Advertisement
০৩ মে ২০২৪

ঋতুচক্র নিয়ে কুসংস্কার ভাঙতে কুলপিতে শিবির

কুলপির শ্যাওড়াতলা গ্রামের মেয়ে লতিকা দলুই নবম শ্রেণির ছাত্রী। ঋতুমতী হওয়ার পর থেকে নানা রকমের ভুল ধারণার মধ্যে ছিল সে। ওই বিশেষ দিনগুলিতে নাকি স্নান করা যায় না, বেশি লোকের সঙ্গে কথা বলতে নেই, এমন আরও নানা কিছু।

চলছে সচেতনতা শিবির। নিজস্ব চিত্র।

চলছে সচেতনতা শিবির। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঢোলাহাট শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৬ ০১:৪৫
Share: Save:

কুলপির শ্যাওড়াতলা গ্রামের মেয়ে লতিকা দলুই নবম শ্রেণির ছাত্রী। ঋতুমতী হওয়ার পর থেকে নানা রকমের ভুল ধারণার মধ্যে ছিল সে। ওই বিশেষ দিনগুলিতে নাকি স্নান করা যায় না, বেশি লোকের সঙ্গে কথা বলতে নেই, এমন আরও নানা কিছু।

মেয়েদের ঋতুচক্র নিয়ে এ রকম হাজারো ভুল ধারণা নিয়েই চলছে এলাকার আরও অনেক কিশোরী এমনকী তাঁদের মায়েরাও। মেয়েদের শরীরে ঋতু নিয়ে এ রকম নানা কুসংস্কারের প্রাচীর ভাঙতেই শনিবার কেওড়াতলা বাসনাবালা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে আয়োজন করা হয়েছিল একটি সচেতনতা শিবিরের। জেলায় এ রকম প্রচেষ্টা এই প্রথম।

এ ধরনের শিবিরে যোগ দিয়ে লজ্জার প্রাচীর তো ভেঙেইছে মেয়েরা, ঋতুচক্র নিয়ে নানা সচেতনতাও নিয়ে বাড়ি ফিরেছে স্কুলের ১৬৫ জন ছাত্রী। লতিকার কথায়, ‘‘আমি তো ভাবতেই পারছি না, এত দিন কী রকম সব ভুল ধারণা তৈরি হয়েছিল বিষয়টা নিয়ে। এ দিন না এলে বুঝতেই পারতাম না, এটা নেহাতই একটা স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। আমাদের বান্ধবীদের জানাব এখানে কী কী শিখলাম।’’ মেয়েরা অনেকেই জানায়, শিবিরে এসে তারা জানতে পেরেছে, ঋতুচক্র নিয়ে কুসংস্কার ভাঙা কতটা জরুরি।

শনিবার কলকাতা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ থেকে ওই সচেতনতা শিবিরে হাজির হয়েছিলেন অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর পারভিন বানু। শিবিরে প্রায় একাই দায়িত্ব নিয়ে মেয়েদের এবং তাঁদের মায়েদের সঙ্গে আলোচনায় মেতে ওঠেন তিনি। লজ্জার বেড়াজাল ডিঙিয়ে খোলামেলা আলোচনায় এগিয়ে এ সব নিয়ে গ্রামের মেয়েদের মুখে কথা ফুটিয়ে ছাড়েন তিনি। পরে তিনি বলেন, ‘‘এই বিষয়টি নিয়ে গ্রাম-শহরের কোনও ভেদভেদ নেই। ঋতুচক্র নিয়ে নানা রকমের সামাজিক সংস্কার রয়েছে। কিছুটা ধার্মিক সংস্কারও রয়েছে। কোনওটাকে অসম্মান না করেই বলছি, এর অনেকটাই ভুল। সব থেকে জরুরি ওই সময় সুস্থ এবং পরিচ্ছন্ন থাকা।’’ তাঁর দাবি, কিশোরীদের এই কুসংস্কারের অন্ধকার থেকে বের করতেই হবে। কারণ, তা না হলে এ থেকে নানা ধরনের সংক্রমণ ছড়ালে তারা স্বাভাবিক সন্তানের জন্ম দিতে পারবে না ভবিষ্যতে।

বিদেশে রীতিমতো ঘটা করে ঋতুকালীন স্বচ্ছতা দিবস পালন করা হচ্ছে গত কয়েক বছর ধরে। তবে ভারতের বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা তাঁদের সমীক্ষায় দেখেছে, মেয়েদের ঋতুকালীন দিনগুলিতে নানা রকম অসুবিধার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। প্রায় ৬০ শতাংশের কাছাকাছি মহিলা স্বচ্ছতা এবং পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখেন না। সচেতনতা শিবিরে বলা হয়েছে, কী ভাবে ঘরোয়া পদ্ধতিতে স্যানিটারি ন্যাপকিন তৈরি করতে হয়, কী ভাবে ব্যবহার করতে হয়। কিশোরী এবং তাদের মায়েরা মন দিয়ে শুনেছেন সে সব।

করঞ্জলীর তনুশ্রী মাইতির দুই মেয়ে স্কুলে পড়ে। তিনিও এ দিন এসেছিলেন ওই কর্মশালায়। তাঁর কথায়, ‘‘আমরাও তো এদ্দিন শুনে এসেছি, ঋতুচক্র চলাকালীন মেয়েদের নানা সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। কিন্তু যা দেখলাম, তাতে ভুল ধারণা অনেকটাই কেটে গেল।’’ ওই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা তুহিনা কামার বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলে এ রকম শিবির আগে হয়নি। আমি চাই, পরেও যাতে অন্যান্য স্কুলে এ রকম শিবির হয়। তাতে অন্তত ঋতু নিয়ে চাপা লজ্জা, অস্বস্তি এ সব‌ কেটে যাবে মেয়েদের মন থেকে। সুস্থ থাকবে তাঁরা, আত্মবিশ্বাসী হবে।’’

আন্তর্জাতিক একটি সংস্থার সঙ্গে সুস্থতা এবং পরিচ্ছন্নতার উপর নানারকমের কাজ দীর্ঘদিন থেকে করছে কলকাতার ওই ফাউন্ডেশন। তাঁদের প্রকল্প অধিকর্তা অমরেন্দ্র কুমার সিংহ বলেন, ‘‘এ রকম একটি শিবির আমরা আগে করিনি। তবে করে দেখলাম, মেয়েরা বিশেষ ভাবে উপকৃত হচ্ছে। এখানে আলোচনায়, প্রশ্নোত্তরে, ক্যুইজে এ সবের মাধ্যমে নানা শিক্ষা পেয়েছে মেয়েরা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Awareness camp Students
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE