আলোয় ঝলমল করছে গোটা রাজ্য। প্রতিমার কারুকাজ দেখে মুগ্ধ দর্শক। কিন্তু প্রতিবারের মতোই এই রোশনাইয়ের মধ্যে আরও একবার হারিয়ে যেতে বসেছে মৃৎশিল্পীদের সমস্যাগুলির কথা। প্রতিবারই পুজোর আগে আগে এ সব নিয়ে নানা কথা ওঠে। কিন্তু উৎসবের আলো ভেসে যায় সে সব।
সুন্দরবনের মৃৎশিল্পীদের কথাই ধরা যাক। এক সময়ে সুন্দরবন এলাকার বিখ্যাত তাঁত শিল্প, বাটিক হারিয়ে গিয়েছে সরকারি সাহায্যের অভাবে। মৃৎশিল্পীদের অবস্থাও দিন দিন খারাপ হচ্ছে।
মৃৎশিল্পীদের অভিযোগ, যে ভাবে দিনের পর দিন জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে প্রতিমা তৈরি করে আগের মতো লাভ পাওয়া যাচ্ছে না। প্রতিযোগিতার বাজারে টিঁকে থাকতে গিয়ে সামান্য লাভেই প্রতিমা বিক্রি করে দিতে হচ্ছে। ক্যানিং ১ ব্লকে প্রায় ১৮ জন মৃৎশিল্পী আছেন। তাঁদের অনেকেই এখন ওই পেশা থেকে সরে আসতে চাইছেন। ওই সব মৃৎশিল্পীরা জানালেন, আগে একটি থিমের প্রতিমা তৈরি করে প্রায় ৭-৮ হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ করা যেত। কিন্তু এখন সেই প্রতিমা তৈরি করে ১-২ হাজার টাকার বেশি লাভ থাকে না। আগের তুলনায় প্রতিমা তৈরির জিনিসপত্রের দাম কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছে। আগে এক গাড়ি মাটি কিনতে খরচ পড়ত ৩ হাজার টাকা। এখন সেই মাটি কিনতে খরচ পড়ছে ৭ হাজার টাকা। আগের যে দড়ির দাম ছিল ৫২ টাকা কেজি, এখন সেই দড়ির দাম ৯৮ টাকা। আগে ১ কাউন খড়ের দাম ছিল ২৩০ টাকা এখন সেই খড়ের দাম ৮০০ টাকা। একটি বাঁশের দাম ছিল ১২০ টাকা এখন তা দাঁড়িয়েছে ২৮০ টাকায়। পাটের দাম ছিল প্রতি কেজি ৩০ টাকা। এখন সেই পাটের দাম ১০০ টাকা। প্রতিমাকে সাজাতে গয়নার দাম পড়ত ৮০০ টাকা। এখন সেই গয়নার দামই ২২০০ টাকা। প্রতিমার চুলের দাম ছিল ৬০ টাকা কেজি। এখন তার দাম দেড়শো টাকা। শ্রমিকদের মজুরিও বেড়েছে পাশাপাশি।
ক্যানিং ১ ব্লকের মাতলা ১ পঞ্চায়েতের তৃণমূলের প্রাক্তন উপ প্রধান তথা বর্তমান পঞ্চায়েত সদস্য পেশায় মৃৎশিল্পী নিতাই সুতার মাটির একচিলতে ঘরে কোনও রকমে বৌ-বাচ্চা নিয়ে বসবাস করেন। সেখানেই প্রতিমা বানান। তাঁর কারখানায় ৬ জন শ্রমিক কাজ করেন। এ বার তিনি ৮টি ঠাকুর তৈরি বরাত পেয়েছিলেন। নিতাইবাবু ক্যানিং মৃৎশিল্পী ইউনিয়নের সভাপতি। বললেন, ‘‘যে ভাবে দিনের পর দিন জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাচ্ছে, সেই তুলনায় প্রতিমা বিক্রি করে দাম পাওয়া যাচ্ছে না। অনেকেই পেশা ছেড়ে চলে যেতে চাইছেন। সরকার যদি মৃৎশিল্পীদের জন্য কোনও অনুদান বা সহজ কিস্তিতে ঋণের ব্যবস্থা না করে, তা হলে হয় তো একদিন সুন্দরবন এলাকায় মৃৎশিল্পীরা হারিয়েই যাবে।’’
এ বিষয়ে জেলা পরিষদের সভাধিপতি শামিমা শেখ বলেন, ‘‘সুন্দরবন এলাকার যে সমস্ত শিল্পীরা আর্থিক সমস্যার মধ্যে আছেন, তাঁরা যদি ব্লকের মাধ্যমে যোগাযোগ করেন, তা হলে আমরা জেলা ইন্ডাস্ট্রিয়াল দফতরের মাধ্যমে সহযোগিতা করতে পারি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy