড হারবার স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দেবাশিস রায় বলেন, ‘‘কাকদ্বীপে আমাদের আধিকারিকদের অনেকটা বেশি খাটতে হয়েছে। বিচ্ছিন্ন অনেক দ্বীপে এই কাজ করে ওঠা অনেক কষ্টকর। তবে আমরা পুরোপুরি প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের অভ্যেস তৈরি করতে চাইছি।’’

কাকদ্বীপের মতো প্রত্যন্ত এলাকায় মূল সমস্যা জোয়ার-ভাটার। তাকে উপেক্ষা করে সন্তান সম্ভবাদের এনে ‘মাদার্স হাব’-এ রাখার প্রক্রিয়ায় জোর দেওয়া হয়েছে। মহিলাদের প্রসবের জন্য সাগর, পাথরপ্রতিমা এবং নামখানায় ১২ শয্যার ‘মাদার্স হাব’-এ সন্তান সম্ভবারা এসে ৭-১০ দিন থেকে প্রসব করছেন। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা চালিত গোষ্ঠী প্রসব কেন্দ্রগুলিকেও নিজেদের নজরদারির মধ্যে এনেছে স্বাস্থ্য দফতর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Surveillance parturition Administration
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE