বাড়ি থেকে প্রায় ২৬ কিলোমিটার দূরে ব্যাঙ্কে টাকা তুলতে গিয়েছিলেন গোসাবার লাহিড়িপুরের বাসিন্দা চিন্ময় সর্দার। কিন্তু লাইন পেরিয়ে আর টাকা তুলতে পারেননি তিনি। সে কারণে তৃতীয় দিনে রাত থেকেই ব্যাঙ্কের সামনে মশারি, চাদর নিয়ে থাকতে হয়েছে তাঁকে।
বাসন্তীর ভরতগড়ের বাসিন্দা ফারুক আহমেদ সর্দার। বাড়ি ব্যাঙ্ক থেকে প্রায় ২০ কিলেমিটার দূরে। কিছুদিন ধরে লাইনে দাঁড়ানোর পর টাকা পেয়েছেন। চাষের জন্য খুচরো টাকার প্রয়োজন ছিল তাঁর। কিন্তু রোজ এত দূরে ব্যাঙ্কে যেতে গিয়ে অনেক টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে তাঁর।
একই অবস্থা চুনাখালির বাসিন্দা মোছোভেড়ির মালিক বিমল সরকারের। খুচরো ঠাকার অভাবে ব্যবসা প্রায় লাটে উঠতে বসেছে।
সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রামে তথা প্রত্যেকটি পঞ্চায়েত এলাকায় আজও গড়ে ওঠেনি ব্যাঙ্ক। নেই কোনও ডাকঘরও। ফলে নোট বাতিলের ঘোষণার পর থেকেই সমস্যায় পড়েছেন এই এলাকার মানুষ। প্রত্যেকদিনই দূরের কোনও ব্যাঙ্কে গিয়ে টাকা ভাঙাতে হচ্ছে এখানকার বাসিন্দাদের। কিন্তু লম্বা লাইনে দাঁড়ানোর পরেও অনেকেই টাকা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ। এলাকার বেশির ভাগ মানুষই চাষের কাজে যুক্ত। দিনমজুরের কাঝ করেন অনেকে। রোজ রোজ কাজকর্ম ছেড়ে যেমন অতদূরে গিয়ে টাকা তোলা সম্ভব হচ্ছে না। তেমনি যাওয়াআসাতে প্রচুর টাকাও খরচ হয়ে যাচ্ছে এই সমস্ত মানুষগুলির। চিন্ময়বাবু বলেন, ‘‘টাকা তুলতে গিয়ে তো খরচ হচ্ছে বেশি। এ ভাবে কী সম্ভব? এখন তো বার বার প্রয়োজন হচ্ছে। কারণ একসঙ্গে বেশি টাকাও তো তোলা যাচ্ছে না’’
মহকুমাশাসক প্রদীপ আচার্য এই সমস্যার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘‘সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকাতে ব্যাঙ্কিং পরিষেবা সে ভাবে নেই। ফলে এই সময় টাকা ভাঙাতে গিয়ে মানুষকে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। সুন্দরবনের গ্রামীণ এলাকাতে ব্যাঙ্ক খোলার জন্য আমরা জেলাতে জানিয়েছিলাম।’’
মহকুমা প্রসাশন সূত্রে জানা গিয়েছে, গোসাবা ব্লকের ১৪টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে লাহিড়িপুর, সাতজেলিয়া, রাধানগর-তারানগর, বালি ১ ও ২, কুমিরমারি এলাকায় কোনও ব্যাঙ্ক ও পোস্ট অফিস নেই। বাসন্তী ব্লকের ১৩টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ভরতগড়, চুনাখালি, উত্তর মোকামবেড়িয়া, নফরগঞ্জ, চড়াবিদ্যা পঞ্চায়েত এলাকাতেও কোনও ব্যাঙ্ক, পোস্ট অফিস নেই। ক্যানি ২ ব্লকের ৯ টি পঞ্চায়েত এলাকার মধ্যে তাম্বুলদহ ১ ও ২, সারেঙ্গাবাদ, নারায়ণপুর, দেউলি ১ পঞ্চায়েত এলাকারও একই অবস্থা। ফলে এখানকার মানুষকে টাকা ভাঙানোর জন্য ক্যানিং, গোসাবা, বাসন্তী গিয়ে ব্যাঙ্কে গিয়ে টাকা ভাঙাতে হচ্ছে।
২০১২ সালে ১৯ সেপ্টেম্বর জলপাইগুড়ির সাংসদ মনোহর তীর তদানীন্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমকে চিঠি দিয়ে অনুরোধ করেছিলেন বাসন্তী ব্লকের সরবেড়িয়ার মিলন বাজার, সোনাখালি বাজার, কাশিরাম মার্কেট, কালিবটতলা, শিবগঞ্জে রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাঙ্ক খোলার জন্য। মনোহরবাবু তৎকালীন সুন্দরবন উন্নয়ন পর্ষদের সদস্য লোকমান মোল্লার আবেদনের ভিত্তিতে এ সব করেছিলেন। পরে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী বাসন্তীতে রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাঙ্ক খোলার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন ইউবিআই-র জিএমকে। জিএম আবার দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ডিস্ট্রিক্ট ম্যানেজারকে ডিসিসি মিটিং করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেন। কিন্তু ওইটুকুই। লোকমান বলেন, ‘‘সে সময় যদি ব্যাঙ্কগুলি খোলা যেত তা হলে মানুষের এত সমস্যা হত না।’’
ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক তথা জেলা তৃণমূলের যুব সভাপতি সওকত মোল্লা বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন ধরে ক্যানিং পূর্বের বিভিন্ন এলাকায় কোনও রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাঙ্ক নেই। ফলে প্রতিনিয়ত সমস্যায় পড়ছেন মানুষ। একাধিকবার জেলা বৈঠকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। কিন্তু কারও কোনও হেলদোল নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy