ছাত্রীকে গণধর্ষণ করে খুনের নালিশ, বিক্ষোভ

মাস চারেক আগে এলাকার দশম শ্রেণির এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ ঘিরে উত্তাল হয়েছিল কাকদ্বীপ। মঙ্গলবার এই মহকুমারই সাগরে এক ছাত্রীর ঝুলন্ত দেহ মিলল রাস্তার ধারের ইউক্যালিপটাস গাছ থেকে। তাকে গণধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে, এই অভিযোগ ঘিরে প্রায় সাত ঘণ্টা ধরে বিক্ষোভ দেখালেন গ্রামবাসীরা। বিক্ষোভ চলাকালীন দেহ আটকে রাখা হয়।

ঘটনাচক্রে, এই ছাত্রীটিও ছিল দশম শ্রেণির। অভিযুক্তেরা হল মেয়েটির কলেজ-পড়ুয়া প্রেমিক এবং প্রেমিকের চার মামা এবং তাদের ছেলেরা। এ দিন প্রেমিকের মামা কানাই সর্দার ও প্রবীর সর্দারের বাড়িতে ভাঙচুর চালায় গ্রামবাসীরা। দেহ উদ্ধারের কথা বলতে গিয়ে গ্রামবাসীদের ক্ষোভের মুখে পড়েন সাগরের তৃণমূল প্রার্থী বঙ্কিম হাজরা। ছাত্রীর মা মেয়ের প্রেমিক-সহ ১০ জনের নামে ওই অভিযোগ দায়ের করলেও পুলিশ রাত পর্যন্ত কাউকে ধরতে পারেনি। এক জনকে আটক করা হয়েছে।

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, মেয়েটিকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে। তবে, ময়না-তদন্তের রিপোর্টেই এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে পুলিশ জানিয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার চন্দ্রশেখর বর্ধন বলেন, ‘‘ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক। অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। শীঘ্রই তাদের ধরা হবে।’’

পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সাগরের মুড়িগঙ্গা-১ পঞ্চায়েতের শীলপাড়ায় মামারবাড়িতে ভাই ও বোনকে নিয়ে থাকত ছাত্রীটি। তিন ভাইবোন পিতৃহারা। তাদের মা বালিগঞ্জের একটি ব্যাগ কারখানায় কাজ করেন। মাস কয়েক আগে ছাত্রীটির সঙ্গে বামুনখালির কলেজ ছাত্র শুভদীপ সর্দারের সম্পর্ক গড়ে ওঠে বলে পুলিশ জানিয়েছে। শীলপাড়ায় শুভদীপের মামার বাড়ি। সোমবার সকালে ছাত্রীটি সাইকেল নিয়ে স্কুলে যাওয়ার জন্য বের হয়। কিন্তু সন্ধ্যা পেরিয়ে যাওয়ার পরেও না ফেরায় মামারবাড়ির লোকজন খোঁজ শুরু করেন। সেই সময়ে শুভদীপের এক মামাতো ভাই মেয়েটির সাইকেল তার মামারবাড়িতে পৌঁছে দেয়। এতে মামারবাড়ির লোকজনের সন্দেহ হয়। তাঁরা শুভদীপের বাড়িতে যান। কিন্তু মেয়েকে পাননি।

নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কিশোরীর মৃতদেহ। ছবি: শান্তশ্রী মজুমদার।

মঙ্গলবার সকালে শীলপাড়াতেই মুড়িগঙ্গার বাঁধ লাগোয়া একটি ইউক্যালিপটাস গাছের ডাল থেকে স্কুলের ওড়নার ফাঁস লাগানো অবস্থায় ছাত্রীটির ঝুলন্ত দেহ মেলে। সকাল সাড়ে ৮টা থেকে শুরু হয় বিক্ষোভ। এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মেয়েটির ঝুলে থাকা দেহের সামনেই পড়ে রয়েছে স্কুলের ব্যাগ, জলের বোতল, চটি। মেয়েটির পরনে শাড়ি-ব্লাউজ। পা দিয়ে চুঁইয়ে পড়ছিল রক্ত। পুলিশ দেহের পাশে পড়ে থাকা ব্যাগ থেকে মেয়েটির স্কুলের ইউনিফর্ম উদ্ধার করে। পুলিশের অনুমান, মেয়েটি সোমবার স্কুলের নাম করে বের হলেও সেখানে যায়নি।

মৃত ছাত্রীর মামারবাড়ির লোকজনের দাবি, সোমবার রাতে তাঁরা শুভদীপের কাছে খোঁজ নিতে গেলে সে চোটপাট করে জানায়, মেয়েটিকে নিয়ে তারা কয়েক জন মোটরবাইকে করে গঙ্গাসাগরের দিকে ঘুরতে গিয়েছিল। সন্ধ্যাবেলায় সে মেয়েটিকে তার মামারবাড়ির কাছেই ছেড়ে দেয়। মেয়েটির মা, দিদিমা এবং মামারা মনে করছেন, যাঁদের মোটরবাইকে করে মেয়েটি বেড়াতে গিয়েছিল, তারাই গণধর্ষণ করে তাকে খুন করে। তার পরে আত্মহত্যা বলে চালানোর জন্য দেহটি গাছে ঝুলিয়ে দেয়। গ্রামের কেউ কেউ অবশ্য জানান, মেয়েটি শুভদীপকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছিল।

এ দিন বেলা ৩টে পর্যন্ত বিক্ষোভ চলায় দেহ উদ্ধার করতে নাজেহাল হয় পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা। ঘটনাস্থলে আসেন জোটপ্রার্থী অসীম মণ্ডলও। তিনি দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক সাজার দাবি জানান। অভিযুক্তদের বাড়ির কাউকেই পাওয়া যায়নি। সকলেই বাড়ি ছেড়ে পালায় বলে পুলিশ জানায়।