Advertisement
E-Paper

ছেলের দেহ বাড়িতে রেখে বুথে আরিফের পরিবার

দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ ঝড়-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে স্কুলের সরু বারান্দায় ভোট দেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন আরিফ আলির বাবা-মা ও স্ত্রী। দিন দু’য়েক আগে এই লাইনে দাঁড়িয়েই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গিয়েছিলেন আরিফ। 

দিলীপ নস্কর

শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৮ ০২:৫২
শেষযাত্রা: আরিফের বাড়ির সামনে দাফনের প্রস্তুতি। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল

শেষযাত্রা: আরিফের বাড়ির সামনে দাফনের প্রস্তুতি। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল

ছেলের মরদেহ আগলে রেখেছিলেন দু’দিন। যতক্ষণ না ভোট মিটবে ততক্ষণ কবর দেওয়া হবে না—এমনটাই জানিয়েছিলেন সোমবার ভোটের বলি আরিফের পরিবার। হলও তাই। আজ, বুধবার ওই ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিয়ে এলেন আরিফের বাবা-মা ও স্ত্রী। তারপরেই সৎকার হল আরিফের।

দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ ঝড়-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে স্কুলের সরু বারান্দায় ভোট দেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন আরিফ আলির বাবা-মা ও স্ত্রী। দিন দু’য়েক আগে এই লাইনে দাঁড়িয়েই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গিয়েছিলেন আরিফ।

কুলতলির মেরিগঞ্জ ১ পঞ্চায়েতের বালিচর প্রাথমিক স্কুলে সোমবার সকালে ভোট দিতে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন বছর পঁয়ত্রিশের আরিফ আলি গাজি। পাশের লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন স্ত্রী জরিনাও। সে সময় দুষ্কৃতীদের গুলি-বোমা ধেয়ে আসে। একটি গুলি আরিফের বুকের বাঁ দিকে লাগে। প্রাণ হারান আরিফ। ছেলের মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন বাবা খাজেবক্স গাজি ও মা ফতেমা বিবি।

চোখের সামনে স্বামীর মৃত্যু দেখেছেন জরিনা। মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছেন তিনিও। তবু এসেছেন ভোট দিতে। এই ভোটের লাইনে দাঁড়িয়েই তো স্বামীকে হারিয়েছেন জরিনা। চোখ মুছতে মুছতে বলেন, ‘‘গল্প করতে করতে দু’জনে একসঙ্গে ভোট দিতে এসেছিলাম। ভেবেছিলাম বাড়ি গিয়ে একসঙ্গেই জলখাবার খাব। কিন্তু ওর আর বাড়ি ফেরা হল না।’’

পরিবারে একাই রোজগেরে ছিলেন আরিফ। বছর সত্তরের খাজেবক্স বলেন, ‘‘ছেলে দিনমজুরের কাজ করত। ওর রোজগারেই সংসার চলত। এখন কী হবে তা জানি না। সরকার সাহায্যের কথা বলে ঠিকই। কিন্তু কোনও সরকারি সাহায্যই পাইনি।’’ তিনি জানান, তবুও শাসকদলের সঙ্গে বেশ কয়েক বছর ধরে আমরা রয়েছি। মেরিগঞ্জের বালিচর নয়াপাড়ায় পরিবার নিয়ে থাকতেন আরিফ। তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর খবর পেয়ে এলাকার তৃণমূল নেতারাও বাড়িতে এসেছেন। মিলেছে প্রচুর আশ্বাসও। কিন্তু কতটা কী হবে সেটাই এখন দেখার।

জরিনা বলেন, ‘‘এখানেই আমার স্বামীর গুলি লাগে। লুটিয়ে পড়েছিল। কত রক্ত। ভিজে গেল পোশাক। নিমেষে জীবনটা শেষ হয়ে গেল।’’ এই প্রথম শ্বশুর- শাশুড়ির হাত ধরে ভোট দিতে এসেছেন জরিনা। আগে যতবার ভোট দিয়েছেন সঙ্গে স্বামী ছিলেন।

এ বার শান্তিপূর্ণ ভাবেই ভোট দিলেন জরিনা-সহ গ্রামবাসী। তবে নিস্তব্ধ এলাকা। লোকের মুখে মুখে আরিফের কথা। আতঙ্কের রেশ কাটেনি গ্রামে। চুপচাপ মিটল ভোটপর্বও।

ভোটকেন্দ্র ছাড়ার সময় আরিফের মা ফতেমা বললেন, ‘‘শান্তিপূর্ণ ভোট হল। সেদিনও যদি এমনটাই হতো তা হলে আমার ছেলেকে মরতে হতো না। ভোটের জন্য যেন আমার মতো আর কোনও মায়ের কোলশূন্য না হয় সেদিকটাই এ বার দেখুক প্রশাসন।’’ বলতে বলতেই চোখের কোণ চিকচিক করে উঠল ফতেমার।

West Bengal Panchayat Elections 2018 Panchayat Elections 2018
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy