Advertisement
০৫ মে ২০২৪
Money laundering accusation

কন্যাশ্রীর টাকার কাটমানি নেওয়ার অভিযোগ

গোটা ঘটনা কানে যায় রামকৃষ্ণের। স্কুলের করণিক ভবেশ মণ্ডল ও রামকৃষ্ণ ফোন করে ওই যুবককে বিষয়টি ‘মিটমাট’ করে নিতে বলেন বলে দাবি যুবকের।

প্রাক্তনী ও অভিভাবকদের একাংশ লিখিত অভিযোগ জমা দিলেন স্কুলে। নিজস্ব চিত্র

প্রাক্তনী ও অভিভাবকদের একাংশ লিখিত অভিযোগ জমা দিলেন স্কুলে। নিজস্ব চিত্র

নবেন্দু ঘোষ 
হেমনগর শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০২৩ ০৮:২৩
Share: Save:

কন্যাশ্রী প্রকল্পের টাকা ও ট্যাবের টাকার কাটমানি নেওয়ার অভিযোগ উঠল স্কুলেরই দুই কর্মীর বিরুদ্ধে। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে সমাজমাধ্যমে (তার সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার)। অভিভাবক ও প্রাক্তন পড়ুয়াদের একাংশ স্কুলে এসে ক্ষোভ দেখান। স্কুল পরিচালন কমিটির সভাপতির কাছে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে কম্পিউটার প্রশিক্ষক ও করণিকের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের হেমনগর থানার যোগেশগঞ্জ হাইস্কুলের।

ঘটনার সূত্রপাত কয়েক দিন আগে। স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্রী ও এক সম্পর্কিত বোনের বিষয়ে কথা বলতে স্কুলে যান তার দাদা। কম্পিউটার প্রশিক্ষক রামকৃষ্ণ গায়েনের সঙ্গে কথা হয়। ওই ছাত্রীদের দাদার অভিযোগ, দুই বোন সরকারি ট্যাবের টাকা ও কন্যাশ্রীর ২৫ হাজার করে টাকা কী ভাবে পাবে জানতে চাইলে রামকৃষ্ণ জানান, দু’টি প্রকল্পের আবেদন করার তারিখ পেরিয়ে গিয়েছে। কিছু করা যায় কি না জানতে চাইলে রামকৃষ্ণ জানান, তাঁকে ৩ হাজার করে ৬ হাজার টাকা দিলে কন্যাশ্রীর টাকা পাওয়ার ব্যবস্থা হয়ে যাবে। ট্যাবের টাকা দু’জনকে আরও ১০০০ টাকা দিতে হবে।

যুবকের দাবি, তিনি হাজার টাকা দেন। স্বাধীনতা দিবসের দিন স্কুলে গিয়ে আরও ৬ হাজার টাকা রামকৃষ্ণকে দেন। দু’জনের কথোপকথন মোবাইলে রেকর্ড করেন। সেই অডিয়ো শুনিয়ে স্কুলের এক শিক্ষকের কাছে মৌখিক ভাবে অভিযোগ করেন।

গোটা ঘটনা কানে যায় রামকৃষ্ণের। স্কুলের করণিক ভবেশ মণ্ডল ও রামকৃষ্ণ ফোন করে ওই যুবককে বিষয়টি ‘মিটমাট’ করে নিতে বলেন বলে দাবি যুবকের। টাকা ফে
রত দিতে চান। যদিও যুবক রাজি হননি।

১৬ অগস্ট ভোরে ভবেশ ওই যুবকের বাড়ি গিয়ে সব টাকা ফেরত দিতে চেয়ে জোরাজুরি শুরু করেন বলে দাবি যুবকের। সেই মুহূর্তেরও ভিডিয়ো করেন যুবক। প্রশ্ন তোলেন, কেন ভবেশ এসেছেন টাকা ফেরত দিতে। যিনি টাকা নিয়েছিলেন, তিনি কেন আসেননি, সে প্রশ্ন তোলেন। উত্তর দিতে পারেননি ভবেশ। চলে যান তিনি।

ভিডিয়ো কিছুক্ষণের মধ্যেই এক ব্যক্তি সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। এলাকায় শোরগোল পড়ে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক নিখিলচন্দ্র মণ্ডল শুক্রবার দুই ছাত্রীর বাবাকে ডেকে পাঠান স্কুলে। তাঁদের এক জন বলেন, “প্রধান শিক্ষক সব শুনেও নির্বিকার ছিলেন। কোনও পদক্ষেপ করার আশ্বাস দেননি। আমরা মনে করি, এই চক্রে প্রধান শিক্ষক-সহ অন্যদেরও যোগ আছে।”

শনিবার কয়েক জন অভিভাবক ও প্রাক্তন ছাত্র স্কুলে এসে ক্ষোভ জানান। স্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি দিলীপ দেওয়ানের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন প্রাক্তন ছাত্রদের একাংশ। দুই ছাত্রীর বাবা বা তাদের দাদা উপস্থিত ছিলেন না। প্রাক্তনীদের মধ্যে যাঁরা লিখিত অভিযোগ করেন, তাঁদের মধ্যে ছিলেন গোবিন্দ অধিকারী। তিনি বলেন, “এই স্কুলে অনেক দিন ধরে এমন চক্র চলছে। কন্যাশ্রীকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন রকম বেনিয়ম চলছে। স্কুলের সকলে তা জানেন। প্রধান শিক্ষক ও পরিচালন কমিটির মদতে এটা হচ্ছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আগেও নানা অভিযোগ উঠেছিল।” গোবিন্দ আরও বলেন, ‘‘স্কুলের বিল্ডিং করার জন্য টাকা এলেও কাজ হচ্ছে না। মিড ডে মিল খাওয়ার ঘর ও বিভিন্ন ক্লাস ঘর বেহাল। পঠনপাঠন শিকেয় উঠেছে। শিক্ষক নেই, মিড ডে মিলে চুরি হচ্ছে।’’

অভিযোগ অস্বীকার করছেন না রামকৃষ্ণ। তবে তাঁর দাবি, “আমাকে টাকা নিতে বলেছিলেন ভবেশ। আমি টাকা নিয়ে ভবেশকেই দিয়েছিলাম। পরে ভাবি, কাজটা ভুল হয়েছে। টাকা ফেরত দিতে হবে। তাই ওঁদের বাড়ি গিয়েছিলেন ভবেশ।’’

তাঁর দাবি, ‘‘আমি টাকার ভাগ নিইনি। আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে।” রামকৃষ্ণের অভিযোগ, এর আগে একাধিক বিবাহিত মেয়েকে শাঁখা খুলে, সিঁদুর না পরিয়ে আনা হয়েছে স্কুলে। স্থানীয় এক বিমা এজেন্ট এ ভাবে মেয়েদের দিয়ে কন্যাশ্রীর ২৫ হাজার টাকার আবেদন করান। ভবেশকে সঙ্গে নিয়েই তিনি
এ কাজ করতেন বলে অভিযোগ রামকৃষ্ণের। সবাই সব জানে বলেও তাঁর দাবি।

ভবেশকে এ বিষয়ে কিছু বলতে চাননি। প্রধান শিক্ষক, পরিচালন সমিতির সভাপতিরও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। মুখ খুলতে চাননি স্কুলশিক্ষা দফতরের জেলা ও ব্লক আধিকারিকেরাও। হিঙ্গলগঞ্জের বিডিও শাশ্বতপ্রকাশ লাহিড়ী বলেন, “এমন অভিযোগ খুবই দুর্ভাগ্যজনক। আগে কেউ জানাননি। দ্রুত তদন্ত করে রিপোর্ট উপর মহলে পাঠাব।” উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত জেলাশাসক তেহেরুল জামান বলেন, “বিষয়টি খুব গুরুতর। আমরা যথাযথ পদক্ষেপ করব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Hemnagar kanyasree
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE