ঠাঁই-মেঝেতে: নিজস্ব চিত্র
ক’দিন ধরে জ্বরে ভুগে হাবরা স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন সম্রাট বড়াল নামে এক যুবক। বাইরে থেকে রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গি ধরা পড়ে। তিনি এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মা জ্যোৎস্না বড়াল বললেন, ‘‘আমরা গরিব মানুষ। বাইরে থেকে ডেঙ্গির রক্ত পরীক্ষা করাতে কয়েকশো টাকা খরচ হল। অথচ হাসপাতালে ডেঙ্গির পরীক্ষার কোনও ব্যবস্থা নেই।’’
সম্রাটের মতো অনেকেই যাঁরা ওই হাসপাতালে ডেঙ্গির উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হচ্ছেন, তাঁদের বাইরের ল্যাব থেকে রক্ত পরীক্ষা করাতে হচ্ছে।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, গত বছরও ওই হাসপাতালে ডেঙ্গির রক্তের পরীক্ষার ব্যবস্থা ছিল। হাসপাতাল থেকে রোগীদের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে তা বারাসত জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হত। দিন তিনেকের মধ্যে মিলতো রিপোর্ট। কিন্তু এ বার তা হচ্ছে না কেন? হাসপাতাল সুপার শঙ্করলাল ঘোষ বলেন, ‘‘কর্মীর অভাবে এ বার পরীক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। ৪৪ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারি থাকার কথা। আছেন ২৩ জন।’’ যদিও তিনি জানান, স্থানীয় একটি ল্যাব কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা মাত্র ৪০০ টাকায় ডেঙ্গির রক্তের পরীক্ষা করে দিচ্ছে।
সম্প্রতি হাবরা জুড়ে ছড়িয়ে জ্বরের প্রকোপ ছড়িয়েছে। ডেঙ্গিতেও ভুগছেন অনেকে। হাসপাতালে গেলেও শয্যা মিলছে না। মেঝেতে ঠাঁই হচ্ছে অনেকের। আবার তিন-চার জনকে গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে একটি বেডে। ওয়ার্ডগুলি পরিচ্ছন্ন নয় বলেও অভিযোগ। এ ক্ষেত্রে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের যুক্তি, ১৩ জন সাফাই কর্মী থাকার কথা। আছেন মাত্র ৭ জন।
বেডের অভাবের কথা মানছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও। সুপার জানান, পুরুষ ও মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে শয্যা সংখ্যা ৮২। কিন্তু এখন গড়ে রোজ ওই দু’টি ওয়ার্ডে রোগী ভর্তি থাকছেন দু’শোর বেশি। স্বাভাবিক ভাবেই এক শয্যায় অনেককে রাখতে হচ্ছে। জ্বরের সংক্রমণ বাড়ায় এই পরিস্থিতি বলে জানাচ্ছেন সুপার। শুক্রবার পর্যন্ত হাসপাতালে জ্বরে আক্রান্ত যাঁরা ভর্তি, তাঁদের ২৬ জনের ডেঙ্গির লক্ষণ রয়েছে। ডেঙ্গি আক্রান্তদের ওয়ার্ডের মধ্যে মশারি টাঙিয়ে রেখে চিকিৎসা চলছে।
হাবরা শহরে ইতিমধ্যে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন ৫ জন। পুরসভা সূত্রের খবর, ডেঙ্গির লক্ষণ ধরা পড়েছে ২৫ জনের শরীরে। গ্রামীণ গোয়ালবাটি চারাবটতলা এলাকায় এক ব্যক্তি ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। অভিযোগ, গ্রামীণ এলাকায় সে ভাবে মশা মারার পদক্ষেপ করা হচ্ছে না। নিকাশি বেহাল। বাড়ির উঠোনে জল জমে থাকছে। তারমধ্যে ভেসে বেড়াচ্ছে মশার লার্ভা।
পুর এলাকার ২৪টি ওয়ার্ডে অবশ্য নিয়ম করে মশা মারার তেল স্প্রে করা হচ্ছে। মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাসিন্দাদের ডেঙ্গি সম্পর্কে বোঝাচ্ছেন। মশার লার্ভা সংগ্রহ করছেন বলে জানিয়েছেন পুরপ্রধান নীলিমেশ দাস। স্থানীয় বিধায়ক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানিয়েছেন, বিধায়ক এলাকা উন্নয়ন তহবিলের টাকায় পুরসভার আরও আধুনিক কিছু মশা মারার মেশিন কেনা হচ্ছে। পঞ্চায়েতগুলিকে বলা হয়েছে, নিজস্ব তহবিল থেকে মেশিন কিনতে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রাঘবেশ মজুমদারের দাব, হাবরায় ডেঙ্গি মোকাবিলায় সব ধরনের পদক্ষেপ করা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy