Advertisement
E-Paper

পোড়া বাড়িতে ফিরতে পারছেন না দীপঙ্কর

সিপিএম সমর্থক দেবু দাসের বাড়িতে দু’টি ঘরের একটিতে থাকতেন দীপঙ্কর, অন্যটিতে তাঁর বাবা-মা। একটি পুড়ে গিয়েছে। অন্যটি অক্ষত থাকলেও তাতে থাকতে পারছেন না দীপঙ্কর। না থাকতে পারার নানা কারণ রয়েছে।

শান্তশ্রী মজুমদার

শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৮ ০২:৪২
আতঙ্ক: কাকদ্বীপে দীপঙ্কর। নিজস্ব চিত্র

আতঙ্ক: কাকদ্বীপে দীপঙ্কর। নিজস্ব চিত্র

আগুনে পুড়ে চলে গিয়েছে দু’টি প্রাণ। বাড়ির শেষ জীবিত সদস্য কুড়ি বছরের যুবক দীপঙ্কর দাস। তাঁর বাবা দেবু দাস এবং মা উষার জীবন্ত দগ্ধ হওয়ার পর থেকে গত ৪৮ ঘণ্টায় তিনি গভীর ভাবে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।

সিপিএম সমর্থক দেবু দাসের বাড়িতে দু’টি ঘরের একটিতে থাকতেন দীপঙ্কর, অন্যটিতে তাঁর বাবা-মা। একটি পুড়ে গিয়েছে। অন্যটি অক্ষত থাকলেও তাতে থাকতে পারছেন না দীপঙ্কর। না থাকতে পারার নানা কারণ রয়েছে। পুলিশ বাড়িটি সিল করে দিয়েছে। এলাকাবাসীর একাংশ মনে করছে, রাজনৈতিক চাপের বিষয়টাও রয়েছে। কিন্তু সব কিছু ছাপিয়ে উঠছে দীপঙ্করের বিভীষিকাগ্রস্ততার কথাই।

দীপঙ্করের আত্মীয় বলতে তাঁর মামা মনোরঞ্জন সাউ। বুধাখালিতে তাঁর জেঠার বাড়ি। শেষ দু’দিন বাড়িছাড়া হয়ে আত্মীয়দের বাড়িতেই থাকতে হয়েছিল দীপঙ্করকে। তাঁর কথায়, ‘‘বাবা-মায়ের এ ভাবে চলে যাওয়ার পর কী ভাবে ওই বাড়িতে ঢুকব, বুঝতে পারছি না। ওখানে আদৌ থাকতে পারব কি না, তা-ও জানি না।’’ এ দিন মায়ের দেহ নিতে কলকাতার মেডিক্যাল কলেজে গিয়েছিলেন তিনি। দেহে পচন ধরতে শুরু করেছে। তাই দেহগুলিকে আর বুধাখালিতে না আনারই সিদ্ধান্ত নিয়েছে পরিবার।

কাকদ্বীপ কলেজে বিএ তৃতীয় বর্ষের ছাত্র দীপঙ্কর রবিবারের রাতের কথা ভুলতে পারছেন না। বাবা-মা জীবন্ত দগ্ধ হওয়ার প্রায় শেষ মুহূর্তে বাড়ি পৌঁছন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘বাবা তখন আর নেই। মায়ের ছটফটানি দেখে একটু জল দিতে চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু কিছুই হল না।’’ মানসিক ভাবে সম্পূর্ণ ভেঙে পড়া দীপঙ্করের কাছে এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে, ওই বাড়িতে তিনি আর থাকতে পারবেন কি না। কারণ সিপিএম সমর্থক দেবুর মৃত্যুর পর বাড়ি সিল করে রেখেছে পুলিশ।

তদন্ত শেষ হওয়ার পরে দীপঙ্কর ওই বাড়িতে ঢুকতে পারবেন? এফআইআর’এ বুধাখালির ২১৩ নম্বর আসনের তৃণমূল প্রার্থী অমিত মণ্ডল-সহ ওই গ্রামের ১০ জন তৃণমূল কর্মী সমর্থকের নাম দিয়েছেন দীপঙ্কর। তা আসলে দলের নেতাদেরই দায়ের করা এফআইআর। সিপিএমের স্থানীয় নেতা সুশীল দাস বলেন, ‘‘দীপঙ্করের ওই বাড়িতে একা থাকার প্রশ্নই নেই। দলের কর্মীদের দেখে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে ভোটের ফলাফলের পরে।’’

ঘটনায় মূল অভিযুক্ত তৃণমূল প্রার্থী অমিত মণ্ডলের দাবি, ‘‘অন্যায় ভাবে আমাদের জড়ানো হচ্ছে। কোনও হুমকি কাউকেই দেওয়া হয়নি।’’ প্রায় একই কথা বলেছেন এলাকার তৃণমূল অঞ্চল সভাপতি বাবলু প্রধান। তিনি পাল্টা বিঁধেছেন সিপিএম নেতাদের। তাঁর দাবি, ‘‘হুমকির সংস্কৃতি সিপিএমের। সিপিএম ষড়যন্ত্র করেই এই ঘটনা ঘটিয়েছে। প্রকৃত দোষীদের সাজা দিতে প্রয়োজনে সিআইডি তদন্তেও রাজি আছি।’’

পড়াশোনা আর কাজ নিয়ে থাকা দীপঙ্কর চূড়ান্ত মানসিক অবসাদের মধ্যে। রাজনৈতিক টানাপড়েনই কি শেষ পর্যন্ত তাঁকে ঘরছাড়া করল?

West Bengal Panchayat Elections 2018 Panchayat Elections 2018
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy