Advertisement
E-Paper

পদ্মের ঘা সয়েই জয় ঘাসফুলের

সেই শক্ত মাটিতে এ বাপঞ্চায়েত ভোটে পদ্ম ফোটায় তাকে রাজৈনতিক মহলও গুরুত্ব দিচ্ছে। বনগাঁ ব্লকে ১টি, গাইঘাটা ব্লকে ১টি ও বাগদা ব্লকের ২টি গ্রাম পঞ্চায়েতে বিজেপি জয়ী হয়েছে। 

সীমান্ত মৈত্র ও দিলীপ নস্কর

শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৮ ০১:২৭
বাদুড়িয়ায় তৃণমূল প্রার্থী। নির্মল বসু

বাদুড়িয়ায় তৃণমূল প্রার্থী। নির্মল বসু

শাসকের খাসতালুকে ফুটল পদ্ম।

পঞ্চায়েত ভোটে এ বার বনগাঁ মহকুমার চারটি গ্রাম পঞ্চায়েতে জয়ী হল বিজেপি। একটি গ্রাম পঞ্চায়েত ত্রিশঙ্কু। এ ছাড়া, আরও কয়েকটি গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূলের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলতে শুরু করেছে বিজেপি।

তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বনগাঁ সভা করতে বহুবার জানিয়েছেন রাজনৈতিক ভাবে বনগাঁর মাটি তাঁদের কাছে ‘পুণ্যভূমি।’ ২০০৬ সালে গোটা রাজ্যে বিধানসভা ভোটে ভরাডুবির মধ্যেও মহকুমার তিনটি বিধানসভা আসনেই তৃণমূল প্রার্থীরা জয়ী হয়েছিলেন। ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত ভোট থেকে প্রতিটি ভোটেই এখানে তৃণমূল তাদের মাটি শক্ত করেছে।

সেই শক্ত মাটিতে এ বাপঞ্চায়েত ভোটে পদ্ম ফোটায় তাকে রাজৈনতিক মহলও গুরুত্ব দিচ্ছে। বনগাঁ ব্লকে ১টি, গাইঘাটা ব্লকে ১টি ও বাগদা ব্লকের ২টি গ্রাম পঞ্চায়েতে বিজেপি জয়ী হয়েছে।

সব থেকে উল্লেখযোগ্য, বামেদের সরিয়ে পঞ্চায়েতে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে বিজেপি। ব্লকের ৩৮টি গ্রাম পঞ্চায়েতের এমন কোনও পঞ্চায়েত নেই, যেখানে বিজেপি আসন পায়নি। মহকুমায় পঞ্চায়েতের মোট আসন ৭২৪টি। ভোট হয়েছে ৭০৭টি আসনে। বিজেপি পেয়েছে ২১০টি আসন। এত দিন তাদের হাতে গোটা দু’তিনেক আসন ছিল।

গাইঘাটার ধর্মপুর ২ গ্রাম পঞ্চায়েতে বিজেপি জয়ী হয়েছে। ওই পঞ্চায়েতের মোট আসন ১৬টি। বিজেপি পেয়েছে ৮টি। তৃণমূল ৬টি। নির্দল পেয়েছে ২টি আসন। পঞ্চায়েতটি ছিল তৃণমূলের দখলে। বিজেপি প্রার্থী দিয়েছিল ১১টি আসনে। নির্দল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে ৫টি আসনে। বিরোধীদের লিখিত মহাজোট তৈরি হয়েছিল এখানে।

কেন পরাজয়?

গাইঘাটায় জয়ী বিজেপি। নির্মাল্য প্রামাণিক।

ওই এলাকার তৃণমূল নেতা ও পঞ্চায়েতে জয়ী প্রার্থী সুভাষ হালদার বলেন, ‘‘দলীয় নেতৃত্বের মধ্যে কোন্দলই এর কারণ।’’ গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি তথা দলের গাইঘাটা ব্লক ১ কমিটির সভাপতি ধ্যানেশনারায়ণ গুহ বলেন, ‘‘ওই এলাকার দলের নেতাদের অহঙ্কারই আমাদের পরাজয়ের কারণ।’’

সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য রমেন আঢ্য বলেন, ‘‘ওই পঞ্চায়েতে আমাদের প্রার্থী দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু কর্মী-সমর্থকেরা মানুষের মহাজোট তৈরি করেছিলেন।’’

গাইঘাটা ব্লকের জলেশ্বর ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৪টি আসনের মধ্যে বিজেপি ও তৃণমূল পেয়েছে ৬টি করে আসন। নির্দল পেয়েছে ২টি আসন। ধ্যানেশবাবু বলেন, ‘‘এখানে আমাদের ৯ জন গোঁজ প্রার্থী ছিলেন। সে কারণে এমন ফল হয়েছে। দলের কেউ কেউ নির্দল প্রার্থীর হয়ে প্রচার করেছেন।’’

বনগাঁ ব্লকের চৌবেড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৫টি আসনের মধ্যে বিজেপি পেয়েছে ৮টি, তৃণমূল পেয়েছে ৭টি আসন। পঞ্চায়েতটি ক্ষমতা ছিল বামেদের দখলে।

বাগদা ব্লকের সিন্দ্রাণী গ্রাম পঞ্চায়েত ও কোনিয়ারা ২ গ্রাম পঞ্চায়েতে জয়ী হয়েছে বিজেপি। এ ছাড়া, বনগাঁ ব্লকের আকাইপুর, গঙ্গানন্দপুর, গাইঘাটা ব্লকের সুটিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতেও ভাল ফল করেছে তারা।

বিজেপির বারাসত জেলা সভাপতি প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মানুষের ক্ষোভের বহির্প্রকাশ হয়েছে এই রায়ে। মানুষের মহাজোট হয়েছে নিচুতলায়। যে যেখানে শক্তিশালী, মানুষ সেখানে তাকেই সমর্থন করেছে।’’

কী বলছে তৃণমূল?

দলের জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘‘সিপিএম-কংগ্রেস বিজেপিকে হাওয়া দিচ্ছে। সে জন্যই বিজেপি কয়েকটি আসন পেয়েছে।’’

ডায়মন্ড হারবার মহকুমাতেও ঘাসফুলের সঙ্গে জোর টক্কর দিয়েছে পদ্ম।

ভোটের আগে মিটিং-মিছিলে তেমন ভিড় টানতে পারেনি বিজেপি। কিন্তু নেতাদের মনোবল অটুট ছিল। অনেকেই জানিয়েছিলেন, প্রকাশ্যে এলে পুলিশের মিথ্যা মামলা কিংবা শাসকের কোপে পড়তে হবে। তাই ইচ্ছে থাকলেও অনেকে আসতে পারেন না। সেই অনুমান যে খুব অমূলক ছিল না, সেটাই দেখা গেল ভোটের ফলে।

ডায়মন্ড হারবার মহকুমায় বহু জায়গায় বিরোধীরা মনোনয়ন দিতে পারেনি। কিন্তু মন্দিরবাজার, কুলপি, মথুরাপুর ১ ও ২ এবং মগরাহাট ২ ব্লকে সার্বিক ভাবে বিরোধীরা মনোনয়ন জমা দিতে পেরেছিল।

মন্দিরবাজার ব্লকে গাববেড়িয়া পঞ্চায়েতে তৃণমূলকে পরাজিত করে দখল নিয়েছে বিজেপি। ওই ব্লকের বাকি পঞ্চায়েতগুলির বেশ কয়েকটি বিরোধীদের সঙ্গে জোট করে দখল করতে পারে, এই অবস্থায় আছে বিজেপি।

কুলপি ব্লকের কুলপি পঞ্চায়েত ছাড়াও একাধিক পঞ্চায়েতে যথেষ্ট ভাল ফল করেছে তারা। মগরাহাট ২ ব্লকেরও বেশ কয়েকটি পঞ্চায়েত দখল করেছে পদ্ম শিবির।

মথুরাপুর ২ ব্লকের রায়দিঘিতে এ বার পঞ্চায়েত দখলের পাশাপাশি বিরোধীদের সঙ্গে নিয়ে আরও কয়েকটি পঞ্চায়েত দখলের জায়গায় আছে তারা। এই সমস্ত ব্লকে যেখানে বিজেপি হেরেছে, সেখানেও ব্যবধান খুবই কম।

দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা বিজেপির সভাপতি অভিজিৎ দাস বলেন, ‘‘ভোটের নামে প্রহসন হয়েছে। পুলিশ ও শাসকদল মিলে আমাদের ভোটারদের ভয় দেখিয়েছে। প্রায় প্রতিটি ব্লকে শাসকদল ছাপ্পা ভোট, বুথ দখল করেছে। তা-ও আমরা এই ফল করেছি। আরও ভাল করতে পারতাম।’’

তৃণমূলের জেলা সহ সভাপতি শক্তি মণ্ডলের বক্তব্য, ‘‘আমরা যদি বিরোধিতা করতাম, তা হলে ওরা যে ক’টা পেয়েছে, তা-ও পেত না।’’ তৃণমূলের জেলা সভাপতি শুভাশিস চক্রবর্তী বলেন, ‘‘মানুষ উন্নয়নের প্রেক্ষিতেই ভোট দিয়েছেন। সে কারণেই শাসক দল রেকর্ড ভোটে জয়লাভ করেছে।’’

সার্বিক ভাবে শাসক দলের ভোট ব্যাঙ্ক অটুট থাকলেও বামেদের ভোট বিজেপির ঝুলিতে গিয়েছে বলে মনে করেছে রাজনৈতিক মহল।

ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের প্রায় ৯০ শতাংশ আসন শাসক দলের দখলে গিয়েছে। বাকি আসনের বেশির ভাগ বিজেপির ঝুলিতে। জয়নগর ১ ও ২, মথুরাপুর, কুলতলি বিধানসভা এলাকায় কিছু বাম প্রার্থীও জয়ী হয়েছেন।

বাম ভোট কিছুটা হলে বিজেপির ঝুলিতে গিয়েছে বলে স্বীকার করেছেন সিপিএম নেতা কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘সাময়িক ঘর বদল হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। স্থানীয় কিছু সমস্যাজনিত কারণে বাম ভোট বিজেপির ঝুলিতে গিয়েছে।’’

সহ প্রতিবেদন: শুভাশিস ঘটক

West Bengal Panchayat Elections 2018 Panchayat Elections 2018 West Bengal TMC BJP
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy