Advertisement
E-Paper

শ্রেষ্ঠ আসনে

বৃহস্পতিবার শিক্ষক দিবসে কলকাতার নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুশান্তকুমার ঘোষের হাতে সম্মান তুলে দেন।

সীমান্ত মৈত্র

শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৩:০৮
জয়ী: সরকারি স্বীকৃতি ছাত্রদের দেখানো হচ্ছে স্কুলে। ছবি: সুজিত দুয়ারি

জয়ী: সরকারি স্বীকৃতি ছাত্রদের দেখানো হচ্ছে স্কুলে। ছবি: সুজিত দুয়ারি

মাঠের অভাবে যেখানে রাজ্যের বহু স্কুলকে অন্যত্র গিয়ে খেলাধুলা করতে হয়, সেখানে এই স্কুলে রয়েছে দু’ দু’টি মাঠ। আর সেখানে নিয়মিত দাপিয়ে বেড়ায় ছেলের দল। তাদের তালিম দেওয়া হয় নিয়মিত। রাজ্য ও দেশের মধ্যে নানা স্তরের খেলায় স্কুলের ছেলেদের ভূমিকা নজরকাড়া। পড়াশোনার দিকেও দস্তুর মতো নজর রাখেন শিক্ষকেরা। সব মিলিয়ে অশোকনগর বয়েজ সেকেন্ডারি স্কুল (উচ্চ মাধ্যমিক) এ বার রাজ্যের সেরা স্কুলের সম্মান পেয়েছে।

বৃহস্পতিবার শিক্ষক দিবসে কলকাতার নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুশান্তকুমার ঘোষের হাতে সম্মান তুলে দেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেল, ক্রীড়া ক্ষেত্রে স্কুলটি দীর্ঘ দিন ধরেই কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে আসছে। ষাটের দশক থেকে ‘সুব্রত কাপ’ ফুটবল খেলছে এই স্কুল। ধারাবাহিক ভাবে ভাল ফল সেখানে। এ বারও সুব্রত কাপে অনূর্ধ্ব ১৪ বিভাগে স্কুলটি রাজ্য চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। দিল্লিতে মূল পর্বের খেলায় গোয়ার একটি দল এবং এয়ারফোর্সকে পরাজিত করেছিল অশোকনগর বয়েজ। তবে মণিপুরের একটি দলের কাছে তারা পরাজিত হয়।

স্কুলের একটি মাঠ ব্যবহৃত হয় ফুটবলের জন্য। অন্যটিতে চলে অ্যাথলেটিক্সের প্রশিক্ষণ। খুদে ফুটবল প্রতিভা তুলে ধরতে রয়েছে স্কুলের নিজস্ব ফুটবল অ্যাকাডেমি। স্কুলের প্রাক্তন ছাত্রদের সংগঠন ‘প্রাক্তনী’ এবং স্কুল কর্তৃপক্ষ যৌথ ভাবে অ্যাকাডেমিটি পরিচালনা করে। প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘স্কুল থেকে প্রতিভা তুলে আনতে ছাত্রদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ছাত্রদের নিয়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় যোগদান করা হয়। ক্রীড়া শিক্ষক সুরজিৎ মজুমদার ফুটবল দলের দায়িত্বে রয়েছেন।’’ স্কুল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অতীত দিনের দিকপাল ফুটবলার সমরেশ চৌধুরী এই স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র। তিনি জাতীয় দলের অধিনায়কও ছিলেন। প্রকাশ সরকার নামে এক ছাত্র এখন ইস্টবেঙ্গলে খেলছেন। স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র তড়িৎ সিংহরায় নামী অ্যাথলিট ছিলেন। যোগব্যায়ামে রথীন কুণ্ডু নামে এক ছাত্র রাজ্য ও জাতীয় স্তরে সফল হয়েছেন।

কিন্তু সেরা স্কুলের সম্মান কী ভাবে এল? প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন, ‘‘ক্রীড়া ক্ষেত্রের পাশাপাশি স্কুলের পঠন-পাঠনের মান, সামগ্রিক পরিকাঠামো, শিক্ষাচর্চার পরিবেশ— সব কিছুর দিকেই আমাদের প্রখর নজর থাকে। স্কুলে নিয়মিত সাংস্কৃতিক চর্চা হয়। সম্ভবত এই সব দিক বিবেচনা করেই সেরা স্কুলের সম্মান দেওয়া হয়েছে আমাদের।’’

পড়াশোনার পরিবেশ কেমন?

স্কূল সূত্রে জানা গেল, স্কুলে রয়েছে বড় পাঠাগার। সেখানে এক সঙ্গে ৭০ জন বসে পড়াশোনা করতে পারে। বই পড়ার প্রতি ছাত্রদের যথেষ্ট উৎসাহও দেওয়া হয়। প্রতি বছর মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের নিয়ে কর্মশালার আয়োজন করা হয়। সেখানে প্রতিটি বিষয় নিয়ে ছাত্রদের আলাদা করে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। বিভিন্ন বিষয়ের বিশেষজ্ঞ শিক্ষকদের স্কুলে আমন্ত্রণ করা হয়। স্কুল-স্তরের পড়াশোনার চর্চার পাশাপাশি উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে পড়ুয়াদের কেমন সম্ভাবনা, ভবিষ্যতে ছাত্রদের জীবিকা কী হতে পারে— তার একটা রূপরেখাও তৈরি করা হয়। এতে পড়ুয়ারা খুবই উপকৃত হয় বলে দাবি শিক্ষকদের। পড়াশোনার ক্ষেত্রে বাড়তি উৎসাহও বোধ করে ছেলেরা।

ছাত্রদের কথায়, ‘‘শিক্ষকেরা আমাদের সঙ্গে বন্ধুর মতো আচরণ করেন। স্কুলে এলে আর বাড়ি ফিরতে মন চায় না। স্কুলের লাইব্রেরিতে পড়াশোনা করার দারুণ পরিবেশ। সেটা কাজে লাগাই। তা ছাড়া, যে সব কর্মশালা হয় সেগুলিও আমাদের খুব কাজে লাগে।’’

এত কিছুর পরেও অবশ্য স্কুলের পরিকাঠামোগত কিছু সমস্যা থেকেই গিয়েছে। পঁচিশটির মধ্যে ন’টি ঘর ভগ্নদশায় পরিণত হয়েছে। স্কুলে তিনটি ল্যাবরেটরি। সেখান থেকে পলেস্তারা খসে পড়ছে। বৃষ্টি হলে ছাদ চুঁইয়ে জলও পড়ে। রয়েছে আরও একটি সমস্যা। স্কুল-সংলগ্ন এলাকায় একটি পুকুর আছে। পুকুরটির পাড় ভাঙতে ভাঙতে স্কুলের দেওয়াল পর্যন্ত চলে এসেছে। স্কুলের তরফেই বৃক্ষ রোপণ করে প্রাথমিক ভাবে ভাঙন রোধ করার চেষ্টা চলছে। স্কুল সূত্রে জানা গেল, শিক্ষা দফতর-সহ সংশ্লিষ্ট সব মহলে জানিয়েও এখনও পর্যন্ত ভাঙন-সমস্যার
সমাধান করা যায়নি।

Ashoknagar Boys Secondary School Best School
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy